ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পার্থসারথি নাগ

প্রজন্মের কল্যাণে

প্রকাশিত: ২১:২১, ২৬ নভেম্বর ২০২০

প্রজন্মের কল্যাণে

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মানুষ ব্যয় করে বাঁধা নিয়মে, অপব্যয় করে নিজের খেয়ালে।’ মহান দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে- ‘অপচয়কারীরা ক্ষণিকের সুখ-আনন্দের মোহে তাদের নিজেদের যেমন, তেমনি সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎও নষ্ট করে।’ অপচয়ের অন্য নাম পাপ। জীবনে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহার করতে অবশ্যই পরিমিতিবোধের পরিচয় দেওয়া উচিত, কোন অবস্থাতেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা ঠিক নয় - টাকা পয়সা, ধন দৌলত, প্রাকৃতিক সম্পদ যাই হোক না কেন! একই ভাবে আমাদের জীবনের অতি আবশ্যকীয় বস্তুু পানি তা কোন অবস্থাতেই অপচয় করা যাবে না। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে শেষ যুদ্ধটা হবে পানির জন্য। জাতিসংঘ নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে এক সমীক্ষায় উল্লেখ করেছে, বিশুদ্ধ পানীয় জল প্রাপ্তি হবে আগামীদিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। কার্যত আমাদের দেহের তিন ভাগের দুই ভাগ হচ্ছে পানি। এমনি এমনি বলা হয় না, পানির অপর নাম জীবন! তাই, জীবন রক্ষাকারী পানির অপচয় রোধ করা জরুরি। দেশের উন্নয়ন অবকাঠামো ও দালান কোঠা তৈরিতে ভূগর্ভস্থ পানি এমন মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে তা ভাবতে অবাক লাগে। নদী, নালা, পুকুর, জলাশয় ইত্যাদি ভরাট করে প্রাকৃতিক অর্থাৎ বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গভীর নলকূপ দিয়ে ক্রমাগত পানি উত্তোলন মাটির নিচের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে বা যাচ্ছে। অনেক জায়গায় হস্তচালিত সাধারণ নলকূপ এখনই পানি উত্তোলন করতে পারছে না। শহর অঞ্চলে তো ভয়াবহ অবস্থা! আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমাদের কৃষিকাজ ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কত পানির প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে যদি অপচয়ের প্রশ্ন আসে তবে তা হবে একান্তই আত্মঘাতী। সেক্ষেত্রে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোন অবস্থাতেই আমাদের অপরিণামদর্শিতার জন্য ক্ষমা করবে না। যে কোন প্রাকৃতিক সম্পদ পানি বা গ্যাস যা-ই হোক মানুষ তার প্রয়োজনে ব্যবহার করছে, করতে তো হবেই। কিন্তু সেখানে যদি মিতব্যয়িতা না থাকে, সচেতনতা না থাকে, ভবিষ্যতের চিন্তা না থাকে তবে নিশ্চিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এ ধরিত্রী। সে দায় আমরা কোন মতেই এড়াতে পারবো না। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি, যেখানে এক বালতি পানিতে আমরা শৌচকর্ম, স্নান ইত্যাদি সারতে পারি সেখানে তিন চার বালতি পানিতেও অনেকের চলে না। ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে তা ভেজানোর নামে পানির কলটা ছেড়েই দাঁত মাজতে থাকি! পানির মোটর বা পাম্প ছেড়ে দিয়ে খেয়ালও রাখি না কখন যে ট্যাংকটা ভরে গিয়ে পানি উপচিয়ে পড়ছে ঘন্টার পর ঘন্টা! এই যে বিদ্যুৎ ও পানির যথেচ্ছ অপচয়, তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও ক্ষমা করবেন না! দিয়াশলাইয়ের একটা কাঠির কথা চিন্তা করে সারাদিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা বা জ্বলন্ত গ্যাসের চুলায় ভেজা কাপড় ইত্যাদি শুকানোর চিত্র অহরহ আমাদের নজরে পড়ে। খুবই দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা এগুলো! অথচ প্রাকৃতিক দূর্যোগে বা কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে ঠিকই আমাদের চলে। গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে যারা রান্না ইত্যাদি করেন তারা কিন্তু যথেষ্ট সচেতন হয়েই, মিতব্যয়িতার সাথেই তা করেন! গ্যাসের লাইনে যাদের মিটার লাগানো তারা কী কখনও অপচয়ের কথা ভাবতে পারেন? কালিবাড়ি রোড, সিলেট থেকে
×