ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মনির ২৫ এ্যাকাউন্টে ৯৩০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৪ নভেম্বর ২০২০

মনির ২৫ এ্যাকাউন্টে ৯৩০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২৫ এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন করেছে গোল্ডেন মনির। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং ৫১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে গোল্ডেন মনির। অথচ গত অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া গত অর্থবছরে গোল্ডেন মনিরের বার্ষিক আয় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। রিমান্ডের প্রথমদিনেই জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এদিকে মনির গ্রেফতার হওয়ায় রাঘববোয়ালরা চরম আতঙ্কে পড়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনিরের চার সহযোগীকে শনাক্ত করার পর তাদের বাসাবাড়ি ও অফিস নজরদারিতে রেখেছে। বাড্ডার সাবেক কমিশনার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কাইয়ুমের সমস্ত সম্পত্তি দেখভাল করার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই গোয়েন্দারা এসব তথ্য পেয়ে যায়। পুলিশের সূত্রমতে- মনির বাড্ডার সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের সম্পত্তি ও ব্যবসার দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এ নিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে তার নাম উঠে আসে। কাইযুমের অনুপস্থিতিতে মূলত মনিরই সব দেখাশোনা করা এমনকি বিদেশে টাকা পাঠানোর মতো গুরুদায়িত্ব পালন করত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনেই এসব তথ্য প্রকাশ করেন তিনি। পুলিশ আরও নিশ্চিত হয়েছে-২০০১ থেকে ২০০৬ সালে মনির বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এবং তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর তাদের ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলেন। জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২০২টি প্লট ও জমি দখল করে নেয় গোল্ডেন মনির। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরেও বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার করেছে গোল্ডেন মনির। সূত্রমতে- মনিরের অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদকসহ একাধিক সংস্থা। এতে তার সহযোগী রাঘব বোয়ালরা বেশ আতঙ্কে রয়েছে। মনিরের দুই সহযোগী শনিবার থেকেই লাপাত্তা। তাদের স্বজনদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে বাড্ডা থানার পুলিশ। এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে- মনির হোসেন একদিনে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠেনি। সে মূলত একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ছিল। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া তার সহযোগীদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের যেকোন সময় পাকড়াও করা হতে পারে। জানা গেছে- উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ১৩ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের অংশীদারি চার মালিকের মধ্যে একজন গোল্ডেন মনির। এক মাস আগে এই জমজম টাওয়ারের মালিকানা বাকি অংশীদারদের কাছে ৬০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি। এছাড়া উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে সাফা টাওয়ারের মালিক গোল্ডেন মনির। তবে টাওয়ারটি নির্মাণাধীন। বারিধারায় রয়েছে তার আলিশান অফিস কার্যালয়। অটোকার সিলেকশন নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে তার। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে উমা জুয়েলার্স নামে একটি জুয়েলারি দোকান রয়েছে তার। রাজউকের পূর্বাচলে, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে, নিকুঞ্জে, উত্তরায় এবং কেরানীগঞ্জে রয়েছে ২০২টি প্লট ও জমি। এর মধ্যে শুধু মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে রয়েছে ৩৯টি প্লট ও বাড়ি। এদিকে ভূমি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে একটি জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়- রাজউকের ৭০টি প্লটের নথি নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে হেফাজতে রেখেছেন গোল্ডেন মনির। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। এছাড়া জালিয়াতি ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করায় মনিরের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনে চলমান রয়েছে। ২০০৭ সালের দিকে চোরাচালানের দায়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত শনিবার রাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টে তার নিজ বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণ, অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ ও ১০টি দেশের বিদেশী মুদ্রাসহ গ্রেফতারের পর বাড্ডা থানায় মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদী হয়ে অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছে। মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ডের প্রথমদিনেই তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
×