ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ ২৮ বাড়ির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০২০

কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ ২৮ বাড়ির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত কানাডায় বেগমপাড়া নিয়ে মুখ খুলেছে দুদক। এ বিষয়ে সরকারের কাছে কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ সরকারী কর্মকর্তাদের বাড়ির তালিকা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন দুদক সচিব দিলওয়ার বখত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কানাডার বেগমপাড়ায় সরকারী কর্মকর্তাদের ২৮টি বাড়ির বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আমরা তালিকা চেয়েছি সরকারের কাছে। এ বিষয়ে আমাদের চেয়ারম্যান কথা বলেছেন। আমরা এই তালিকা খুঁজছি, তালিকা পাওয়া গেলে আমরা কাজ শুরু করব। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মোট ৫১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগপত্র গতকাল সোমবার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে তার ৪২ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, শীঘ্রই এই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। এ বিষয়ে দুদকের সিনিয়ার সচিব মুহাম্মদ দিলওয়ার বখ্ত বলেন, ক্যাসিনো কারবারে সম্পৃক্ততা ও বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে খালেদের বিরুদ্ধে ৫১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্র্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে গত বছরের ২১ অক্টোবর মামলা করে কমিশন। মামলাটি তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত তথ্য সংগ্রহ করেন। খালেদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত করেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। কানাডার বহুল আলোচিত বেগমপাড়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, আমাদের চেয়ারম্যানসহ কমিশন বিষয়টি অবগত আছে। বিভিন্ন দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিনিয়োগ কৌটায় বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়া ব্যক্তিদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য উপাত্ত পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসামি খালেদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় একটি ব্যাংকে ২০১৮ সালে প্রায় ১১ লাখ রিঙ্গিত জমা হয়। যা বাংলাদেশী টাকায় সোয়া ২ কোটি টাকা। তার নামে মালয়েশিয়ার অপর একটি ব্যাংকে সাড়ে ১১ লাখ রিঙ্গিত বা আড়াই কোটি টাকা জমা দেয়। এফডিআর হিসেবে জমা হয় তিন লাখ রিঙ্গিত বা ২০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এভাবে তিনি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকে ৮ কোটি ৭২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা জমা হয়েছে। যা তিনি বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছেন মর্মে প্রতিয়মান হয়। কমিশনের তদন্তকালে তার নামে ৪২ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন অভিযোগ এবং ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার অবৈধ প্রক্রিয়া বিদেশে পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়Ñ যা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন প্রভাবশালীদের গ্রেফতার হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল এতে নেতৃত্বে সাত সদস্যের দল ক্যাসিনো বিরোধী অভিযোগ তদন্ত করে। উল্লেখ্য, কানাডার বেগমপাড়ায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চেয়ে সরকারী আমলারাই বেশি বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেন। তার এ বক্তব্যে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে তোলপাড় দেখা দেয়। মূলত এর পরই দুদকও আনুষ্ঠানিকভাবে বেগমপাড়া নিয়ে প্রথমবারের মতো ব্যক্তব নিয়ে এগিয়ে আসে। দুদক এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন সচিব দিলওয়ার বখত।
×