ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:১৩, ২৬ নভেম্বর ২০২০

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই তাঁর সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেছেন, এখন থেকেই উদ্যোগী না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আসছে। এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দক্ষ কর্মজ্ঞান সম্পন্ন লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। সেটার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ না নিলে আমরা পিছিয়ে যাব। সুতরাং আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। এজন্য প্রশিক্ষণটা সঙ্গে সঙ্গে দরকার। কারণ আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটুকু এগোবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমরা চলব।’ খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সন্ধ্যায় ফ্রিল্যান্সার আইডি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, সমাজের কম বেশি সকলে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি জানলেও ফ্রিল্যান্সার এতদিন তাদের পরিচয় নিয়ে সমস্যায় ছিলেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত পরিচিত কার্ড বা ফ্রিল্যান্সিং আইডির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। কর্মসংস্থান, উপার্জন বা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে এই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যাংকিং বা ভিসার আবেদন, বাসা বা অফিস ভাড়া এমনকি বাচ্চাদের স্কুল ভর্তি করার মতো বিষয়গুলোতে সহজ করে দেবে। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে (িি.িভৎববষধহপবৎ.পড়স.নফ) দেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার আইটি কর্মরত এখানে রেজিস্ট্রেশন করে পরিচয়পত্র গ্রহণের সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। অল্পতেই তারা শিখতে পারে। সরকার হিসেবেই আমাদের কাজ হচ্ছে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া। সেটাই আমরা করে দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ৩৯টি হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ শেষ হলে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যার মধ্যে যুব সমাজই সব থেকে বেশি কাজ পাবে। দেশ ও বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে এবং দক্ষ কর্মীবাহিনীর সৃষ্টি হবে। তাঁর সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনসহ দক্ষ কর্মীবাহিনী সৃষ্টিতে নানারকম প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং’-এর ওপর নির্মিত ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সংক্রান্ত পৃথক দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক একটি এ্যানিমেটেড ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয় অনুষ্ঠানে। প্রতিটি জেলায় সরকার ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে দক্ষ কর্মক্ষম লোক সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামীর বাংলাদেশ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন এবং অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক দূর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিই পারবে আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই সরকারের বিভিন্ন চলমান মেগাপ্রকল্প যেগুলো করোনাভাইরাসের কারণে সাময়িক বন্ধ ছিল আবারও চালু করা সম্ভব হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে আমাদের যে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে তাতে করে দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। আর ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন এক ধরনের উদ্যোগ যার মাধ্যমে ঘরে বসেও অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, শারিরীক প্রতিবন্ধীরাও ফ্রিল্যান্সিয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে যেমন অর্থ উপার্জন করতে পারবে তেমনি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখারও সরাসরি সুযোগ পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রতিবন্ধীদেরও ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগাতে চাই, যাতে তারা সমাজে অবহেলিত না হন।’ তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য কোন অফিস আদালতে যেতে না হলেও এর মাধ্যমে যেহেতু নিয়মিত অর্থ উপার্জন করা যায় সেহেতু এটাও একটা কাজ, এটাও একটা চাকরি। এটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস। নিজে শুধু বস নয়, আরও অনেকেরও কাজের সুযোগ করে দেয়া, যে কারণে এর স্বীকৃতি দরকার ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সচিব ওয়াজেদের পরামর্শে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারসহ তাঁর সরকারের বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার পদক্ষেপসমূহও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ’৭৫ পরবর্তী দুঃশাসন এবং সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে প্রতি রাতে দেশে কার্ফু বলবত রাখার কঠোর সমালোচনা করে একে ‘কারফিউ গণতন্ত্র’ বলেও আখ্যায়িত করেন এবং জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করার নিন্দা জানান। ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে অবশেষে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে ১৯৮১ সালে একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি একরকম জোর করেই বাংলাদেশে ফিরে আসি একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে- যে দেশের মানুষের জন্য আমার বাবা তাঁর সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, আমার মা করেছেন এবং যে দেশের মানুষ তখনও ক্ষুধার্ত। আমি এসেছিলাম সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের একটা সুন্দর জীবন উপহার দেব বলে।’ শেখ হাসিনা ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগ নেয়ায় সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সজিব ওয়াজেদ জয়কে শুরু থেকেই বলে এসেছি এটা করতে হবে, তুমি উদ্যোগ নাও। আমাদের এই ছেলেমেয়েদের একটা স্বীকৃতি দেয়া একান্তভাবে দরকার।’ তিনি বলেন, আজকে ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সকল ফ্রিল্যান্সাররা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে তারা সামাজিক পরিচিতির পাশপাশি ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে, আর চাকরি খুঁজতে হবে না, নিজেরা কাজের পাশাপাশি অন্যকেও কাজ দিতে পারবে। গৃহিণীরা ঘরে বসে এর মাধ্যমে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাওয়ায় নারীরা আরও ক্ষমতায়ন ঘটবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শিখে কেবল ঘরে বসে গিন্নিগিরি করা নয়, তারাও কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে। ঘরে বসে কাজ করতে পারায় ছেলেমেয়েরা যেমন মাকে কাছে পাবে, তেমনি কিছু অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সে নিজের পরিবারে ভূমিকা রাখতে পারবে। কাজেই ছেলেমেয়ে সকলের জন্যই এখানে একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।’ বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন সেটা রেমিটেন্স আকারে বাংলাদেশে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করায় রেমিটেন্সও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ধন্যবাদ জানান এবং আজকের পর থেকে আরও অনেক তরুণ-তরুণী এই ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে আসার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যত বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারব, তত বেশিই দেশের যুব সমাজ লাভবান হবে।’
×