ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় নাব্য সঙ্কট

গাইবান্ধায় হুমকিতে নৌ চলাচল

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২৪ নভেম্বর ২০২০

গাইবান্ধায় হুমকিতে নৌ চলাচল

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাসহ গাইবান্ধার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সব নদ-নদীর পানি অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহেই কমে সেগুলো শাখা-প্রশাখায় ভাগ হয়ে শীর্ণকায় রূপ নিয়েছে। আকস্মিক পানি শূন্যতায় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা নৌঘাটগুলোর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। ইতোমধ্যে অনেক নৌঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব নৌঘাট এখনও কোন রকমে টিকে রয়েছে তারও এখন বেহাল দশা। চ্যানেলের অভাবে নৌযান কমে গেছে অর্ধেকের বেশি। যে কোন সময় নৌ চলাচল স¤পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মূলত পানি সঙ্কটের কারণে নৌ যোগাযোগ এখন হুমকির মুখে। যেসব রুটে এখনও যান্ত্রিক নৌকা চলছে তাও জেগে ওঠা চরের কারণে ঘুরপথে চলাচল করতে হচ্ছে বলে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে দ্বিগুণের বেশি। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনাসহ ছোটবড় সব নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করে। অব্যাহত পানি হ্রাসের ফলে নদীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এ তিনটি নদীর পানি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়। বড় বড় চর জেগে উঠেছে নদীর বুকে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ নদীতে নাব্য থাকার সময় স্বাভাবিকভাবে নৌকায় চলাচল করত। এখন নদীবুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চর এবং শীর্ণকায় শাখাগুলো হেঁটে গন্তব্যস্থলে তাদের পৌঁছতে হয়। এদিকে নদীগুলো নাব্য হারানোর ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক রুটে যান্ত্রিক নৌকা চলাচল করতে পারছে না। ব্রহ্মপুত্রে সবচেয়ে বড় ঘাট হচ্ছে বালাসী নৌঘাট। এর পরও এই ঘাট এলাকায় নদী পাড় থেকে ১২টি রুটে যাত্রবাহী যান্ত্রিক নৌকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অথচ আগে ৩০টি রুটে এখান থেকে অবাধে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করত। বর্তমানে এ ঘাট থেকে যেসব রুটে নৌ চলাচল করছে তা হচ্ছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও কর্তীমারী, সদর উপজেলার মোল্লার চর, কুন্দেরপাড়া ও পারদিয়ারা, ফুলছড়ির সানন্দবাড়ী, ফুটানী বাজার, জিগাবাড়ী, হরিচণ্ডি, খোলাবাড়ী, খাটিয়ামারী এবং জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, গুঠাইল ও দেওয়ানগঞ্জ। আগে যেখানে একেক রুটে ৪টি করে নৌকা চলাচল করত এখন সেখানে মাত্র দুটি করে নৌকা চলাচল করছে। সাবেক ফুলছড়ি উপজেলা হেডকোর্য়ার্টার থেকে আগে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদসহ ফুলছড়ি উপজেলার গলনা, ফজলুপুর, খাটিয়ামারী, পিপুলিয়া, গাবগাছি, দেলুয়াবাড়ী, জিগাবাড়ী, ভাজন ডাঙ্গা, জিয়াডাঙ্গা প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ রুটে ২০টি নৌকা প্রতিদিন যাতায়াত করত। এখন সেখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬টির বেশি নৌকা চলাচল করছে না বলে জানা গেছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও জামালপুরের ১২টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে নদীগুলো আরও ভরাট হয়ে যাবে এবং নাব্য সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র বা অন্য নদী ড্রেজিংয়ের এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে দেশের নদীগুলো ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে আনার সরকারের একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
×