ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইমারীতেও অটো প্রমোশন, থাকছে একই রোল নম্বর

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৪ নভেম্বর ২০২০

প্রাইমারীতেও অটো প্রমোশন, থাকছে একই রোল নম্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে মাধ্যমিকের সকল শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হবে-এ কথা আগেই জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার একই ঘোষণা দিল প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। একই রোল নম্বর রেখে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরুর জন্য মাঠ পর্যায়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেছেন, স্ব স্ব ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে তুলতে বলা হয়েছে। একই তথ্য জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক বলেছেন, পড়ালেখা মূল্যায়ন করা হলেও তা পরের শ্রেণীতে ওঠার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্ব স্ব ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে তুলতে বলা হয়েছে। তবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে মূল্যায়ন ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে তোলা হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে যারা উঠবে তাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণীপাঠ প্রচার করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসার কাজ সম্পন্ন করছেন। টেলিফোনের মাধ্যমে অনেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহায়তা করছেন। এসবের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়নের মাধ্যমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে তোলা হবে। কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করবে সে বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার থেকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূল্যায়ন কাজ শুরু হবে। একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী ক্লাসের জন্য যতটুকু জ্ঞান থাকার দরকার তা আছে কি না, না থাকলে তাকে যা শিখতে হবে সে বিষয়ে শিক্ষকরা পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন। আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে এ কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। টিভি ও রেডিওতে সম্প্রচার হওয়া ক্লাস থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা রেডিও, টিভিসহ কোন মাধ্যমে পাঠদান নিতে পারেনি বা সিলেবাস শেষ করতে পারেনি তাদেরও পরবর্তী ক্লাসে তোলা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের এসব শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে জানুয়ারি থেকে যদি বিদ্যালয়ে শ্রেণী পাঠদান শুরু করতে পারি তবে, গত ছয় মাসের পিছিয়ে পড়া সিলেবাস পড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য নতুন সিলেবাসের সঙ্গে এক থেকে দেড় মাস পুরাতন সিলেবাস পড়ানো হবে। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার পরীক্ষা ছাড়াই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে পরের ক্লাসে তোলা হবে। বর্তমান শ্রেণীতে যার যে রোল নম্বর আছে, সেই রোল নম্বর নিয়েই পরের শ্রেণীতে উঠেবে তারা। তবে চলতি বছরের প্রথম আড়াই মাসের ক্লাস এবং কোভিড-১৯ এর সময় যেসব শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস হয়েছে। সেই সময় তাদের ক্লাস টেস্ট নেয়া হয়েছে, শিক্ষকরা পড়িয়েছেন, এখন সেসব মূল্যায়নে আনা হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মধ্যে সংসদ টেলিভিশন, বেতার, কমিউনিটি রেডিও এবং জুম প্লাটফর্মে যেসব শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে, সেগুলোও মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া ছুটির মধ্যেও অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়া দিয়ে পড়া আদায় করেছেন। সেসবও তারা মূল্যায়নে আনবেন। এর বাইরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, যার তথ্য-উপাত্ত শিক্ষকদের কাছে রয়েছে, সেসবও মূল্যায়নে আনা হবে। এসব বিষয় মূল্যায়ন করা হলেও তা পরের শ্রেণীতে ওঠার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে না। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপারিচালক বলেন, এবার আনুষ্ঠানিক কোন পরীক্ষা হচ্ছে না এটা মাথায় রেখেই মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আগের (এবারের) রোল নম্বরই ফলো করবেন, সবাই পরের ক্লাসে প্রমোশন পাবে। এর আগে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। মহামারী পরিস্থিতির ততটা উন্নতি না হওয়ায় এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছে না সরকার। উচ্চ মাধ্যমিকেও এবার চূড়ান্ত কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এইচএসসি ও সমমানের ফল ঘোষণা করা হবে শিক্ষার্থীদের অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে। পরীক্ষা নেয়া না গেলেও শিক্ষার্থীদের কোথায় দুর্বলতা তা বোঝার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সাপ্তাহিক এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ইতোমধ্যেই বলেছেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়েই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণীতে তোলা হবে। কোন পরীক্ষা নয়, এবারের যে পরিস্থিতি, কোন পরীক্ষা নয়। এবার কোন বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে ওঠার ক্ষেত্রে এ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়নের যে কোন প্রভাব থাকবে না, তা স্পষ্ট করে দীপু মনি বলেন, এই মূল্যায়নটার মাধ্যমে যেন কোন চাপ সৃষ্টি করা না হয়। এই মূল্যায়ন শুধুমাত্র আমাদের বোঝার জন্য যে শিক্ষার্থীদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, সেগুলো পরের ক্লাসে কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করব।
×