ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শপিংমল থেকে ফুটপাথে শীতের কাপড়ের পসরা

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৪ নভেম্বর ২০২০

শপিংমল থেকে ফুটপাথে শীতের কাপড়ের পসরা

ওয়াজেদ হীরা ॥ অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ শেষ। রাতে হালকা ঠাণ্ডা অনুভূতিতে শীতের আভাস মিলছে। গ্রামে অনেক আগেই নেমেছে শীত। এখন শহরেও শীতের আভাস মিলছে। সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি এবং মেঘলা আকাশ থাকায় শহরে শীতের অনুভূতি বেড়েছে। এতে করে রাজধানীতে শীতবস্ত্রের পসরা সাজানো বিক্রেতাদের কিছুটা বিক্রিও বেড়েছে। করোনা ধাক্কা সামলে শীতকে কেন্দ্র করে দোকানদারা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন গরম কাপড়ের ব্যবসা নিয়ে। সামনের দিনগুলোতে জমজমাট বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তারা। মহামারীর মধ্যে এবার দুই ঈদ আর পূজায় ব্যবসা সেভাবে না হওয়ায় শীত সামনে রেখে আশায় বুক বাধছেন বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের গরম কাপড় খুব জরুরী। কেননা, ঈদ বা পূজায় নতুন পোশাক না কিনলেও চলে। কিন্তু শীতে গরম কাপড় না থাকলে কিনতেই হয়। এছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগার শঙ্কা যেমন আছে তেমনি শীতে ঠাণ্ডা থেকে মুক্ত থাকতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সবাই সচেতন। আর তাই অন্যবারের চেয়ে এবার বিক্রিও বেশ ভাল হবে এমন প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শপিংমল, বিভিন্ন বিপণিবিতান ও ফুটপাথে দেখা গেছে এখন কেবলই শীতের নানা ধরনের পোশাকের সমাহার। কেউ শীতের পোশাক বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবার কোথাও কিছুটা বিক্রিও শুরু হয়েছে। বিক্রেতাদের মতে, গত দু’তিন দিন শীতের হালকাভাব থাকায় কিছুটা বিক্রি থাকলেও শহরে জমজমাট বিক্রি আরও কদিন পর শুরু হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আবহাওয়ার তারতম্যে এবারও দেশে শীতের দেখা মিলছে কিছুটা দেরিতেই। বিশেষ করে শহর এলাকায় সেই অনুভূতি একেবারেই কম। তবে গ্রামে-গঞ্জে এখন বেশ শীত। রাতে প্রচণ্ড কুয়াশা পড়ছে। গ্রাম এলাকায় ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে স্বস্তি পেতে লেপ-কাঁথা- কম্বল গায়ে জড়াচ্ছে। তবে শহরে সেই শীতের অনুভূতি একেবারেই কম। কার্তিক পেরিয়ে গেলেও শহরে কুয়াশার দেখা মেলেনি। তবে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে হালকা শীতের অনুভূতি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানা গেছে, শুক্র-শনিবার আকাশ মেঘলা ছিল। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় হালকা বৃষ্টিও হয়েছে। তবে রবিবার থেকেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। সোমবার পুরোপুরি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে বেশ বৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই শীতের অনুভূতি পায় শহরের মানুষ। আর শীত মোকা বেলায় প্রস্তুতি হিসেবে দোকানে ভিড় জমাতে শুরু করে। নগরীর ফুটপাথগুলোতে সারাবছর ধরে যারা শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট বিক্রি করেন, তারাই এখন তুলেছেন রঙ-বেরঙের শীতের কাপড়। তাদের হাঁকডাকে পথচারীরাও নেড়েচেড়ে দেখছেন, বিক্রিও কিছু বেড়েছে। বিশেষ করে বড়দের জন্য না হলেও শিশুদের জন্য গরম কাপড় কেনার ভিড় দেখা গেছে গত দুদিন। আর শহুরে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তের একটা অংশ ভিড় জমিয়েছে ফুটপাথের গরম কাপড়ের দোকানে। এবারে শীতের আগমন উপলক্ষে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কিছুটা ব্যস্ততা তৈরি হয়েছে দোকানিদের মধ্যেও। রাজধানীর দোকান ও ফুটপাথে শুরু হয়ে গেছে শীতবস্ত্রের জমজমাট বেচাকেনা। বিক্রেতারা জানালেন, হালকা ও মাঝারি ধরনের গরম পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, ফার্মগেট জিপিও এলাকায় গরম কাপড় কেনাকাটার ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া বসুন্ধরা শপিংমল, আজিজ সুপার মার্কেট, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটে দেখা গেছে বিভিন্ন ডিজাইনের শীতবস্ত্র। বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের কম্বল, সোয়েটার, পায়ের মোজা, হাতমোজা, মাফলার বিক্রির দৃশ্য। বিক্রেতা জমির উদ্দিন বলেন, পাইকারি কেনাকাটা অনেক আগে শুরু হলেও শহরে তেমনভাবে শুরু হয়নি। মাঝে দুই/তিন দিন ঠাণ্ডাভাব থাকায় বিক্রিটা বেশ বেড়ে গিয়েছিল। সামনে এখন বিক্রি বাড়বেই, বলেন তিনি। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথে নিম্ন, মধ্যবিত্তের মানুষদের কেনাকাটা করতে দেখা যায়। জিপিও থেকে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মোজা আর ফুলহাতা গেঞ্জি কেনেন রহমত নামের এক বেসরকারী চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ঢাকায় শীতটা যেন হঠাৎই নেমে গেলো। গত বছরের শীতের কাপড় আমাদের লাগলেও বাচ্চাদের ছোট হয়ে গেছে। কিছু কিনলাম দরকার হলে আরও কিনব। বঙ্গবাজারের পাইকারি কাপড়ের ব্যবসায়ী হাসান মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের ব্যবসায়ীরা আরও পনেরো দিন আগে থেকে এসে শীতের মালামাল নিয়ে গেছেন। এখন ঢাকার আশপাশ থেকে আসে নয়ত খুচরা হিসেবে ঢাকার জন্য বিক্রি হচ্ছে। বায়তুল মোকাররমের সামনে কম্বল ব্যবসায়ী কুদ্দুস বলেন, বিভিন্ন দামের কম্বল আছে। কয়েকদিন ধরে বিক্রিও বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে বিক্রি হতো ১০/১৫টি কম্বল এখন সেখানে ৪০/৫০টি বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই শ’ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকার উপরে কম্বল আছে। ঢাকায় পাতলা কম্বলের চাহিদা বেশি, বলেন তিনি।
×