ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্ট্যাম্প কোর্ট ফি ব্যান্ডরোল জালিয়াতিতে মাসে ক্ষতি শত কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০২০

স্ট্যাম্প কোর্ট ফি ব্যান্ডরোল জালিয়াতিতে মাসে ক্ষতি শত কোটি টাকা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ কিছুতেই কমছে না স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও ব্যান্ডরোল জালিয়াতি। একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র এই কাজের সঙ্গে জড়িত। একের পর এক অভিযানে প্রতারক চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও জামিন পেয়ে আবারও একই কাজ করছে। কিছু অসাধু আইনজীবী, দলিল লেখক আর তামাক শিল্প প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত। প্রতারক চক্রের এই জালিয়াতিতে গ্রাহকদের ক্ষতি ছাড়াও সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রতি মাসে যার পরিমাণ এক শ’ কোটি টাকার বেশি। এমন জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। গত ১৯ নবেম্বর পল্টন ও আশুলিয়া থেকে ১৮ কোটি টাকা সমমূল্যের জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকেট ও কোর্ট ফিসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আকতার জানান, গ্রেফতারকৃতরা বহু বছর ধরে জাল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও ডাকটিকেট তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করছিল। বৈধ স্ট্যাম্পের আড়ালে জাল স্ট্যাম্পগুলো বিক্রি করা হতো। জাল স্ট্যাম্পগুলোর কারণে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিশু বিশ্বাস বলছেন, কিছু অসাধু আইনজীবী আর দলিল লেখকের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে এসব জাল স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হতো। পুরো চক্রটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এর আগে গত ২৭ আগস্ট ঢাকার রমনা থেকে জাল স্ট্যাম্পসহ দুইজন ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তাদের কাছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আলফাজ উদ্দিন (৬১) ঢাকা ট্যাক্সেস বার এ্যাসোসিয়েশনের সহকারী হিসাব রক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিল। দামী কোন কিছু বেচাকেনা করলেই স্ট্যাম্প লাগে। বিশেষ করে জমি বেচাকেনা কিংবা ফ্ল্যাট হস্তান্তর বা নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করার ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ট্যাম্পের প্রয়োজন। নিয়মানুযায়ী বিক্রীত জিনিসের মূল্যের বিপরীতে বিভিন্ন মূল্যের রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগাতে হয়। অনেক অসাধু স্ট্যাম্প বিক্রেতা আসল স্ট্যাম্পের আড়ালে নকল স্ট্যাম্প বিক্রি করছে। সারাদেশে এর একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। যারা বিভিন্ন পোস্ট অফিস, আদালত, গার্মেন্ট, সরকারী হাসপাতাল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারী অফিসে নকল স্ট্যাম্প বিক্রি করছে। নিবন্ধন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের রেভিনিউ স্ট্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ৫০ এবং ১০০ টাকার স্ট্যাম্প। প্রতিটি স্ট্যাম্পই কমবেশি নকল হচ্ছে। এতে মোটা অঙ্কের টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কারণ যে কোন দলিল নিবন্ধন, চুক্তিপত্র, নোটারি, হলফনামা, এফিডেভিটসহ বিভিন্ন কাজে স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়। এর বিনিময়ে ডিডভ্যালু বা চুক্তিমূল্যের ওপর নির্ধারিত হারে রাজস্ব আদায় করে থাকে সরকার। নকল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে এসব কাজ পরিচালিত হলে স্বাভাবিক কারণে রাজস্ব হারাবে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্ট্যাম্প বিক্রি (নন-জুডিসিয়াল) বাবদ মোট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৯২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছর ১২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আয় হয়েছে ছয় হাজার ১৮২ কোটি টাকা। সূত্রটি বলছে, নিয়ম অনুযায়ী দলিল মূল্য যাই হোক না কেন সর্বোচ্চ ৩শ’ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ব্যবহার করা যায়। এর বেশি মূল্যমানের স্ট্যাম্পের প্রয়োজন হলে বাকি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির লাইসেন্স দিয়ে থাকে। স্ট্যাম্প বিক্রির সময় ভেন্ডারদের নাম, ঠিকানা, ক্রমিক নম্বর ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়। নকল স্ট্যাম্প বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই তা মানা হয় না। