ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার আশ্বাস গ্যাভির

প্রকাশিত: ০২:১৫, ২৬ নভেম্বর ২০২০

ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার আশ্বাস গ্যাভির

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস এ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি। প্রাণঘাতী ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের জীবনরক্ষায় টিকা প্রদানে ভূমিকা রেখে আসা এই আন্তর্জাতিক জোট বিশ্বের নিম্ন ও মধ্য আয়ের ৯২টি দেশকে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা সরবরাহ করবে তারা। খবর বিডিনিউজের। একজন মানুষ দুই ডোজ করে টিকা পাবেন। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য গ্যাভির কাছ থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচীর লাইন ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ শামসুল হক জানিয়েছেন। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যারা আগে জাতীয় ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা জমা দেবে তারাই আগে ভ্যাকসিন পাবে। গ্যাভি যখন থেকে পরিকল্পনা জমা নেয়া শুরু করবে, আশা করছি আমরা প্রথম দিনই আমাদের পরিকল্পনা জমা দিতে পারব।’ পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আমরা এসব টিকা পেতে পারি। এটা একটা সম্ভাবনা। আমরা ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছি সেখান থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা পাব। আর আমাদের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের টিকা গ্যাভি আমাদের সরবরাহ করবে। তারা বলেছে, এই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পেয়ে যাবেন। তবে নির্ধারিত দিন-তারিখ বলতে পারব না।’ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে চলতি মাসের শুরুতে সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই বাংলাদেশ সরকারকে ওই ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। এই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্যাভির কাছ থেকে প্রতি ডোজ টিকা আনতে এক দশমিক ৬২ থেকে দুই ডলারের মতো ব্যয় হবে। ভর্তুকি দিয়ে টিকা সরবরাহ করবে তারা। অপরদিকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে যেসব টিকা আসবে তার প্রতি ডোজের জন্য ৫ ডলার করে লাগবে বলে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি। এ দুই বিশ্ব সংস্থার আয়োজনে গত ৪ জুন গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট হয়, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। ওই সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল এ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়, যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে কোভ্যাক্স। গত ৩০ জুলাই গ্যাভির বোর্ড সভায় এই কোভ্যাক্সের এ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি) প্রকল্পের আওতায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও সেই তালিকায় রাখা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিলে এসব দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশের জন্য সেই টিকা সরবরাহের প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করেছে গ্যাভি। আর সেজন্য সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ, যদিও পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে কার্যকর ও নিরাপদ টিকার অনুমোদনপ্রাপ্তি, উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর। কোভ্যাক্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের বেশি সেসব দেশকে টিকা কিনে নিতে হবে। চার হাজার ডলারের নিচে আয়ের দেশকে শুরুতে বিনামূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকা দেবে গ্যাভি। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ গত ৯ জুলাই কোভ্যাক্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্যাভির কাছে আবেদন পাঠিয়েছে। সে আবেদন গ্যাভি গ্রহণ করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে বিভিন্ন রোগের যে টিকা নিচ্ছে তার ১০ শতাংশ মূল্য সরকারকে পরিশোধ করতে হয়, বাকি ৯০ শতাংশ দেয় গ্যাভি।
×