ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় রাজি দক্ষিণ কোরিয়া

সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ২০:০৪, ২৮ নভেম্বর ২০২০

সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত

চিরবৈরী উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই’র উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন বৈরী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই আলোচনায় উত্তর কোরিয়ার বিতর্কিত পরমাণু প্রকল্পের বিষয়টি স্থান পাবে। বর্তমানে সিউল সফরে রয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কোরীয় উপদ্বীপের নানাদিক নিয়ে উভয় নেতা আলাপ করেন। খবর আলজাজিরা ও এপি। বৈঠকের পর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই বলেন, দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় চীন গঠন ও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নেবে। আমাদের সরকার কোরীয় উপদ্বীপের যুদ্ধ ও সহিংসতা থামাতে সবসময়ই আগ্রহী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে চলমান মতপার্থক্য দূর করা সম্ভব। বুধবার জাপান সফর শেষে দক্ষিণ কোরিয়া যান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাপান সফরে করোনা ইস্যু ও কোরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দিক নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন ওয়াং- ই। উল্লেখ্য, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। বুধবার টোকিওতে জাপানী প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সঙ্গে চীনা মন্ত্রীর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাপানের নতুন সরকারপ্রধানের সঙ্গে চীন প্রশাসনের এটাই প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে জাপানী প্রধানমন্ত্রী সুগা চীন-জাপানের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্ক শুধু জাপান ও চীনের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগির সঙ্গে সাক্ষাত করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হন দুই নেতা। তবে দুই দেশের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত সামুদ্রিক বিরোধ নিরসন নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। জাপানী টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনএইচকে’র তথ্যমতে, এদিনের বৈঠকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনকে জিনজিয়াং অঞ্চলে তাদের নীতির বিষয়ে আরও স্বচ্ছ হওয়ার আহ্বান জানান। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াংয়ে অন্তত ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামে বন্দী শিবিরে আটকে তাদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জাপানে দুই দিনের সফর শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের উদ্দেশ্যে রওনা হন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে উইঘুর মুসলমানদের ওপর অকথ্য নির্যাতন নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে চীন। তার ওই বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে বেজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝা লিজিয়ান দাবি করেন, তার দেশ সবসময়ই সমানভাবে জাতিগত সংখ্যালঘুদের আইনী অধিকারের সুরক্ষা দেয়। সম্প্রতি নিজের জীবনীকার অস্টেন আইভেরির সঙ্গে মিলে ‘লেট আস ড্রিম: দ্য পাথ টু এ বেটার ফিউচার’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন পোপ ফ্রান্সিস। ১৫০ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে উইঘুরদের তিনি ‘নিপীড়িত’ জনগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি লিখেছেন, আমি মনে করি রোহিঙ্গা, দরিদ্র উইঘুর ও ইয়াজিদিরা নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। উইঘুর ইস্যুতে এটিই পোপ ফ্রান্সিসের প্রথম কোন মন্তব্য। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, চীনা বন্দী শিবিরগুলোতে ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে।
×