ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০২০

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ডিসেম্বরের মাঝামাঝি চট্টগ্রামে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলে দ্বিতীয় টিউব প্রতিস্থাপনের জোর তৎপরতা চলছে। ইতোমধ্যে এই টানেলের প্রথম টিউবের খনন কাজ বোরিং মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউব সংবলিত তিন দশমিক চার কিলোমিটার নদীর তলদেশ দিয়ে এশিয়ার প্রথম এই টানেলের নির্মাণ কাজ চলছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অর্থাৎ আনোয়ারা উপজেলা পর্যন্ত দুই হাজার ৪৫০ মিটারের প্রথম টিউব টানেলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই টানেল নির্মাণের মহাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ সোমবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি দ্বিতীয় টিউবের প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পিডি হারুনুর রশিদ জানান, প্রস্তাবিত টানেলটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। টানেলটির প্রধান অংশ হবে তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার। যা মোট দৈর্ঘ্যরে মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি এই প্রকল্পের ৭৪০ মিটার সেতুর পাশে চার দশমিক ৮৯ কিমি সড়কও নির্মিত হচ্ছে। তিনি জানান, এই প্রকল্পে শীর্ষ স্থানীয়সহ অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চীনা নাগরিক। করোনার কারণে ভ্রমণ স্থগিত থাকায় কিছু বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তার আসা যাওয়া বিলম্বিত হয়েছে। এরপরও একদিনের জন্যও এই প্রকল্পের কাজ থেমে থাকেনি। এটা এই প্রকল্পের বড় সাফল্য। তিনি আরও জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ চীনের জিয়াংসু প্রদেশে ঝেনজিয়াং নগরীতে ১৯ হাজার ৬১৬ সেগমেন্টের মধ্যে ১৭ হাজার ৭২৬টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি অংশ প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, চীনের সাংহাই শহরের আদলে এই টানেলটি যখন চালু হবে, তখন বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ এ পরিণত হবে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যানবাহন মেরিন ড্রাইভ হয়ে এই টানেলের মাধ্যমে আনোয়ারা ও পটিয়া হয়ে আরাকান সড়কে উঠবে। ফলে যান চলাচলে সময় কম লাগবে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে। টানেল বোরিং মেশিনটি (টিবিএম) ৯৪ মিটার দীর্ঘ। এর ওজন ২২ হাজার টন। এখন টিবিএমটি ইউটার্ন করার কাজ চলছে। এতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় টিউবের প্রতিস্থাপনের কাজ। চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের কানেক্টিভিটিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন টানেলের বোরিং কাজ।
×