ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৮৫ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীর বিয়ের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৬ নভেম্বর ২০২০

৮৫ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীর বিয়ের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত শুরু

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর ॥ দেওয়াগঞ্জের বহুল আলোচিত ৮৫ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে স্থানীয় মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর বিয়ের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসন গঠিত তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি বুধবার সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছে। জানা গেছে, বহুল আলোচিত এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দীনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী রবিবারের মধ্যে এ বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে জামালপুরের ডিসি, এসপি ও দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসির প্রতি এ আদেশ জারি করেন। এদিকে হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চরআমখাওয়া ইউনিয়নের বয়রাপাডা গ্রামের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ মহির উদ্দিনের সঙ্গে একই গ্রামের এক মাদ্রাসাছাত্রী ও সম্পর্কে নাতনির সঙ্গে বিয়ে দেন গ্রাম্য মাতব্বররা। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ২০০৮ সালে করা প্রথম জন্মনিবন্ধন সনদ অনুসারে ওই ছাত্রীর বয়স ১৮ বছর ৯ মাস হলেও কয়েকটি সংবাদপত্রে তার বয়স ১১-১২ বছর উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশিত হলে বাল্যবিয়ের বিষয়টি সামনে চলে আসে। একই সঙ্গে এর আগে মেয়েটির চাচাত ভাই প্রতিবেশী শাহীন আলম জীবনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে গর্ভপাতের ঘটনাটিও প্রকাশ পায়। স্থানীয় গ্রাম্য সালিশে ওই বৃদ্ধের নাতি শাহীনের সেই অপরাধের দায়ভার দাদা বৃদ্ধ মহির উদ্দিনের ওপর চাপিয়ে দিতেই মহির উদ্দিন ও নাতি শাহীনকে ১০ ঘা করে দোররা মারে। একই দিন কাজি ডেকে বৃদ্ধের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে পরিয়ে দেন। তবে এ বিয়ের ব্যাপারে ওই ছাত্রীর স্বজনদের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ইউএনও এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ, সদস্য দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীর ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা বুধবার ওই বৃদ্ধের বাড়ি দেওয়ানগঞ্জের চরআমখাওয়া ইউনিয়নের বয়রাপাড়া গ্রামে সরেজমিন গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এ সময় তদন্ত কমিটি বৃদ্ধ মহির উদ্দিন ও ওই ছাত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে তাদের বক্তব্য নিয়েছেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সবার সাক্ষ্য গ্রহণও করেন। তদন্ত কমিটি ওই ছাত্রীর ২০০৮ সালে করা একটি জন্মনিবন্ধনের কপিও হাতে পেয়েছেন। ওই জন্মনিবন্ধন অনুসারে ওই ছাত্রীর বয়স ১৮ বছর ৯ মাস। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে বৃদ্ধ মহির উদ্দিনের প্রকৃত বয়স ৮৯ বছর ৪ মাস। তার দুই স্ত্রী মারা যাবার পর বিগত ২৭ বছর ধরে তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করে আসছেন বলে তদন্ত কমিটি জানতে পেরেছেন। এছাড়াও তদন্ত কমিটি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সালিশের কয়েকজন মাতব্বরেরও সাক্ষ্য নিয়েছেন। তবে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করে তার গর্ভপাত ঘটানোর হোতা শাহীন ও তার পরিবারের কেউ তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হননি। এ ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের আদেশ জারির পর থেকেই শাহীন ও তার পরিবারের লোকজনরা সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ এ তদন্ত প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে বৃদ্ধের বিয়ের এ আলোচিত ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছি। বৃদ্ধ মহির উদ্দিন ও ওই ছাত্রীসহ এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই ছাত্রীর জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা হয়েছে। তার প্রকৃত বয়স জানতে আরও কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে এই বিয়ের ঘটনার সঙ্গে যদি কোন দুষ্কৃতকারী জড়িত থাকে তাদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এখন তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাই বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে উচ্চ আদালত নির্দেশিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।
×