ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসব কি স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড নাকি পরিকল্পিত নাশকতা?

পরপর তিনদিন তিন বস্তিতে আগুন, এবার বাউনিয়াবাঁধে

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৬ নভেম্বর ২০২০

পরপর তিনদিন তিন বস্তিতে আগুন, এবার বাউনিয়াবাঁধে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ঢাকার মিরপুরের বাউনিয়াবাঁধ বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পর পর তিনদিনে তিনটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব সত্যিই স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা। এমন প্রশ্ন তুলেছেন বস্তিবাসীরাও। বস্তিবাসীদের অভিযোগ, বস্তির অধিকাংশই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাই পরিকল্পিত নাশকতা। বস্তিতে ইচ্ছে করেই আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এর সঙ্গে কিছু সুবিধাবাধী লোকজন জড়িত। যারা পুড়ে যাওয়ার পর বস্তির খালি জায়গা দখল করে নেয়। খালি জায়গায় বস্তিঘর বা দোকান গড়ে তুলে ভাড়া দিয়ে থাকে। কিছু স্বার্থানেষী মহল সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেও পরিকল্পিতভাবে বারবার বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। যদিও ফায়ার সার্ভিস বলছে, শীতের শুষ্ক মৌসুমে কাঠ, বাঁশ আর টিন দিয়ে তৈরি বস্তিঘরগুলো শুকিয়ে থাকে। ফলে আগুন লাগার সঙ্গে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে মিরপুরের কালশী এলাকার মূল রাস্তার পাশে বিশাল সরকারী জায়গায় গড়ে ওঠা বাউনিয়াবাঁধ বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুনে বাউনিয়াবাঁধের সি ব্লকের রাস্তার ঢালের ওই বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জনকণ্ঠকে জানান, আগুন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সোয়া তিনটার দিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। সকাল সাড়ে ছয়টা সম্পূর্ণ নির্বাপণের কাজ শেষ হয়। আগুনে ৪৩টি বস্তিঘর ও ১২টি দোকান পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। সেখানকার বাসিন্দা সোহেল জানান, পুকুরের ওপর গড়ে ওঠা বস্তিটিতে প্রতিবছরই বারবার আগুন লাগে। আগুনের কারণ জানা যায় না। মূলত মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, পুড়ে যাওয়ার পর যেখানে খালি হওয়া জায়গা দখল, আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও সরকারবিরোধী কোন গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বস্তিতে আগুন দিতে পারে। এর আগে গত ২৩ নবেম্বর সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। টানা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুড়ে বস্তিঘর। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে ১৩১টি বস্তিঘর আর ৩০টি দোকান পুড়ে গেছে। এরপর দিন ২৪ নবেম্বর বিকেল সোয়া চারটার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন বাবর রোডের জহুরী মহল্লার উর্দুভাষী অবাঙালীদের বিহারি পট্টি লাগোয়া বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট টানা এক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বস্তিবাসীদের অভিযোগ, বারবার শুধু বস্তিতেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এসব আগুন লাগে না। লাগিয়ে দেয়া হয়। বস্তিতে মাদক ব্যবসা চলে। যেসব ঘরে মাদক ব্যবসা চলে তারা প্রভাবশালী। তারা আশপাশের ঘরের বাসিন্দাদের মাদক ব্যবসায় নামাতে চেষ্টা করে। কেউ রাজি না হলেই তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। আবার আধিপত্য বিস্তারের সূত্র ধরেও বস্তিতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। বস্তিঘর পুড়ে গেলে, তাৎক্ষণিকভাবে বস্তির বাসিন্দারা ঘর তুলতে পারেন না। এই সুযোগটিকে কাজে লাগায় স্থানীয় বা বস্তির প্রভাবশালীরা। তারা সেখানে ঘর বা দোকান তুলে ভাড়া দিয়ে টাকা রোজগার করে। এর বাইরে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীও বস্তিতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়। যাতের সরকারের দেশ-বিদেশে দুর্নাম হয়। সরকারকে অনেক হয়রানি হতে হয়। কারণ বস্তির বাসিন্দারা মারা গেলে, তাদের দাফন কাফনের জন্য টাকা দিতে হয় সরকারকে। আবার বস্তিঘর পুড়ে যাওয়ার পর গৃহহীনদের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় সরকারকেই। বস্তিতে আগুন দিয়ে মাঝখান থেকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে সুবিধা নিয়ে যায় নিয়ে কিছু স্বার্থপর মানুষ। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ দায়িত্বশীলরা। এ খাতে প্রতি বছর সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। তাদের আর্থিক সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হয় সরকারকে। পর পর তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানতে কথা বলেছিলাম ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইনের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, শীত মৌসুম এলেই সব কিছু শুষ্ক হয়ে যায়। কারণ বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে। অধিকাংশ বস্তিঘরই কাঠ, বাঁশ আর টিন দিয়ে তৈরি। ফলে আগুন লাগলে দ্রুত তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ভয়াবহতাও বেড়ে যায়।
×