ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো ট্যাঙ্কে আর পানি দেয় না ওয়াসা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৪ নভেম্বর ২০২০

রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো ট্যাঙ্কে আর পানি দেয় না ওয়াসা

রশিদ মামুন ॥ দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে ঢাকা পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য পানির ট্যাঙ্ক বসিয়েছিল। সেখানে পানি এবং সাবানের ব্যবস্থা ছিল। রাস্তায় চলতে চলতে ক্লান্ত রিক্সাওয়ালাও মাঝে মধ্যে হাত ধোয়ার জন্য সেখানে থামত। কিন্তু এখন সেসব ট্যাঙ্কের সবই বেহাল দশা। ওয়াসা পানি তো দেয়ই না, থাকে না সাবান। বেশির ভাগেরই পানির কল ভেঙ্গে পড়ে আছে। রাস্তার ধুলোয় মাখামাখি চৌবাচ্চাগুলোর কারণে উল্টো শ্রী হারাচ্ছে ঢাকা। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এখনও ইবোলার সংক্রমণ রয়েছে। চলার পথে সেখানে এখনও এ ধরনের চৌবাচ্চা এবং সাবান থাকে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেখানে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তীব্র খাদ্যাভাব, শিক্ষার অনঅগ্রসরতা আর অর্থনীতির বেহাল দশার মধ্যেও প্রাণঘাতী ইবোলা প্রতিরোধে কালো মানুষের দেশগুলো হাত ধোয়ার অভ্যাসটা ঠিকই গড়ে তুলছে। সেই তুলনায় অগ্রসর ঢাকায় ওয়াসার এমন বেহাল অবস্থা কেন, জানতে যোগাযোগ করা হলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাসকিম এ খানকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সচিব হেলাল উদ্দিন জকণ্ঠকে বলেন, এগুলো শুরুতে ওয়াসা করেছিল এখন সব পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। আমরা আবার তাদের বলব এগুলো ঠিক করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে ইতোমধ্যে সকলকে সজাগ করেছেন। কিন্তু এতেও ঘুম ভাঙ্গেনি ঢাকা ওয়াসার। অনেক দিন থেকে এসব চৌবাচ্চা একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে কিন্তু করোনা প্রতিরোধে সরকারের কঠোর নির্দেশনার মধ্যেও ওয়াসা এসব পানির চৌবাচ্চাগুলো সংস্কার করেনি। শীতের শুরুতে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিনই অন্য দিনের তুলনায় যেমন বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তেমনি মৃত্যুও বাড়ছে। গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যান বলছে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বের কোন বিকল্প নেই। এ কথা এখন সবাই জেনে গেছে করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে হাত। আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি এবং নিশ^াসের সঙ্গে প্রোটিনের আবরণযুক্ত ভাইরাস কোন জায়গায় পড়ে থাকে। সেখান থেকে হাতের মাধ্যমে মানুষের নাক এবং মুখ দিয়ে অন্য মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে। এভাবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা করোনা প্রতিরোধে নাক মুখ ঢেকে রাখার সঙ্গে বার বার হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন। হাত ধোয়ার বিকল্পও রয়েছে। বার বার এ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু বাজারে সবচেয়ে কম দরের প্রতি ২৫০ মিলিলিটারের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দর ১৩০ টাকা। এই দামে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে স্যানিটাইজার কেনা খুব কঠিন বিষয়। সঙ্গত কারণে দেড় কোটি নগরবাসীর এই হাত ধোয়ার দায়িত্ব রাজধানীর পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তারাও সেই দায়িত্ব পালন করছে না। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ কমাতে মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। রাজধানীতে ম্যাজিস্ট্রেটরা মানুষকে মাস্ক পরার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। এজন্য গণহারে সাধারণ মানুষকে জরিমানাও করছে। মাস্ক না পরলে কঠোর শাস্তির কথাও বলা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। এজন্য জরিমানাও বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসা হাত ধোয়ার সব ব্যবস্থা যে বিকল করে রেখেছে তার জন্য জরিমানা করবে কে? রাজধানীর কাওরান বাজার, বাংলামোটর, প্রেসক্লাব, বায়তুল মোকাররামসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সব চৌবাচ্চার অবস্থায়ই করুণ। কত দিন ধরে এখানে ওয়াসা পানি দেয় না তাও কেউ জানে না। কাওরান বাজার মোড়ের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আকবর শেখ জানান, এভাবে অনেক দিন ধরেই ভেঙ্গে পড়ে আছে। এসব কেউ কোন দিন দেখতেও আসে না। পানি বা সাবান শুরুর দিকে কয়েক দিন দিলেও পরে আর এগুলো দেয়া হয় না।
×