ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন বাস্তবায়নে ভূমি হুকুমদখল শেষ পর্যায়ে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা

জ্বালানিতে মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০২০

জ্বালানিতে মহাপরিকল্পনা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের জ্বালানি সেক্টর স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সরকারী পর্যায়ে জ্বালানি তেলের আমদানি, উৎপাদন এবং সরবরাহের একক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেল বিপণনের সঙ্গে জড়িত। আর একমাত্র পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) আমদানির ক্রুড অয়েলকে পরিশোধন করে থাকে। চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল সরবরাহের ৯০ শতাংশই কার্যক্রম সম্পন্ন হয় নদী পথে। এ প্রক্রিয়ায় সিস্টেম লস যেমন থাকে, তেমনি রয়েছে চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি। ফলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল সরবরাহে পাইপলাইন বাস্তবায়নের মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিপিসি। বিপিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় ২৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পে ইতোমধ্যে ১১৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইআইএলকে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড) এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি অর্থাৎ পাইপলাইন ২২ নদী, ১২ স্থানের রেললাইন, ১৮ স্থানের হাইওয়ে, ৯৬ রোড ক্রসিংসহ ৭৭২ স্থানে খাল নালার মধ্য দিয়ে নির্মিত হবে। এসব কাজের জন্য ইতোমধ্যে রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, নদী ও সংশ্লিষ্ট সিটির ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড সর্বশেষ চট্টগ্রাম ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জসহ ১৯ জেলায় ব্যবহারের জন্য জমি হুকুমদখলের জন্য এগিয়ে চলেছে। এ কাজে এ পর্যন্ত ৭২৮ কোটি টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। বিপিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে বেসরকারী খাতের প্রায় ৩০ হাজার ট্যাংক লরি এবং রেলওয়ের শতাধিক ওয়াগনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এর সঙ্গে রয়েছে নদী পথের সরবরাহ, যা মোট সরবরাহের প্রায় ৯০ শতাংশ। মূলত ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতা, হরতাল অবরোধের কারণে জ্বালানি তেল সরবরাহে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার পর বিপিসি এ বিকল্প ব্যবস্থা চিন্তা করে সরকারের কাছে এ প্রকল্প পেশ করে। সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন ও সহজতর করতে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণ কাজের অনুমতি দেয়। বিপিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা নির্মিতব্য পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২৪৬ কিলোমিটার। আবার এর মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার প্রধান জ্বালানি ডিপো থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন হবে ২৩৭ দশমিক ৭১ কিলোমিটার এবং তা ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের। আবার গোদলাইন থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটারের পাইপলাইন হবে ১০ ইঞ্চি ব্যাসের। এতে করে জ্বালানি তেল সরবরাহে সহজতর ও নিরবচ্ছিন্ন হবে। এছাড়া পারিপাশির্^ক প্রতিবন্ধকতা পরিহার করে দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থা সুদৃঢ় ও সুসংহত হবে বলে বিপিসি মনে করে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কয়েক দফা সংশোধন হয়েছে এ প্রকল্পের। সর্বশেষ সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে আরও ৫৩০ কোটি টাকা। ফলে মোট প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যা একনেক অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে লাইটার ও ট্যাংক লরি মালিকদের বড় একটি সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কারণ বর্তমানে নদীপথে ছোট ছোট লাইটার জাহাজ এবং সড়ক পথে ট্যাংক লরির মাধ্যমে দেশজুড়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়ে থাকে। এতে করে লাইটার জাহাজ ও ট্যাংক লরি মালিকদের মোটা অঙ্কের মুনাফা হয়। পাশাপাশি সিস্টেম লস হয়ে ক্ষতি হয় বিপিসি তথা সরকারের। সব বাধার পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন সংশোধিত ডিপিপির অনুমোদনের পর ভূমি অধিগ্রহণ খাতের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সম্পন্ন হলে পাইপলাইনের ভৌত কাজ শুরু হবে এবং এতে করে বিপিসির জ্বালানি তেল সরবরাহের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। গুণগতভাবেও পাল্টে যাবে চিত্র। কমে যাবে সিস্টেম লস। নদীপথে বর্তমানে চুরির ঘটনাবলী কমে যাবে। ঝুঁকির আশঙ্কাও বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলে মনে করে বিপিসি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান এতে সময় আরও বেড়ে যাবে। সঙ্গে বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়ও। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশে চাহিদার জ্বালানি তেল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত দুভাবে বিদেশ থেকে সরকার জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে।
×