ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বাণিজ্যমেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ২১:২২, ২৪ নভেম্বর ২০২০

এবার বাণিজ্যমেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সারাবিশ্বেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। প্রতিবছর জানুয়ারিতে হলেও এবার পহেলা বৈশাখে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। তবে বর্তমান মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি বছর বাণিজ্য মেলা হবে কি-না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। নামে ‘আন্তর্জাতিক’ হলেও বাস্তবে সেই রূপ দিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালীর বাগরাইয়াটেকে (পূর্বাচলে) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ প্রকল্পটি। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়াচ্ছে প্রকল্পটি। তবে এটি আদৌ আন্তর্জাতিকমানের হবে কি-না, হলেও কবে হবে তা নিয়ে সবই অনিশ্চিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, এবার বাণিজ্য মেলা হবে কি-না, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভাল নয়। তবে মেলা হলে রূপগঞ্জেই হবে। মূল হল রুম অনেক আগেই দাঁড়িয়ে গেছে। বাকি টুকটাক কাজও হয়ে যাবে। তবে এটাকে ন্যূনতম আন্তর্জাতিকমানের করতে চাইলে আরও কিছু সংযোজন করতে হবে। সেটার জন্য আরও সময় লাগবে। কিন্তু সেই সংযোজন করা হবে কি-না, সেটা আমি বলতে পারব না। তিনি বলেন, কথা হলো, এটাকে আমরা কী বানাতে চাই, সেটা বড় জিনিস। সেটাই এখনও আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কারণ আন্তর্জাতিকমানের একটা বিজনেস হাব হবে বাংলাদেশে; তার জন্য পার্কিং, আবাসিক ব্যবস্থা, এক্সিবিশন হলসহ কত কিছু লাগবে। এগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রেজাউল করিম আরও বলেন, এখানে কর্তৃপক্ষ কী বানাতে চায়, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করছে। কর্তৃপক্ষ যদি বলে যেটা হয়েছে, এখানেই আমরা মেলা করব, তাহলে আর কিছু লাগবে না। এখন কর্তৃপক্ষ এটাকে যদি আন্তর্জাতিকভাবে খুব আকর্ষণীয় করতে চায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের এখানে টানতে চায়, তাহলে অনেক কিছু যোগ করতে হবে। তবে সেগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এটাকে সত্যিকারার্থে ভাল কিছু করতে চাইলে অনেক কিছু যোগ করতে হবে। ২০ বছর না লাগলেও কমপক্ষে পাঁচ বছর তো লাগবেই। দুবাই এক্সিবিশন সেন্টার ১৯৭৮ সালে তৈরি হয়েছে, সেটার কাজ কিন্তু এখনও চলে। তারা সেখানে ৬০ তলা হোটেল বানিয়েছে। প্রথমে হোটেল উল্লেখ ছিল না। দিল্লীর প্রগতি ময়দান হয়েছে ৫০ বছর আগে, সেটার এখনও সংযোজন চলছে। এটা নির্ভর করে কর্তৃপক্ষ বা সরকার কী চান বা তাদের কী পরিকল্পনা, তার ওপর। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোয় (ইপিবি) গত ১ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারপার্সন এ এইচ এস আহসানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেছিলেন, এক্সিবিশন সেন্টারটি ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডের মোড় থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে ঢাকা থেকে পূর্বাচলের এক্সিবিশন সেন্টারে সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। সেখানকার রাস্তাগুলোও ভাল অবস্থায় নেই। সেন্টারের পাশ দিয়ে যে ঢাকা বাইপাস রাস্তা গেছে, তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন এবং এক্সিবিশন সেন্টার সংলগ্ন অন্যান্য ফিডার রাস্তা রাজউকের। সেখানে বাণিজ্য মেলাসহ অন্যান্য বাণিজ্য প্রদর্শনী করতে হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) মাধ্যমে বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তা না হলে সেখানে সব শ্রেণীর স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও মেলা সফলভাবে আয়োজনে দুরূহ হবে। এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজের দিকে যে রাস্তা গেছে, এ রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। এটা রাজউকই করাচ্ছে সেনাবাহিনীকে দিয়ে। রাস্তাটা খারাপ। রাস্তা প্রশস্ত করছে। কেটেকুটে ব্রিজ বানাচ্ছে। চলাচলে সমস্যা। রাস্তা যারা করছে, তারা কতটুকু শেষ করতে পারবে, সেটা আমি জানি না। কিন্তু মেলার স্পট ভাল আছে। পিআইসি সভা সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের জন্য দুই পর্যায়ে বরাদ্দ করা ২৬ দশমিক ১০ একর জায়গার মূল্য বাবদ মোট ১৬৫ কোটি ১৬ লাখ পাঁচ হাজার টাকা রাজউককে ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ করা ২৬ দশমিক ১০ একর জমির লিজ দলিল রাজউক রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছে না। ২৬ দশমিক ১০ একর জমির মধ্যে ২০ একর জমি রাজউকের মাস্টার প্ল্যানে এই প্রকল্পের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বরাদ্দের অবশিষ্ট জমি রাজউকের বর্তমান মাস্টার প্ল্যানে এই প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত বলে উল্লেখ নেই। ওই সভায় প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছিলেন, চীনের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক হাজার কেভিএ ক্ষমতাবিশিষ্ট অস্থায়ী ইলেক্ট্রিক ট্রান্সফর্মার ২০ একর জমির সীমানার মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল। এই ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে ডেসকো ও বিদ্যুত পরিদর্শক অফিসের ব্যয়সহ প্রায় ৭৩ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের পাওয়ার হাউজে পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার স্থায়ী বিদ্যুত লাইনের সংযোগ স্থাপন করায় সেই এক হাজার কেভিএ পাওয়ারের কার্যকারিতা বর্তমানে নেই। সেটার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চীনের সংশ্লিষ্ট পক্ষ এই অস্থায়ী ট্রান্সফর্র্মার প্রকল্প স্থান থেকে অপসারণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। সে জায়গায় চীনা পক্ষ অন্য কাজ করবে। এ অবস্থায় তা এই স্থান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা যেতে পারে কিংবা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা যেতে পারে। তখন সভায় উপস্থিত ডেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ট্রান্সফর্মারটি বিক্রি না করে আপাতত প্রকল্পস্থানে সংরক্ষণ করলে তা প্রকল্পের নতুন অবকাঠামো নির্মাণের সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রান্সফর্র্মারটি সেখান থেকে সরিয়ে আমাদের জায়গায় রেখে দিয়েছি। এ প্রকল্পে আরও অনেক কাজ আছে। ভবিষ্যতে লাগলে সেটা আবার কাজে লাগানো হবে। ওটা আমাদের কাছেই আছে। ঘর বানিয়ে নিরাপদে ওটা রেখে দিয়েছি। ওটা বিক্রির পরিকল্পনা নেই।
×