ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩০ শতাংশ করোনা রোগী উপসর্গহীন ॥ গবেষণা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৬ নভেম্বর ২০২০

৩০ শতাংশ করোনা রোগী উপসর্গহীন ॥ গবেষণা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু ও হাসপাতালে রোগী ভর্তিতে রেকর্ড হলো। অন্যদিকে ৩০ শতাংশ করোনা রোগীই উপসর্গহীন বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। আর ডিসেম্বর পর্যন্ত জার্মানিতে লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের। বিশ^ব্যাপী করোনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে যাচ্ছে ওয়ার্ল্ডোমিটার্স ডট ইনফো। ওয়েবসাইটির মতে, সারাবিশে^ বুধবার পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৬ কোটি ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৮ জন। মারা গেছেন ১৪ লাখ ২৩ হাজার ২৪৯ জন। সুস্থ হয়েছেন চার কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ২০৪ জন। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন এক কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার ৫২৫ জন। যাদের মধ্যে এক লাখ তিন হাজার ৩২৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশে^র ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে মারা গেছেন ১১ হাজার ৭১৯ জন, মৃতের সংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ^ রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রে একদিনেই নতুন করে পৌনে দুই লাখ মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, এদিন দেশটিতে এক লাখ ৬৯ হাজার ১৯০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৮৯ জনের। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট এক কোটি ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচীর প্রধান ড. মনসেফ স্লায়ুই জানিয়েছেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে দেশটিতে করোনার টিকা দেয়া শুরু হতে পারে। টিকা অনুমোদিত হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রদানের স্থানে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। গত ২৪ ঘণ্টায় মার্কিন হাসপাতালগুলোতে ৮৮ হাজার ৮০ জন ভর্তি হয়েছেন। একদিনে মারা গেছেণ দুই হাজার ১৯৪ জন। শুধু নবেম্বরেই শনাক্ত ৩৩ লাখের বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এক দিনে করোনা শনাক্তের রেকর্ড একের পর এক ভাঙছে। এবার দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর দিক থেকেও রেকর্ড হয়েছে। কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্ট বলছে, দেশটিতে বর্তমানে ৮৮ হাজার ৮০ জন মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যা চলতি বছরের শুরুতে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৬ মে দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোর খালি থাকা আইসিইউ বেডের সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, করোনার যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অঙ্গরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড আর খালি থাকবে না। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯-এ মারা গেছে। শুধু নবেম্বরেই ৩৩ লাখ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। যা এ পর্যন্ত এক মাসে করোনা শনাক্ত হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড। ৩০ শতাংশ করোনা রোগীই উপসর্গহীন ॥ করোনার দাপটে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের সবচেয়ে ক্ষতিকারক দিকটি হলো, উপসর্গহীন রোগীরাও একই রকম ঝুঁকিতে আছে এবং এই উপসর্গহীন রোগীরাই সবচেয়ে বেশি করোনা ছড়াচ্ছে। তারা নিজেরাই জানেন না যে, তাদের শরীরে করোনা রয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, করোনা রোগীদের মধ্যে ৩০ শতাংশই উপসর্গহীন। ফলে এই রোগ মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল সোসাইটি ইন্টারনাল মেডিসিনের মতে, উপসর্গহীন রোগীদের নাকে, গলায় এবং ফুসফুসে সবচেয়ে বেশি ভাইরাস বাসা বাঁধে এবং এরাও একইভাবে ভাইরাস ছড়াতে পারে। করোনার সাধারণ উপসর্গ যেমন- জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা যায়। এরপর শারীরিক ইমিউনিটির ওপর নির্ভর করে আরও মারাত্মক উপসর্গ শরীরে দেখা দেবে। শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে কোভিড-১৯ ভাইরাস। সম্প্রতি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হাতে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তাদের দাবি, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও বহু রোগীর শরীরে থেকে যাচ্ছে করোনার উপসর্গ। এক সমীক্ষা চালিয়ে অক্সফোর্ডের গবেষকরা দেখেছেন যে, করোনার উপসর্গগুলোর মধ্যে শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, উৎকণ্ঠা এবং মানসিক অবসাদের মতো লক্ষণগুলো সুস্থ হওয়ার এক মাস পরেও থেকে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। করোনাজয়ীদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অক্সফোর্ডের গবেষকদের মতে, কোভিডের এখনও কোন ওষুধ নেই। ফলে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের এ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না। তখন হয়তো ভাইরাস ও এ্যান্টিবডি থেকে যায় পাশাপাশি। সমানে সমানে যতদিন থাকে সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় তখন, যখন সময়ের সঙ্গে এ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। মাথাচাড়া দেয় ভাইরাস। এ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়াই করতে করতে ভাইরাস নিজেকে পাল্টে ফেলে অর্থাৎ মিউটেট হয়ে যায়। আর যে ভাইরাসগুলো নিজেদের পাল্টাতে পারে না সেগুলো মরে যাওয়ায় তখনকার মতো হয়তো রোগ থেকে সেরে ওঠা যায়। কিন্তু পরিবর্তিত ভাইরাসগুলো আবার সময়ের সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে এবং রোগ হিসেবে ফিরে আসে। লকডাউনের সময় বাড়ল জার্মানিতে ॥ জার্মানির অর্থমন্ত্রীর মতো, জার্মানিতে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে বর্তমান ‘লকডাউন লাইট’কে ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হোক। বুধবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলসহ জার্মান নেতৃত্ব। ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ও বাভারিয়া অঞ্চলের প্রধান মার্কুস জ্যোডার বিল্ড আম জনটাগ পত্রিকাকে জানান যে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে ‘লকডাউন লাইট’ এখন চলছে, তা ক্রিসমাসের আগ পর্যন্ত ডিসেম্বর মাসেও জারি থাকতে পারে। চ্যান্সেলর মেরকেলের সঙ্গে করে করোনাবিধি বিষয়ে আলোচনায় বসেন এই দুই রাজনীতিকসহ জার্মানির ১৬ রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব। জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী শোলৎজ বলেন, এখনকার পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বর্তমান কড়াকড়ি অবশ্যই ৩০ নবেম্বরের পরেও চালু রাখতে হবে। জ্যোডারের মতে তা ৩০ নবেম্বরের পরে আরও দুই বা তিন সপ্তাহ বাড়াতে হবে। আনন্দের সঙ্গে বড়দিন উপভোগ করতে আমাদের অবশ্যই লকডাউনের সময়সীমা ও বিধিনিষেধ আরও বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রী শোলৎজ অবশ্য জানিয়েছেন, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলেও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের হাত ছাড়বে না কর্তৃপক্ষ। তার আশ্বাস, এটা জীবিকা সুরক্ষিত রাখার প্রশ্ন। এ বিষয়ে আমরা বাস্তবতাকে মাথায় রেখে, বুদ্ধি করে আমলাতন্ত্রের মারপ্যাঁচকে সামলে চলব।
×