ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ মেহেদী ধামাকায় রাজশাহীর জয়

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ২৫ নভেম্বর ২০২০

শেখ মেহেদী ধামাকায় রাজশাহীর জয়

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপের পর্দা উঠেছে মঙ্গলবার। প্রথম ম্যাচেই বেক্সিমকো ঢাকা ও মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী লড়াই করে। টস হেরে ব্যাটিং করে ১৬৯ রান করে রাজশাহী। ঢাকা ১৬৭ রান করে। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ২ রানে জিতে রাজশাহী। শেষ দুই ওভারে নাটকীয়তার দেখা মিলে। টুর্নামেন্টের প্রথম জয় তুলে নেয় রাজশাহী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হচ্ছে এ টুর্নামেন্ট। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচসেরা হন শেখ মেহেদী হাসান। তার অসাধারণ ব্যাটিং-বোলিং নৈপুণ্যেই টুর্নামেন্টের প্রথম জয় পায় রাজশাহী। বাজিমাত করে। শেখ মেহেদী হাসান, নুরুল হাসান সোহান, আনিসুল ইসলাম ইমন যে ব্যাটিং করেন তাতে জয়ের ভিত গড়ে রাজশাহী। বিপদের মুহূর্তে নেমে কি যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করেন মেহেদী। ৩২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৫০ রান করেন। মেহেদীর সঙ্গে সোহানও দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলের স্কোর মজবুত করেন। দুইজন মিলে সপ্তম উইকেটে ৮৯ রানের জুটি গড়েন। সোহান ৩৯ রান করেন। আর শুরুতে ইমন (৩৫) যে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন তাতে দলের স্কোর অনেক বড় হয়েছে। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৯ রান করে রাজশাহী। মুক্তার আলী ৩ উইকেট শিকার করেন। ঢাকা দ্রুত রান তুলতে থাকে। আবার উইকেটও পড়তে থাকে। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৫২ রান করার পর ১০ ওভারেই ৮০ রান করে ফেলে। মুশফিকুর রহিম ও আকবর আলী মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যেভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন তাতে মনে হচ্ছিল ঢাকাই জিততে চলেছে। কিন্তু ৫৫ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ১২৬ রানে গিয়ে যখন আকবর (৩৪) আউট হওয়ার পর মুশফিকও (৪১) আউট হন, তখন ঢাকার জয়ের আশা শেষ হয়ে যেতে থাকে। শেষ মুহূর্তে মুক্তার আলীর ঝড়ে জয়ের আশা আবার তৈরি হয়। কিন্তু শেষ ওভারে মেহেদীর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঢাকা ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৭ রানের বেশি করতে পারেনি। রাজশাহী শুরুতেই বিপদে পড়ে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (১৭), রনি তালুকদার (৬), মোহাম্মদ আশরাফুলের (৫) মতো ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে তৃতীয় টি২০ ম্যাচ খেলতে নেমেই ইমন নজর কেড়েছেন। ২৩ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন। দলের ৬৫ রানে ইমনও আউট হন। এরপর মেহেদী ব্যাট হাতে নেমে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪৭ রান তুলে রাজশাহী। দশম ওভারে গিয়ে ৬৫ রানেই ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। মনে করা হয় রাজশাহী ১২০ রানও শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারবে না। সেখান থেকে মুহূর্তেই মেহেদীর মারমুখী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সোহানের দুর্দান্ত ব্যাটিং যোগ হয়ে ১৫ ওভারে ১২৩ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে যায়। দুইজন মিলে সব পাল্টে দেন। মেহেদী ৩১ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় অর্ধশতক করে ফেলেন। এ টুর্নামেন্টের প্রথম অর্ধশতক করেন। মেহেদীর অর্ধশতক হতেই ২০ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৯ রান করা সোহান আউট হয়ে যান। সপ্তম উইকেটে দুইজনের জুটি ৪৯ বলে ৮৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়। এই জুটিই মূলত রাজশাহীর স্কোর মোটাতাজা করে তোলে। সোহান আউটের পর আর এক বল খেলে মেহেদীও আউট হয়ে যান। ফরহাদ রেজা (১১*) ও এবাদত হোসেন (২*) শেষ পর্যন্ত দলকে অলআউট হতে দেননি। শেষ ৫ ওভারে ৪ উইকেট যাওয়ার সঙ্গে ৪৬ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়। শেষ মুহূর্তে রানের গতি কিছুটা কমে যায়। তবে শুরুতে ইমন এবং মাঝপথ থেকে মেহেদী ও সোহান যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন সেই ব্যাটিংয়েই এত বড় স্কোর গড়া সম্ভব হয়। জয়ের ভিত গড়ে। ঢাকার ব্যাটিংয়ে শুরুতে তানজিদ হাসান তামিম (১৮), ইয়াসির আলী (৯), নাঈম শেখ (২৬) চেষ্টা করেও বহুদূর যেতে ব্যর্থ হন। ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। এরপর মুশফিকুর রহিম ও আকবর আলী মিলে দলকে ১২৬ রানে নিয়ে যান। দুইজনের চতুর্থ উইকেট জুটি ৭১ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলে। তখন আকবর (৩৪) আউট হয়ে যান। ১৩৪ রানে গিয়ে যখন মুশফিকও (৪১) সাজঘরে ফিরেন তখন ঢাকা হারের শঙ্কায় পড়ে যায়। সাব্বির রহমান ও মুক্তার আলীর ওপরই সব নির্ভর করে। মুশফিক আউটের পর ১৭ বলে জিততে ৩৬ রান লাগে। ১২ বলে জিততে লাগে ৩০ রান। এমন মুহূর্তে মুক্তার ব্যাটিং ঝড় তুলেন। ১৯তম ওভারে ফরহাদ রেজার করা ছয় বলে তিন ছক্কাসহ ২১ রান নেয়া হয়ে যায়। জয়ের আশা জাগে। নাটকীয়তার দেখা মিলতে থাকে। শেষ ৬ বলে জিততে লাগে ৯ রান। বোলিং করতে আসেন স্পিনার মেহেদী হাসান। শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠে। প্রথম তিন বলে কোন রান হয়নি। চতুর্থ বলে ৪ রান হয়ে যায়। উত্তেজনা চরমে ওঠে। পঞ্চম বলে আবার কোন রান হয়নি। তবে বোলারের পা লাইনের বাইরে থাকায় ‘নো’ হয়। ঢাকার জিততে ২ বলে ৪ রান লাগে। ফ্রি হিটও পেয়ে যায় ঢাকা। পরের বলেও কোন রান হয়নি। ১ বলে জিততে ৪ রান লাগে। শেষ বলে ১ রান হয়। রাজশাহী জিতে যায় ২ রানে। শেখ মেহেদী হাসান ব্যাট হাতে যেমন ঝলক দেখান, শেষ ওভারে বল হাতে ৬ রান দিয়ে রাজশাহীকে জিতিয়ে দেন মেহেদী। স্কোর ॥ রাজশাহী- ১৬৯/৯; ২০ ওভার (শান্ত ১৭, ইমন ৩৫, রনি ৬, আশরাফুল ৫, রাব্বি ০, সোহান ৩৯, মেহেদী ৫০, ফরহাদ ১১*, আরাফাত ০, মুকিদুল ০, এবাদত ২*; মুক্তার ৩/২২)। ঢাকা- ১৬৭/৫; ২০ ওভার; তানজিদ ১৮, ইয়াসির ৯, নাঈম ২৬, মুশফিক ৪১, আকবর ৩৪, সাব্বির ৫*, মুক্তার ২৭*; মেহেদী ১/২২। ফল ॥ রাজশাহী ২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ শেখ মেহেদী হাসান (রাজশাহী)।
×