ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাকসিন কিনতে মডার্নার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০২০

ভ্যাকসিন কিনতে মডার্নার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু

রশিদ মামুুন ॥ মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্নার কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির টিকার কার্যকারিতা ইতোমধ্যে ৯৪ দশমিক ৫ ভাগ বলে তৃতীয় ধাপের অন্তর্র্বর্তীকালীন রিপোর্টে তারা প্রকাশ করেছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের পর মডার্না হচ্ছে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন কেনা হবে। তবে এখন মডার্নার ১০ লাখ ডোজের মতো ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, যেখানেই করোনা ভ্যাকসিন আগে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আনা হবে। করোনা ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য সরকার এক হাজার কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেরাম ইনস্টিটিউটের দেশে এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী শিল্প এবং বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সম্প্রতি বলেছেনÑভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করলে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। সেরামের কাছ থেকে সবচেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলেও জানান সালমান এফ রহমান। আগামী জানুয়ারি থেকে অক্সফোর্ডের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটির বাজারজাত শুরু হলে সেরাম ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করতে পারবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছে সেরাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী রিপোর্টের ভিত্তিতে চারটি ভ্যাকসিন তাদের সঠিক মানের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড এবং মার্কিন মডার্নার রয়েছে। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের যে দাম প্রকাশিত হয়েছে তাতে অক্সফোর্ড এবং মডার্নার ভ্যাকসিনের দামের বেশ পার্থক্য দেখা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ভারতের সেরাম থেকে আনা প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম পড়বে পাঁচ ডলার। এরমধ্যে ভ্যাকসিনের ক্রয় এবং পরিবহন ব্যয় রয়েছে। অন্যদিকে মডার্নার প্রতিডোজ ভ্যাকসিনের দাম ২৫ থেকে ৩৭ ডলার বলে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় আরও ১৫ ডলার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার গঠিত করোনা প্রতিরোধ কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ডাঃ ইনবাল আর্সেনাল জনকণ্ঠকে বলেন, মডার্নার কাছ থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্ত মডার্না ১০ লাখের বেশি ভ্যাকসিন আপাতত দিতে পারবে না। তাদের ভ্যাকসিনের দাম ৩৫ ডলার করে। খানিকটা বেশি দামের সঙ্গে ১৫ ডলার পরিবহনজনিত ব্যয়ও হবে। সরকার সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ভ্যাকসিনগুলোর যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ভ্যাকসিনে এ্যান্টিবডি (রোগ প্রতিরোধ স্বক্ষমতা) সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতদিন কার্যকর থাকবে সে সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নয়। আবার দীর্ঘদিন পরে কেউ ভাইরাস আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হবে কিনা যাকে বলা হয় মেমরি সেল, সে বিষয়েও কেউ নিশ্চিত নন। ফলে যারাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে তাদের ওপর নজর রাখতে হবে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, মানবিকতা, ব্যবসা নয়। সরকার সেটি যতটা ভালভাবে করতে পারবে বেসরকারী কেউ তা করতে পারবে না। তারা মুনাফার চিন্তা করবে। ফলে এখনই ভ্যাকসিন প্রয়োগে কোন বেসরকারী কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়া উচিত হবে না বলেই মনে করেন তিনি। স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেশে দেয়ার উপযোগী ভ্যাকসিন যেখানে আবিষ্কার হবে সেখান থেকেই আমরা কিনব। তবে এর আগে আমাদের দেশের উপযোগী কিনা সেটা দেখা হবে। আমরা আগে যাচাই- বাছাই করব তারপর সিদ্ধান্ত নেব। তবে এখনও মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্নার সঙ্গে ভ্যাকসিন সরবরাহের কোন চুক্তি হয়নি বলে জানান তিনি। মরডানা ছাড়াও মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এনবায়োটেক বাজারে করোনার ভ্যাকসিন আনতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৯০ ভাগ বলে দাবি করা হচ্ছে। তাদের ভ্যাকসিনের দামও মডার্নার কাছাকাছি। অন্যদিকে রুশ স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনের দাম মডার্না এবং ফাইজারের চাইতে কম পড়বে বলে রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড জানিয়েছে। তবে এখনও তারা ভ্যাকসিনের দর নির্ধারণ করেনি। অন্যদিকে তৃতীয়ধাপের পরীক্ষা চলার মধ্যেই চীনা প্রতিষ্ঠান একটি ভ্যাকসিন বাজারজাত শুরু করেছে, যেটির দাম ৬৫ ডলার। সব চাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে বিশে^র ধনী দেশগুলো করোনা ভ্যাকসিনের ৫১ শতাংশ এরমধ্যে কিনে রেখেছে। কোন কোন দেশ এত বেশি আগাম ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে যা তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এ বিষয়ে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ^ মোড়লদের জরুরী সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাহলেই বিশে^র সব নাগরিকের জন্য মহামারী মোকাবেলা সহজ হবে। নইলে বিশেষ শ্রেণীর বাইরে করোনা প্রতিরোধ করা কঠিন হবে। এতে বিশ^ অর্থনীতি চাঙ্গা হতে যেমন বেশি সময় প্রয়োজন হবে তেমনি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
×