ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিংবদন্তী ম্যারাডোনার চিরবিদায়

প্রকাশিত: ০২:২৯, ২৬ নভেম্বর ২০২০

কিংবদন্তী ম্যারাডোনার চিরবিদায়

জিএম মোস্তফা ॥ ফুটবলের জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর নেই। বুধবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের এই কিংবদন্তি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে খবরটি। তিগ্রেতে নিজ বাসায় মারা যান ম্যারাডোনা। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। চলতি নবেম্বর মাসের শুরুতেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। নিজের ৬০তম জন্মদিন পালনের পরই প্রচ- অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই ফুটবল কিংবদন্তি। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। সেই অস্ত্রোপচার সফলও হয়েছিল। এরপর ম্যারাডোনার হয়ে কাজ করেন একজন স্টাফ গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, ‘তেমন গুরুতর কিছু নয়।’ পাশাপাশিই তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে, ম্যারাডোনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলার অনুমতি তাকে দেয়া হয়নি। কিন্তু সেই গুরুতর কিছু নয়ই যে, এমন খবর হয়ে ধরা দেবে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি গোটা দুনিয়ার ফুটবল প্রেমীরা! আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের হঠাৎ মৃত্যুতে নিস্তব্ধ গোটা বিশ্বের ক্রীড়ামোদিরা। গত ৩০ অক্টোবর ছিল ম্যারাডোনার ৬০তম জন্মদিন। সেদিনেই পাত্রোনাতোর বিপক্ষে ছিল তার দল জিমনাসিয়ার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ। সে ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতে যায় ডিয়েগোর দল জিমনাসিয়া। তবে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে চলে যান তিনি। আর তাতেই তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে করোনা আক্রান্ত হননি ম্যারাডোনা। সে কথা নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন তার ডাক্তার লিউক। যদিও জানা যায় তার কাছের কর্মরত এক ব্যক্তি কিছু দিন আগেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর কিছু দিন নিজেকে আইসোলেশনে রেখেছিলেন ডিয়েগো। ম্যারাডোনার ডাক্তার লিউক সে সময়ে বলছিলেন, ‘তার শরীরে কোন শক্তিই ছিল না। তার পরে আবার জন্মদিনের জন্য তার স্বাস্থ্যের আরও জটিলতা বাড়ে।’ ডাক্তার তখন তাড়াহুড়োর কিছু নেই বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারেই পাড়ি জমালেন ফুটবলের এই রাজপুত্র। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা ম্যারাডোনা খেলেছেন সব নামীদামী ক্লাবে। স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সিলোনা, নেপোলি এবং সেভিয়া ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। চার বার আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক ছিলেন তিনিই। সেবার গোল্ডেন বলও জিতেছিলেন এই জাদুকর। শুধু তাই নয়, সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটি করার পরই ফুটবল বিশ্ব ম্যারাডোনাকে ‘হ্যান্ড অব গড’ আখ্যা দিয়ে দেয়। তার পর সেই ম্যাচেই আবার যখন তিনি দ্বিতীয় গোলটি করলেন, তখন বলা হলো, ‘ গোল অব দ্য সেঞ্চুরি।’ তার কারণ হলো এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সেই বলটি ইংল্যান্ডের পাঁচজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ড্রিবল করে সোজা প্রতিপক্ষের জালে পাঠিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই শিরোপা জেতানো ছাড়াও ইতালিয়ান ক্লাব নেপোলির হয়ে স্মরণীয় মৌসুম উপহার দিয়েছেন ম্যারাডোনা। নেপোলিকে দুইবার সিরি’এ লীগ ও উয়েফা কাপ জিতিয়েছেন তিনি। শুধু ফুটবলার হিসেবেই নয়, ম্যারাডোনার নাম আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে কোচ হিসেবেও! নিজের ফুটবল জীবনে যেমন দাপিয়ে খেলেছেন তেমনই ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সালঅবধি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের কোচিংও করেছিলেন তিনি। তবে এহেন ফুটবল কিংবদন্তিকে ব্যক্তিগত জীবনে বহু যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। একটা সময়ে তিনি চরম পর্যায়ের মাদকাসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। এ্যালকোহলের নেশা ছাড়ানোর জন্য ২০০৭ সাল থেকে চিকিৎসাও করাচ্ছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। শেষমেশ সব যুদ্ধের অবসান হল ২৫ নবেম্বর, ২০২০ সালে এসে। বিশ্ব ফুটবলে সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এই প্রশ্নে পেলে ও ম্যারাডোনাকে নিয়ে বিভক্ত ফুটবল বিশ্ব। আর্জেন্টাইন ফুটবলের এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে গোটা দুনিয়াজুড়েই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আর্জেন্টিনা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন ও সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া আমাদের কিংবদন্তি ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। আপনি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’ ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার টুইটারে শোক বার্তায় লিখেছেন, ‘যোজন যোজন এগিয়ে, আমার প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড় এবং সম্ভবত সর্বকালের সেরা।’ তার মৃত্যুতে শোকাহত বর্তমান সময়ের সুপারস্টার পর্তুগিজ তারকা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। তিনি ম্যারাডোনার সঙ্গে তোলা একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে শোক প্রকাশ করেছেন। ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাব নেপোলি ফুটবলের এ রাজপুত্রের বিদায়ে টুইটারে শোক বার্তায় লিখেছে. ‘তুমি সবসময়ই আমাদের হৃদয়ে।’ আরেক সাবেক ক্লাব বার্সিলোনা লিখেছে, দিয়েগো, ‘সব কিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’ ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক ॥ ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং যুগে যুগে তার ক্রীড়া নৈপুণ্য ভবিষ্যত ফুটবল খেলোয়াদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’ প্রধানমন্ত্রী এই ফুটবল মহানায়কের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আর্জেন্টিনায় তিনদিনের শোক ॥ প্রিয় হারানোর বেদনায় কাতর আর্জেন্টিনা। ডিয়েগো ম্যারাডোনার প্রয়াণে দেশটির সরকার তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে। কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে বুধবার মারা যান ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যারাডোনা। প্রায় একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ এনে দেয়া এই তারকা দেশের মানুষের কাছে ছিলেন মহাতারকা। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফেরনান্দেসের শোকবার্তায় উঠে এসেছে মানুষের প্রতি ম্যারাডোনার ভালবাসা। ‘তিনি শুধু আমাদের আনন্দই দিয়েছেন।
×