ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানিতে রড-সিমেন্ট

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২৭ নভেম্বর ২০২০

রফতানিতে রড-সিমেন্ট

বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রায় বৃহৎ পরিবেশবান্ধব কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণসহ মহাপরিকল্পনা, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলসহ অন্তত ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশে। ভয়াবহ মহামারী করোনাজনিত লকডাউন-শাটডাউনেও এসব দক্ষ কর্মযজ্ঞের নির্মাণকাজ যথারীতি চলেছে স্বাস্থ্যবিধিসহ নিয়মকানুন মেনে। গত কয়েক বছরে দেশে আবাসন খাতের বিকাশ ঘটেছে ঈর্ষণীয় গতিতে। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিনিয়ত নির্মিত হচ্ছে বৃহৎ শপিং মল, সুপার মার্কেট, ফ্লাইওভার, ব্রিজ, কালভার্ট, ট্যানেল ইত্যাদি। এর জন্য প্রচুর পরিমাণে ইট, রড, সিমেন্ট, বালু, পাথর, রং সিরামিক ইত্যাদি প্রয়োজন। বলাবাহুল্য, এসব কাঁচামাল উৎপাদনের উপযোগী যথেষ্ট শিল্প কারখানা ছিল না দেশে। থাকলেও সীমিত পরিসরে। সময় ও চাহিদার অনিবার্য প্রয়োজনে গত কয়েক বছরে দেশে অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। যেগুলোতে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের সিমেন্ট, ইস্পাতের রড, শিট, বিলেট, রং, সিরামিক পণ্য, সাদা সিমেন্ট, স্টোন চিপস ইত্যাদি। বর্তমানে নির্মাণসামগ্রী খাতের অন্তত ২৬৯টি সামগ্রী প্রস্তুত হচ্ছে দেশেই। উন্নতমানের সিরামিক সামগ্রী ও টাইলস বিদেশ থেকে কিছু পরিমাণে আমদানি হলেও এই শিল্পটিও বিকাশমান। পঞ্চগড়ের কঠিন শিলা প্রকল্প থেকে পাথর, সিলেটের জাফলং-জৈন্তাপুরের বোল্ডার এবং দুর্গাপুরের সাদা মাটি পরিকল্পিত উপায়ে আহরণ ও বিপণন সম্ভব হলে এই শিল্পের আরও উন্নয়ন ও বিকাশ সম্ভব। আরও আশার কথা এই যে, বর্তমানে বাংলাদেশের রড, সিমেন্ট, বিলেট ইত্যাদি রফতানিও হচ্ছে বিদেশে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাত রাজ্যে এবং নেপাল ও ভুটানে এর রফতানি সম্ভাবনা ও বাজার বৃদ্ধি খুবই সম্ভব। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্বের অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত জাহাজের বৃহৎ ক্রেতা, যা থেকে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের কয়েকটি দেশে জাহাজ রফতানিও করেছে। এক্ষেত্রেও রয়েছে সমুজ্জ্বল সম্ভাবনা। করোনা মহামারীর কারণে নিরাপদ সুরক্ষা হিসেবে দেশ একটানা ৬৬ দিন লকডাউনে থাকায় সর্বাধিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে রফতানি খাত। প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার দশা হয় পোশাক শিল্পের। তবে সরকারের বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজসহ স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তায় শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে পোশাক শিল্প। ইতোমধ্যে অন্তত আশি শতাংশ ক্রয়াদেশ ফিরে এসেছে দেশে। তুরস্ক, রাশিয়াসহ নতুন কয়েকটি দেশ থেকেও আসছে নতুন কার্যাদেশ। তবু বাস্তবতা এই যে, পোশাক রফতানি আগের অবস্থায় যেতে সময় লাগবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইএসএ সনদ না থাকায় দেশের দ্বিতীয় রফতানি পণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিও সমূহ হুমকির সম্মুখীন। এর জন্য অবশ্য চামড়া ব্যবসায়ী এবং পাদুকা শিল্প রফতানিকারকরাও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সরকারের দীর্ঘদিনের উদ্যোগ ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় চামড়া শিল্প নগরী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর হলেও ইটিপি তথা বর্জ্য দূষণমুক্তকরণ ব্যবস্থা শতভাগ ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চামড়া শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিও রীতিমতো হুমকির মুখে অথবা কমছে। ভাইরাসজনিত সমস্যায় মান বজায় রাখতে না পারায় চিংড়ি রফতানিও সঙ্কটে নিপতিত। সে অবস্থায় অপ্রচলিত পণ্য চিহ্নিতকরণসহ এর উৎপাদন এবং রফতানি বাড়াতে না পারলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে অপ্রচলিত অন্তত ৩৭টি পণ্যকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হতে চায় সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উদাহরণত বলা যায় ওষুধের কথা। দেশ ওষুধ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানও ভাল। রফতানিও হচ্ছে কয়েকটি দেশে, যা আরও বাড়ানো যায়। অনুরূপ হতে পারে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, স্যানিটাইজার, সামদ্রিক মাছ, শৈবাল, শুঁটকি ইত্যাদি। রড, সিমেন্ট, বিলেটসহ বিবিধ নির্মাণ সামগ্রীর বিদেশে রফতানি হতে পারে আশাব্যঞ্জক সংযোজন।
×