ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ রুমেল খান

কতটা লাভবান জামালরা?

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২৫ নভেম্বর ২০২০

কতটা লাভবান জামালরা?

বড় বড় যুদ্ধ জিততে গেলে আগে ছোট ছোট যুদ্ধে জিতে অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের মাত্রা বাড়িয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল সম্প্রতি এই কাজটিই করলো মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ফুটবল সিরিজ জিতে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সিরিজে তারা প্রতিপক্ষ নেপালের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে জিতে সিরিজের সুদৃশ্য ট্রফিটা নিজেদের করে নেয়। গত ১৩ নবেম্বর প্রথম ম্যাচে তারা নেপালকে ২-০ গোলে হারায়। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে করে গোলশূন্য ড্র। ২১ বারের মোকাবেলায় নেপালের বিরুদ্ধে ১৪ বার জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ৫ ম্যাচে। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন বাংলাদেশ দলের তরুণ উদীয়মান ফুটবলার মাহবুবুর রহমান সুফিল। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই জয়ে কতটা লাভ হলো লাল-সবুজ বাহিনীর? লাভগুলো হচ্ছে : এই জয়ে ফিফা র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের, এই জয়ে দলের সবার আত্মবিশ্বাস বহুলাংশে বাড়বে, এই সিরিজ খেলায় আগামী ৪ ডিসেম্বর কাতারের বিপক্ষে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে ‘ওয়ার্মআপ ম্যাচ’ সেরে নিল জামাল ভুঁইয়ারা। এমনতিে বাংলাদেশ ফুটবল দল ফিফা ও এএফসির টুর্নামেন্টের বাইরে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খুব একটা খেলে না। এর প্রভাব পড়ে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে (এখন তাদের র‌্যাংকিং ১৮৭)। চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হয়ে জাতীয় দলকে আরও বেশি করে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলানোরওপর জোর দিয়েছেন কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। সে ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতেই নতুন করে দায়িত্ব নেয়ার ৪০ দিন পরই নেপালের সঙ্গে দুই ম্যাচ সিরিজ আয়োজন করে বাফুফে। উল্লেখ্য, এ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল টানা তিনটি ফিফা ফ্রেন্ডলি সিরিজ জিতল। তিনটিই সাফ অঞ্চলের তিনটি দেশের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই বছর ২৪ অক্টোবর যশোরে প্রথম ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। ২৭ অক্টোবর রাজশাহীতে বাংলাদেশ জেতে ১-০ গোলে। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ১-০ ব্যবধানে। ২০১৯ সালে ভুটানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ৪-১ গোলে, ৩ অক্টোবর দ্বিতীয় ম্যাচ লাল-সবুজ বাহিনী জয় কুড়িয়ে নেয় ২-০ গোলে। স্বাগতিক দল সিরিজ জেতে ২-০ ব্যবধানে। এবার জিতলো নেপালের বিপক্ষে, ২ ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে। এবার নেপালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই সিরিজ জয় ছিল বেশ তাৎপর্য এবং কৃতিত্বপূর্ণ। কেননা ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে চেয়ে নেপাল এগিয়ে ১৭ ধাপ। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় বাংলাদেশের জন্য গৌরবেরই। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলে গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাসহ একাধিক পরিবর্তন ছিল। প্রধান কোচ জেমি ডে দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও করোনা পজেটিভ হওয়াতে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ডাগ আউটে দেখা যায় সহকারী কোচ স্টুয়ার্ট ওয়াটকিসকে। পক্ষান্তরে নেপাল দলেও ছিল ৫টি পরিবর্তন। প্রথম ম্যাচে উভয় দলই বেশ আক্রমণাত্নক খেলে। ফলে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের গাঁটের পয়সা উসুল হয়। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে যেমন কোন গোল হয়নি, তেমন ম্যাচটিও তেমন সুন্দর হয়নি। তারপরও এই ম্যাচে উত্তেজনাকর একটা ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক দর্শক মাঠে ঢুকে গিয়ে জামাল ভুঁইয়ার সঙ্গে সেলফি তোলার চেষ্টা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ম্যাচের ৭৩ মিনিটের উত্তর গ্যালারি থেকে নেমে হাসিব নামের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর দর্শক (বাসা ঢাকার ডেমরা) পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেক ঘুরে এসে মাঠের কর্নারের এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই দর্শক দৌড়ে চলে যান বাংলাদেশ দলের দলপতি জামাল ভুঁইয়ার কাছে। তাকে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান জামাল। স্মার্ট দর্শক দেরি না করে ঝটপট পকেট থেকে মোবাইল বের করে জামালের সঙ্গে সেলফি তোলেন। জামালও কোন আপত্তি করেননি। হাসিমুখেই ছবি তোলেন। কিন্তু বাধ সাধে বেরসিক পুলিশ। হাসিবকে আটক করে স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। খেলা শেষ হতেই প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে আতশবাজির আয়োজন করা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। প্রথম ম্যাচে ৮ হাজারের পরিবর্তে গ্যালারিতে এসেছিল ১০ হজারেরও বেশি। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শকদের মাঠে ঢোকানোর কথা। নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গ্যালারিতে প্রবেশ করেছিলেন দর্শক। দ্বিতীয় ম্যাচেও দেখা যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাস্থ্যবিধি কেউই মানছেন না। গ্যালারিতে আবারও ১০ হাজারেরও বেশি দর্শক। প্রথম ম্যাচে নেপালকে হারানোর পর ফুটবলপ্রেমীদের সমর্থন ও প্রত্যাশা বহগুণে বেড়ে যায় জামালদের প্রতি। ফলে তারা দ্বিতীয় ম্যাচেও লাল-সবুজদের জয় দেখতে চান। এবং সেটা মাঠে বসেই। কিন্তু এতেই হয় ঝামেলা। টিকেটের সংখ্যা সীমিত। ফলে অনেক ফুটবলপ্রেমীই টিকিট কিনতে গিয়েও পাননি। এজন্য ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। তাদের দাবি বাংলাদেশ বনাম নেপাল খেলার টিকেট চাই। টিকেটের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এমন সব দাবিসংবলিত ব্যানার নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিন একদল ফুটবলামোদী অবস্থান নেন বাফুফে ভবনের প্রধান গেটের সামনে। টিকেট চেয়ে সেøাগানে মুখর করে তোলেন আশেপাশের চারদিক। এবারের সিরিজে বাংলাদেশে জার্সিতে অভিষেক হয় দুজনের। একজন বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। অন্যজন উত্তর বারিধারা ফরোয়ার্ড সুমন রেজা। প্রথম ম্যাচে যখন নেপালের জালে বল পাঠান বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন, তখন সবার সামনে চলে আসে একটি অন্যরকম পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ গোলের দেখা পায় পাক্কা ১০ মাস পর! বাংলাদেশের জার্সিতে সর্বশেষ গোলটি ছিল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের। এ বছরের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে মতিন মিয়া করেছিলেন জোড়া গোল। আর ৮৩ মিনিটে দলের তৃতীয় গোলটি করেছিলেন ইব্রাহিম। এখন দেখার বিষয়, নেপালবধে বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসী হয়ে এখন কাতারের বিপক্ষে কেমন খেলা খেলে।
×