ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী সিনেমা মুক্তিতে কি ভাবছেন তারা

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৬ নভেম্বর ২০২০

বিদেশী সিনেমা মুক্তিতে কি ভাবছেন তারা

ভারতের সিনেমা মুক্তির বিরুদ্ধে যারা কাফনের কাপড় পরে নেমেছিলেন রাজপথে, ভেঙ্গে ছিলেন প্রেক্ষাগৃহ সেই তাদেরই কেউ কেউ এখন আমদানির পক্ষে। বাংলা সিনেমার সঙ্কট কাটাতে টালিউড-বলিউডের সিনেমা বাংলাদেশের সিনেমা হলে চালাতে চান প্রযোজক-পরিচালক ও হলমালিকরা। ২০১৫ সালে উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধের দাবিতে উত্তাল ছিল চলচ্চিত্রাঙ্গনসহ রাজপথ। ভিন দেশী সিনেমার পোস্টারও পুড়িয়েছিলেন তারা। ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ মুক্তি পায় ভারতীয় সিনেমা। উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র বাংলাদেশে প্রদর্শন বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের ব্যানারে ঢাকাই সিনেমার নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা মানববন্ধন করেন। পাশাপাশি দেশীয় চলচ্চিত্রের সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়। তোপের মুখে পড়ে পরবর্তীতে সিনেমা মুক্তিবন্ধ হয়। পাঁচ বছর আগে যারা ছিলেন প্রতিবাদমুখর, করেছিলেন বিরোধিতা সময়ের ব্যবধানে মুছে গেছে বিরোধিতার সুর। সিনেমা হল বাঁচাতে ভিনদেশী ছবির পক্ষে এখন তাদের অবস্থান। বলিউডের সিনেমা দেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে একই দিনে মুক্তির কথা ভাবছেন তাঁরা। তাদের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সম্মতিও দিয়েছেন সেদিন কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামা অনেকেই। আগামী তিন মাসের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহ বলিউডের সিনেমা মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার মনে করেন চলচ্চিত্রের যেটি উন্নয়ন হয় সেটিই করতে হবে। তার ভাষায় সিনেমা হল বাঁচাতে ভিনদেশী সিনেমা আমদানি করা যেতে পারে। হলমালিকরা বলছেন- যে কোন পণ্য সঙ্কটে আমদানি হয়ে ওঠে সময়ের দাবি- তাই সিনেমা শিল্প বাঁচাতে এখন হাটতে হবে সে পথেই। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ মনে করেন, বছরে বিশ-পঁচিশটি সিনেমা হলমুখী করতে বিদেশী ছবি আমদানি করে দর্শককে প্রেক্ষাগৃহমুখী করতে হবে। তারপর দেশীয় ছবি মুক্তি দিলে নিভে যাওয়া চলচ্চিত্র ঘুড়ে দাঁড়াবে। ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে মান-অভিমান না করে সবারই উচিত বিদেশী ছবি আমদানিতে একমত পোষণ করা। তবে ভিনদেশী সিনেমা দেশের সিনেমা হলে চালাতে দ্বিমত পোষণ করেন অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি আনন্দকণ্ঠকে বলেন, ভিনদেশী ছবি চালালেই কি ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে? দর্শক হলমুখী হবে? চলচ্চিত্র বাঁচাতে নিজেদের গল্পনির্ভর ছবি নির্মাণ করতে হবে। বিদেশী ছবি দিয়ে দর্শক আসবে না বরং তা আরও কমবে। নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে ভালো ছবি নির্মাণের চিন্তা করতে হবে। দেশের সিনেমা হলে বিদেশী সিনেমা মুক্তি দিতে চাইলে কঠোর হতে বাধ্য হব। ২০১৫ সালে চিত্রনায়িকা পরী মনি ভিনদেশী ছবির বিপক্ষে রাজপথে নেমে আন্দোলন করলেও পাঁচ বছর পর যখন বিদেশী ছবি আমদানির কথা বলা হচ্ছে এ বিষয় কি ভাবছেন তিনি? প্রশ্ন রাখতেই বিরক্ত হয়ে কিছুটা উত্তেজিত সুরে জানান, এসব ফাচুকি (ফালতু) বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয় বলে ফোনটি রেখে দেন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দেশে ভিনদেশী ছবি মুক্তি বন্ধের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন চিত্রতারকা শাকিব খান। তার কাছে আনন্দকণ্ঠ এবার প্রশ্ন রাখে যেহেতু সে সময় বিদেশী ছবি মুক্তি ঠেকাতে রাজপথে নেমেছিলেন পাঁচ বছর পর ভিনদেশী ছবি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিতে আপনার মতামত কি? তবে শাকিব প্রশ্নটি এরিয়ে যান। অনেকেই মনে করছেন বাংলা সিনেমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। ভিনদেশী ছবি আনার পক্ষে একমত পোষণ করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তিনি মনে করেন নিয়মনীতি মেনে তিন মাসের জন্য চলচ্চিত্রের কথা চিন্তা করে বিদেশী ছবি আমদানি করা যেতে পারে। কারণ চলচ্চিত্রের বর্তমান সময় ভালো যাচ্ছে না। দু-হাজার পনেরো সালে এর বিরুদ্ধে আন্দোলক করলেও এ সময় আন্দোলনে রাজপথে নেমে লাভ হবে না। বরং ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে সিনেমা হলে দর্শক ফেরাতে তিন মাসের জন্য নিয়মনীতি মেনে বিদেশী ছবি পরীক্ষামূলকভাবে আনা যেতে পারে। যদি দর্শক ছবিগুল দেখতে আগ্রহ না দেখায় সে ক্ষেত্রে আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে ভিনদেশী যে কয়টি ছবি বাংলাদেশে আমদানি করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সব কয়টি ছবিই দেশে ব্যর্থ হয়েছে। সিনেমা হলগুলো ছিল দর্শকশূন্য। এমন অবস্থা অনেকেই মনে করছেন চলচ্চিত্রের দুঃসময়ে ভিনদেশী ছবি আনলে অচল ইন্ডাস্ট্রি সচল হবে। আবার কেউ দেখিয়েছেন ভিন্ন যুক্তি। এখন দেখার বিষয় ভিনদেশী ছবি কি পারবে বাংলাদেশে সফল হতে নাকি ব্যর্থতার দায় নিয়ে ফের হারিয়ে যাবে। খোকন ভূঁইয়া
×