ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২০

সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে বিএনপি রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপির কয়েকজন নেতা বক্তব্য দিয়েছেন যে, এই সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলতে হবে। তবে, উনাদের টেনে নামানোর হুমকির মধ্যে প্রায় একযুগ ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার মাসখানেক পর থেকেই তারা আমাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারকে টেনে নামাতে গিয়েই রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেছে বিএনপি। তথ্যমন্ত্রী বুধবার সন্ধ্যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন নানামুখি ষড়যন্ত্র হচ্ছে, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যখন বলেন- স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির কথা, তখন হাসি পায়। যারা ইতিহাসকে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে বিকৃত করেছেন। তাদের মুখে এসব কথা শোভা পায় না। আজকে যখন দেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, তারা ইতিহাসের খলনায়ককে নায়ক বানিয়েছিলেন, স্কুলের দফতরিকে তারা হেড মাস্টার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। ক্রমাগতভাবে এ ধরনের হাস্যকর বক্তব্য না দিয়ে বরং নিজেদের দলকে গুছিয়ে, নিজেদের ঘরটাকে সংগঠিত করার পরামর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন- এই সরকার কখনও পদ্মা সেতু করতে পারবে না। তাদের বলব- পদ্মা পাড়ে গিয়ে দেখে আসুন। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলি, বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী বছর চালু হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নয় তার অনেক আগেই, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার মতো বদলে যাওয়ার অগ্রগতির গল্প যদি বিশ্ববাসীকে জানান দিতে হয়, শেখ হাসিনাকে একটু সময় দিতে হবে। তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর সফলতা সেখানেই যেই পাকিস্তান সংশয় প্রকাশ করতো বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ঠিকবে কিনা। সেই পাকিস্তানের মানুষ শুধু নয় তাদের প্রধানমন্ত্রীও আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, আমরা সামাজিক অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি কয়েকবছর আগে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর পাকিস্তানের ৭০ বছর, বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের রিজার্ভ আমাদের তিনভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার, পাকিস্তানের ১৮’শ ডলারের নিচে। শুধু পাকিস্তানকে নয়, সামাজিক ও মানব উন্নয়ন সুচকে আমরা ভারতকে অতিক্রম করেছি অনেক আগেই। এই করোনাকালে যেখানে পৃথিবীর মাত্র ২২টি দেশ পজিটিভ ইকোনোমিক জিডিপি গ্রোথ রাখতে সক্ষম হয়েছে তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভারত পাকিস্তানের গণমাধ্যমে ঝড় উঠছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করছে। কিন্তু একটি পক্ষ প্রশংসা করতে পারেননা। বিএনপি আর তার দোসরেরা দেখেও দেখেনা, শোনেও শোনেনা, চোখ থাকিতে তারা অন্ধ, কান থাকতেও বধির। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মুজিব শুধু বাঙালির নেতা নয়, তিনি বিশ্ব প্রেক্ষাপটে একজন বিশ্ব নেতা এবং নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর। ১৯৭১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি, তখন সমগ্র দেশকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল হানাদাররা। তারা সব ব্রিজ-কালভার্ট বিধ্বস্ত করেছিল। সেই দেশকে বঙ্গবন্ধু পুনর্গঠিত করেছিলেন। ৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অনেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অনেক কারণ উপস্থাপন করেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পুরো ক্যানভাসটা আমাদের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বাসন্তিকে জাল জড়িয়ে কাগজের পাতায় ছবি ছাপিয়ে নানা ধরনের অপবাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যারা সেই বাসন্তির ছবি তুলে কাগজের পাতায় ছাপিয়েছিল তারা তাকে কাপড় কিনে দেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর সেই বাসন্তিকে দেখতে গিয়ে কাপড় কিনে দিয়েছেন এবং ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অর্জিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তাকে হত্যা করার ৪০ বছর পর পর্যন্ত কেউ সে রেকর্ড অতিক্রম করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমরা সেই রেকর্ড অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বহু আগেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধির গল্প শুনতো পৃথিবীর মানুষ। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, রতন কুমার রায়, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আবু মো. হাশেম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
×