ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থপতি ইনস্টিটিউটের সংবাদ সম্মেলন

নতুন ড্যাপে জননিরাপত্তা ও জনমতের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি

প্রকাশিত: ১৯:০০, ২৪ নভেম্বর ২০২০

নতুন ড্যাপে জননিরাপত্তা ও জনমতের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) অনেক অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। সংগঠনটি বলছে, নতুন ড্যাপে জননিরাপত্তা, জনমতের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। তাছাড়া নতুন পরিকল্পনায় কোনও ধরনের ইনোভেশন আইডিয়া নেই। যেসব কারণে ২০১০ সালের ড্যাপ বাস্তবায়ন করা যায়নি, সেসব কারণ এই ড্যাপেও লক্ষ করা যাচ্ছে। তাছাড়া ড্যাপে জলাধারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটি। এরি ধারাবাহিকতায় সকলের মতামত নিয়ে নতুন ড্যাপের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্রুত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত রূপান্তরের কারণে ভবিষ্যতের ঢাকা হওয়া উচিত মহিলা, শিশু ও ভিন্নভাবে সক্ষমদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর। সকল আয়ের মানুষকে সমান অধিকার এবং সুবিধা প্রদান। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মহামারি মোকাবিলার জন্য একটি অভিযোজিত এবং স্থিতিস্থাপক শহর। উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত প্রজন্ম তৈরির জন্য ঢাকা একটি স্বাস্থ্যকর শহর হওয়া উচিত এমন আশা সকল মানুষের। কিন্তু ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালাকে প্রস্তাবিত ড্যাপে বৈরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ, এ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি প্লটে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত পরিমাণ ভূমি উন্মুক্ত রাখা, প্রতিটি প্লটে আলোবাতাসসহ সবুজের সংস্থান এবং বৃষ্টির পানি রিচার্জ সুবিধা সামগ্রিকভাবে ভবনে বসবাসরত জনগণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই বিধিমালার নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ দেয়ার জন্যই কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। স্থপতিরা আরও জানিয়েছেন, পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও জনজীবনে পরিবেশ বিধ্বংসী রাসায়নিক গুদাম, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানা স্থানান্তর করে উপযুক্ত শিল্প এলাকায় নিতে হবে। শিল্প এলাকার বিষয়ে বিশদ প্রস্তাব সংযোজন করতে হবে। জলাশয় রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএস, আরএস মৌজা ম্যাপে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাধার, জলাশয়, ঈধঃপযসবহঃ অৎবধং, ডধঃবৎ ইড়ফরবং-কে ভূমি ব্যবহার হিসেবে দেখানোর কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকলেও খসড়া পরিকল্পনায় তা অনুপস্থিত। প্রস্তাবিত খসড়ায় প্লাবনভূমিকে শ্রেণিভাগ করার সময় ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনে প্রদত্ত প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাকে বিবেচনায় আনা হয়নি। তথাকথিত ‘মুখ্য জল¯্রােত’ ও ‘সাধারণ জল¯্রােত’ হিসেবে বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে শ্রেণিবিভক্ত করার কোনও সুযোগ ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনে নেই। এতে শর্তসাপেক্ষে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও স্থাপনা অনুমোদনের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে তা আইন, আদালতের আদেশ ও জনস্বার্থ পরিপন্থী। এরূপ প্রস্তাব গৃহীত হলে নগর বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের আশঙ্কাজনক হ্রাসের ঝুঁকিতে থাকায় ঢাকা তার ৭০ ভাগ প্রাকৃতিক জলাশয় হারাবে এবং প্লাবন ভূমি সংকুচিত হয়ে ৬৬ ভাগের পরিবর্তে ১৭ ভাগে নেমে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে ঐতিহাসিক স্থাপনা, রাস্তার ন্যূনতম প্রস্থ, উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময়, নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন ব্যবস্থা, ভবনে গাড়ি পার্কিংসহ নানা বিষয়ের অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি এহসান খান বলেন, আমরা ড্যাপ প্রত্যাখ্যান করছি না। আমরা চাই এর ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করা হয়। সব মানুষের মতামতের ওপর ভিত্তিতে ড্যাপ প্রণয়ন করা হোক। তিনি আরও বলেন, ড্যাপে বলা হয়েছে ৫ একরের বেশি জমি থাকলে ইচ্ছেমতো উচ্চতায় ভবন নির্মাণ করতে পারবে। কিন্তু যার এ পরিমাণ জমি নেই তার ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন ৫ একর জমিতো আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের থাকে না। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বা বড় বড় কোম্পানিগুলোর এ পরিমাণ জমি থাকে। তাহলে রাজউক তো দ্বৈততা অনুসরণ করেছে। এটা তো হতে পারে না অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি জালাল আহমেদ, সাবেক সভাপতি কাজী গোলাম নাসির, আবু সাইদ এম আহমেদ, ইকবাল হাবিব, ফরিদা নিলুফার, মেরিনা তাবাসসুম, ইশতিয়াক জহির প্রমুখ। ড্যাপের জনঘনত্ব বিন্যাস পরিকল্পনাও যথাযথ হয়নি বলে মনে করে স্থপতি ইনস্টিটিউট। তাতে বলা হয়েছে, ড্যাপ ডকুমেন্টটি কীভাবে বিভিন্ন এলাকার ঘনত্বকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে না। এ সম্পর্কিত কারিগরি সমীক্ষা প্রকাশ করতে হবে এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া উচিত। ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকক, হংকংয়ের মতো বেশিরভাগ আধুনিক শহরে এফএআর প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রস্তাবিত ড্যাপ তার প্রভাবগুলোর বিশদ বিশ্লেষণ ছাড়াই উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করেছে। ড্যাপের ব্লক উন্নয়ন নিয়েও আপত্তি করেছেন স্থপতিরা। তারা জানিয়েছেন, ড্যাপের প্রস্তাব অনুযায়ী, পাঁচ একর বা তার অতিরিক্ত প্লটে ব্লক ডেভেলপমেন্টের কথা বলে সীমাহীন উচ্চতায় যত খুশি সংখ্যক আবাসিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন, জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের মূল চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবং এখানে অনেক বেশি কেসস্টাডি এবং সিমুলেশন মডেলিং করে তারপর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
×