ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে আমন খেতে পোকার আক্রমণ ॥ দিশাহারা কৃষক

প্রকাশিত: ২১:৩০, ২৪ নভেম্বর ২০২০

বাগেরহাটে আমন খেতে পোকার আক্রমণ ॥ দিশাহারা কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে আমনের খেতে কারেন্ট পোকা, লেদা পোকা ও বাদামি গাছ ফড়িং পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জেলার শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পোকার উপদ্রব অপেক্ষাকৃত বেশি। একের পর এক দুর্যোগ মোকাবেলা করে ফসল ঘরে তোলার মুহূর্তে পোকার আক্রমণে চাষীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন বিবর্ণ হতে বসেছে। দিশাহারা অনেক কৃষক পোকা দমনে ছোটাছুটি করছেন। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক অভিযোগ করেছেন। সোমবার বিকেলে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জয় দাস জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৭৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। মৎস্য ঘেরের কারণে এ অঞ্চলে কিছুটা দেরিতে আমনের চাষ হয়, তাই ফসল কেটে ঘরে তুলতে একটু বিলম্ব হয়। এ অবস্থায় হঠাৎ করে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ব্লকে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তীব্র লোকবল সঙ্কট সত্ত্বেও পোকা-মাকড় দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি নিজে গত ৩ দিনে একাধিকবার সরেজমিনে ওই এলাকায় মাঠ পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে বলেন, মাঠপর্যায়ে পাওয়ার স্প্রে, ওষুধ, প্রচারপত্র বিতরণসহ সর্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। তাছাড়া বাজারে উন্নতমানের ওষুধ পর্যাপ্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলায় ২২৮ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদ থাকলেও আছে মাত্র ১১৬ জন। মোরেলগঞ্জে ৫১ টি ব্লকে ৫১ জনের স্থলে আছেন মাত্র ১২ জন। আর শরণখোলা উপজেলায় ২১ জনের স্থলে আছেন ৭ জন। ফলে তীব্র লোকবল সঙ্কটের কারণে শত চেষ্টা করেও অনেক সময় সকল কৃষকের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এরপরেও জরুরী ভিত্তিতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। রবি ও সোমবার শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমনের মাঠ ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় হাপিত্যেশ করতে দেখা গেছে। রায়েন্দা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম জানান, গাছে শীষ আসার পর পরই ছোট ছোট পোকায় গাছের রস খেয়ে ফেলে। গোড়া পচে গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ছে। এতে সমস্ত ধান চিটা হয়ে গেছে। এছাড়া, ধান যখন সোনালি বর্ণ হতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই আবার লেদা পোকার উপদ্রব দেখা দেয়। লেদা পোকায় সমস্ত শীষ কেটে ফেলছে। উত্তর কদমতলা গ্রামের চাষী বাদশা আকন জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। তার সমস্ত ফসলেই কারেন্ট ও লেদা পোকায় আক্রমণ করেছে। সমস্ত ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন আগেই বাধ্য হয়ে এখন কাচা ধান কাটতে হচ্ছে তাকে। আদর্শ চাষী হিসেবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কয়েকবার পুরস্কারপ্রাপ্ত পশ্চিম কদমতলা গ্রামের চাষী আবদুল হালিম আকন বলেন, মাঠের সমস্ত ফসল পোকায় ধ্বংস করে ফেলছে, অথচ কৃষি বিভাগের কোন লোক এখন পর্যন্ত খোঁজ নেয়নি। অফিসে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়না। আমরা ফসল রক্ষায় সঠিক পরামর্শ পাচ্ছি না। শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসীম উদ্দিন বলেন, আমিসহ আমার মাঠ কর্মকর্তারা সর্বক্ষণিক তদারকিতে রয়েছি। পোকা দমনে পরার্শ দেয়ার পাশাপাশি করণীয় বিষয়ে লিফলেট ও এলাকায় মাইকিং করে চাষীদের সতর্ক করা হচ্ছে। এই উপজেলা এ বছর পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী জাতের এবং চার হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ১৪ হাজারের বেশি চাষী এই ফসল চাষাবাদ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×