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে মিলেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রটি বলছে, দ্বিতীয় দফায় বিড়ির প্যাকেটের গায়ে আসল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এমন তথ্যের সূত্র ধরেই গত ২৯ জুলাই শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দী থানা এলাকার লছমনপুর, কুসুমহাটি ও শ্রীবর্দীর তাতিহাটি এলাকা অভিযান চালানো হয়। সেখানকার ইদ্রিস এ্যান্ড কোম্পানি এবং রাশিদা বিড়ি কোম্পানিতে চালানো অভিযানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও জেলা প্রশাসনও ছিল। অভিযানে দ্বিতীয়বার বিড়ির প্যাকেটে ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়িসহ শফিউল আলম ও রুবেল শাহরিয়ার নামের দুইজনকে আটক করা হয়। জব্দ করা হয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যবহৃত আসল ব্যান্ডরোল। এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে থাকে অভিনব কৌশলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা জানায়, রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার কাজটি করছে দেশের কয়েকটি বিড়ি কোম্পানি। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি বিড়ির প্যাকেটের গায়ে একটি সরকারী ব্যান্ডরোল লাগানোর কথা। সেটি মানছে। তবে শতভাগ নয়। অধিকাংশ বিড়ি কোম্পানি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিড়ির প্যাকেটের গায়ে আসল ব্যান্ডরোল লাগাচ্ছে। বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বিড়ির প্যাকেটের গায়ে নকল ব্যান্ডরোল লাগানো হচ্ছে। যেসব বিড়ির প্যাকেটের গায়ে নকল বা জাল ব্যান্ডরোল লাগানো হচ্ছে, সেসব বিড়ির প্যাকেটের জন্য সরকারকে কোন ধরনের রাজস্ব দিতে হচ্ছে না। এতে মোটা অঙ্কের টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। নকল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ির প্যাকেটগুলো আবার আসল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ির সঙ্গে প্যাকিং করা হচ্ছে। পুরোপুরি নকল বা জাল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ি দেশের প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখানে জাল ব্যান্ডরোল শনাক্ত করার মতো কাস্টমসের কোন কর্মকর্তার যাওয়ার কোন সুযোগই থাকছে না। অনেক ক্ষেত্রে দোকানের সামনে আসল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ির প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। ভেতরে নকল বা জালব্যান্ড রোল লাগানো বিড়ির প্যাকেট রাখা হচ্ছে। কাস্টমার যখন চাচ্ছেন, তখন নকল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ির প্যাকেট বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে কাস্টমার কিছুই মনে করছেন না। কারণ যারা বিড়ি সেবন করেন, তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের, স্বল্প বা অশিক্ষিত বা সহজ-সরল সাধারণ মানুষ। তারা শুধু বিড়ি সেবন করে দেখছেন তার স্বাদ বা গন্ধ আসল কিনা। আসল বিড়ি হলেই কাস্টমারের আর কোন অভিযোগ থাকছে না। বিড়ির প্যাকেটের গায়ে আসল না নকল ব্যান্ডরোল লাগানো আছে কিনা তা তাদের বোঝার কথা নয়। তা তারা বুঝতেও চায় না। আসল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ি সরবরাহ করার সময়, দোকানিকে ব্যান্ডরোল তুলে আলাদা করে রেখে দেয়ার কথা বলে আসেন সরবরাহকারীরা। ওইসব ব্যান্ডরোল আবার শতকরা হিসেবে টাকায় কিনে নেয় কোম্পানি। এতে দোকানির ডাবল লাভ হয়। একদিকে বিড়ি বিক্রি করে লাভ হচ্ছে। আরেক দিকে ব্যান্ডরোল বিক্রি করে লাভ হচ্ছে। বিড়ি বিক্রির সময় দোকানি যদি ব্যান্ডরোল খুলে রাখেন তাতে কাস্টমার কিছুই মনে করেন না। কারণ কাস্টমার নিজেও সেই ব্যান্ডরোল ছিঁড়ে ফেলে দেবেন। এটিই স্বাভাবিক। আর বিড়ি সেবী কাস্টমারের কাছে ব্যান্ডরোল থাকলেই কি আর না থাকলেই কি, তাতে তাদের কিছুই যায় বা আসে না। সূত্রটি বলছে, এখানেই প্রতারণা শেষ নয়। কোম্পানিগুলোও আসল ব্যান্ডরোল এমনভাবে লাগাচ্ছে, যাতে অক্ষত অবস্থায় তা তোলা যায়। তুলে ফেলা সেই ব্যান্ডরোল কিনে নিয়ে আবার নতুন বিড়ির প্যাকেটের গায়ে লাগানো হচ্ছে। এতে ধরার আর কোন সুযোগই থাকছে না। আর এতে কোম্পানি দুই দিকে লাভবান হচ্ছে। একদিকে নকল ব্যান্ডরোল লাগানো প্যাকেটের জন্য সরকারকে রাজস্ব দিতে হচ্ছে না। আবার আসল ব্যান্ডরোল দ্বিতীয় দফায় ব্যবহারের জন্য ওই প্যাকেটের জন্য সরকারকে কোন রাজস্ব দিতে হচ্ছে না। গোয়েন্দা সূত্রটি বলছে, রাতের আঁধারে দুর্গম জায়গায় বিড়ির প্যাকেটের গায়ে নকল বা জাল ব্যান্ডরোল লাগানো হয়। এসব ব্যান্ডরোল তারা নিজেরাও তৈরি করছে। আবার ভারত হয়ে বগুড়ায় আসছে কিছু ব্যান্ডরোল। সেসব ব্যান্ডরোল কোথায় তৈরি হচ্ছে তা জানতে অনুসন্ধান চলছে। বগুড়া থেকে ব্যান্ডরোলগুলো গোপনে দেশের বিভিন্ন বিড়ি কারখানায় যাচ্ছে। সেগুলো লাগানো হচ্ছে বিড়ির প্যাকেটের গায়ে। বাংলাদেশ বিড়ি কোম্পানি মালিক সমিতির একজন শীর্ষ ব্যক্তি এবং দেশের খ্যাতিমান একটি বিড়ি কোম্পানির মালিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, নকল ও জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহারকারী বিড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা পেরে উঠছি না। প্রতি প্যাকেট বিড়ির জন্য ব্যান্ডরোল বাবদ সরকারকে ৮ টাকা ১০ পয়সা দিতে হয়। অন্যান্য খরচ আছে। সবমিলিয়ে আমাদের এক প্যাকেট বিড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ টাকায়। এছাড়া সরকারী নির্দেশ মোতাবেক ২৫ শলাকার এক প্যাকেট বিড়ি ১৫ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা আছে। অথচ যারা নকল বা জাল বা দ্বিতীয় দফায় আসল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করছে তারা প্রতি প্যাকেট বিড়ি বিক্রি করছেন মাত্র ১০ টাকায়। এতে সরকার যেমন কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি আমাদের পথে বসার যোগাড় হয়েছে। হালে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। আর তামাক শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তাই এ শিল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে বিড়ি কোম্পানি মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি হক বিড়ি কোম্পানির মালিক মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন নতুন বিড়ি কোম্পানির প্রতারণায় ব্যবসার কারণে আসল ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন। তাদের পক্ষে আর এ শিল্প ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের রাশিদা বিড়ি, মটর বিড়ি, মন্টু বিড়ি ও হক বিড়ি কোম্পানি সরকারী নিয়ম প্রায় শতভাগ মেনেই ব্যবসা করলেও কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মুকুট বিড়ি, সাইদ বিড়ি, সিয়াম বিড়ি, মিরাজ বিড়ি, মিস্টি বিড়ি ও নিউ মিরাজ বিড়ির বিরুদ্ধে নকল ও জাল ব্যান্ডরোল এবং একই ব্যান্ডরোল পুনর্বার ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাঙ্গাইলের সাবালিয়ায় অবস্থিত মুকুট বিড়ি কোম্পানির বিরুদ্ধে কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নকল ও জাল ব্যান্ডরোল এবং আসল ব্যান্ডরোল বার বার বিড়ির প্যাকেটের গায়ে লাগিয়ে অবৈধ ব্যবসা করার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। ফ্যাক্টরিতে সপ্তাহের চার থেকে পাঁচদিন দেড় হাজারের অধিক বিড়ি শ্রমিক বিড়ি তৈরি করে প্যাকেটজাত করে আসছে। তা সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে নানা জায়গায়। ইতোমধ্যেই নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহৃত কিছু বিড়ি জব্দ করা হয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন মুুকুট বিড়ির ম্যানেজার রঞ্জন চন্দ্র সাহা। তিনি দাবি করেন, তারা সরকারী নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের ঢাকা পশ্চিমের কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের প্রতিটি বিভাগের বিড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে নতুন কিছু বিড়ি কোম্পানির বিরুদ্ধে নকল ও জাল ব্যান্ডরোল এবং আসল ব্যান্ডরোল বার বার ব্যবহার করে সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সত্যতা মিলেছে। ওইসব কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নকল বা জাল ব্যান্ডরোল এবং আসল ব্যান্ডরোল যাতে দ্বিতীয় দফায় ব্যবহার করতে না পারে, এজন্য সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বড় বড় দোকান, যেখান বিড়ি সরবরাহ করা হয় সেইসব গুদামকে টার্গেট করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে অনেককে গ্রেফতার ও জরিমানাও করা হচ্ছে। জামিনে বেরিয়ে আবারও একই ব্যবসা করছে। কারণ এতে প্রচুর কাঁচা টাকার বিষয় আছে। এত কিছুর পরেও রাজস্ব ফাঁকির অভিনব কৌশল থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের সরানো যাচ্ছে না। সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করার মতো প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার সুযোগটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আমরা এসব শিল্প থেকে শতভাগ রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করছি। তিনি আরও জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর পুরনো ও নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার এবং উৎপাদন কম দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে জামালপুর ও শেরেপুরে ৩০ নং রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালানো হয়েছে। চার ঘণ্টাব্যাপী সেই অভিযানে দ্বিতীয় দফায় ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা পুরনো ১৭ হাজার ব্যান্ডরোল, আসল ও নকল হিসাবপত্রের লাল কাপড়ে মোড়ানো ২৫টি দলিলাদি, পুরাতন ব্যান্ডরোল লাগানো ৬ হাজার ৪শ’ প্যাকেট বিড়ি ও বিভিন্ন হিসেবের লুজশীট জব্দ করা হয়। সর্বশেষ অভিযানে সাড়ে ১২ লাখ টি নকল ব্যান্ডরোল জব্দ হয়েছে। নকল ব্যান্ডরোল এবং পুরনো ব্যান্ডরোল যাতে ব্যবহার করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে, এজন্য ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
×