ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া বিমান বন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন অবতরণ করবে!

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০২০

বগুড়া বিমান বন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন অবতরণ করবে!

সমুদ্র হক ॥ কথা ছিল গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষেই বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া আকাশ পথ চালু হবে। বগুড়া বিমানবন্দরে উড়োজাহজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করবে। যাত্রী সাধারণ আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ করবে। দিনের মধ্যে ঢাকায় কাজ সেরে বগুড়া ফিরতে পারবে। এই লক্ষ্যে নির্মিত হয় বিমানবন্দর। পরে বিমান উড়েছে, তবে তা বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ। সাধারণ যাত্রীদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ ওড়েনি। বর্তমানে বগুড়া বিমানবন্দরে সিভিল এ্যাভিয়েশনের উড়োজাহাজ ওড়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। কাজও শুরু হয়েছে। তবে তার গতি এত ধীর যে কবে উড়বে উড়োজাহাজ তা অনিশ্চিত রয়ে যাচ্ছে। সকল দিক বিবেচনা করে উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী ও প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধনখ্যাত বগুড়ায় বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল গত শতকের শেষে। কথা ছিল আকাশ পথে যাত্রী পরিবহনে এই বিমানবন্দর হবে লাভজনক। বাংলাদেশ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের ব্যবস্থা প্রায় পাকাপাকি হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে তা আর হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর বগুড়া বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হাতে দেয়া হয়। বিমানবাহিনী রাডার স্টেশন নির্মাণ করে সেখানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। তারপর বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। সূত্র জানায়, বর্তমান সময়ে আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রেখে বগুড়া বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনের উড়োজাহাজ ওঠা নামায় গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সিভিল এ্যাভিয়েশনের বিমান চালু করায় সমর্থন দিয়েছে। তারপর বগুড়া বিমানবন্দরকে বর্তমান সময়ের আধুনিক উড়োজাহাজ ওঠানামায় উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদ্যমান রানওয়েকে আরও সম্প্রসারিত করে অন্য অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানোর কার্যক্রম নেয়া হয়। সেই লক্ষ্যেই কাজ এগিয়ে যায়। তবে তার গতি খুবই ধীর। এই অবস্থায় কবে বগুড়া বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান ও প্রাইভেট উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করবে তা অনিশ্চিত রয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়ার ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় বিমান বন্দরটি আকাশ পথে সাধারণের যোগাযোগের জন্য চালুর দাবি জোরালো হয়। বিমান বাহিনী বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করে আকাশপথে সাধারণের যোগাযোগের পক্ষে মত দেয়। তিন বছর আগে ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকগণের (ডিসি) সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন বিমানবন্দর স্থাপনের পরামর্শ চাওয়া হয়। ওই সম্মেলনেও বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ ওঠানামার পরামর্শ দেয়া হয়। অধিবেশনের শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনের তৎকালীন মন্ত্রী বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের পক্ষে মত দেন। একই সঙ্গে ডিসিগণ বগুড়া বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কথা বলেন। জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্র জানায়, বগুড়া বিমানবন্দরের বর্তমান ৫ হাজার ফুট রানওয়ের সঙ্গে আরও ৩ হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর সঙ্গে জ্বালানি রিজার্ভার, যাত্রীগণের সুবিধা, মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ অন্য সুবিধার জন্য অন্তত একশ’ একর ভূমি প্রয়োজন। বিদ্যমান রানওয়ের পশ্চিমে জমি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া আছে। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও চিঠি আসেনি। চিঠি পাওয়ার পরই অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ শুরু হবে। বগুড়া বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৮৭ সালে। ৯০’র দশকের মাঝামাঝি সদর উপজেলার এরুলিয়া মৌজায় আঞ্চলিক সড়কের ধারে ১শ’১০ একর ভূমির ওপর ৬শ’ফুট চওড়া ও ৫ হাজার ফুট রানওয়ে নির্মিত হয়। এর সঙ্গে টার্মিনাল অফিস, আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। ব্যয় হয় ২২ কোটি টাকা। একনেক অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ২ হাজার সালেই বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের কথা। তা আর হয় নি। বগুড়ার প্রবীণ ব্যক্তিগণ বলেন, আকাশপথে বগুড়ার যোগাযোগ যে লাভজনক তা ষাটের দশকেই প্রমাণিত। ওই সময়ে বগুড়ার বনানীতে হ্যালিপ্যাড নির্মিত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) হেলিকপ্টার সার্ভিস ছিল। ষাট বছর পর বগুড়া আরও উন্নত হওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামার সার্বিক উন্নত অবস্থা বিরাজ করছে। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য রয়েছে আধুনিক স্টেডিয়াম। ফাইভস্টার ও ফোরস্টার হোটেল। দেশের প্রাচীন নগরী মহাস্থানগড়ে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। মহাস্থানগড় ছাড়াও প্রত্নযুগের নানা নিদর্শন আছে বগুড়ার আশপাশে। বগুড়া দিনে দিনে পর্যটকভূমিতে পরিণত। আন্তর্জাতিক অনেক অনুষ্ঠানের ভেন্যু করা হয় বগুড়া। দেশী বিদেশী অনেকের আগমন ঘটে। একদার শিল্পনগরী বগুড়া পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। শীঘ্রই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগে অনেকটা সময় লাগে। এক জরিপে দেখা গেছে, বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া বিমান বন্দর চালু হলে বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া রুটে দিনে কয়েকটি ফ্লাইট চলবে। উড়োজাহাজ চলাচল লাভজনক অবস্থায় যাবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
×