ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৪ নভেম্বর ২০২০

ঢাকার দিনরাত

করোনায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা হচ্ছে না, মাস্ক পকেটে থাকলেও মুখে উঠছে না। এই পরিস্থিতিতে শনিবার ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ঢাকার পাঁচটি উপজেলা এবং মহানগরের ফার্মগেট, হাতিরঝিল, লালবাগ কেল্লার মোড়, বনানী ক্রসিং, বংশাল, নয়াবাজার, খিলক্ষেতসহ মোট আটটি স্পটে জেলা প্রশাসনের ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য সচেতনতা বাড়ানো ও মাইকিং করা হয়। এ সময় গরিব/অভাবি লোকদের মধ্যে মোট এক হাজার মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। বহুজনকে জরিমানাও করা হয়। বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের জন্য প্রশাসন অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। কিন্তু এখানে সুস্পষ্টভাবে দুটি বিষয়ের উল্লেখ করতে চাই। এক. গণমাধ্যম ও কাঁচাবাজার- এই দুটি স্থানেই বেশি জনসমাগম হচ্ছে। বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় কিভাবে রাখা হবে? এ জন্য জনসচেতনতাই বেশি জরুরী। সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রশাসন কী ভূমিকা রাখছে। আর বাস-মিনিবাসে যে গাদাগাদি করে লোক ওঠানো থামছে না, করোনার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় কেন? প্রতি রুটে একটি করে কোম্পানির এমন অনিয়ম হাতেনাতে ধরে বড় ধরনের শাস্তি প্রদান করলে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়। আরেকটি বিষয়ও খুব দরকারি। এখনও মানুষ করোনা টেস্ট করানোর পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছে না। স্বল্পমূল্যে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য ঢাকা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি একটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র খোলা হয় তবে ঢাকাবাসী সহজেই করোনা পরীক্ষা করাতে পারবেন। মানুষকে জরিমানা করা সহজ, মানুষের সত্যিকার উপকারে আসা একটু কঠিন। সেই কঠিন কাজই এবার করা চাই। সাধারণ মানুষ সেটাই প্রত্যাশা করে। ফুটপাথের রাজাধিরাজ পেভমেন্টটি ভিআইপিই বলা যায়। উত্তরে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের জাহাঙ্গীর গেট। দক্ষিণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পূর্ব-পশ্চিমে বিমানবাহিনীর এলাকা। ফুটপাথের ওপর পা ছড়িয়ে বসে যিনি নিজের জগতের অধীশ্বর হিসেবে সুখে রোদ পোহাচ্ছেন আর শিশুদের মতোই হাবিজাবি নিয়ে খেলছেন তিনি যে একজন মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি, তাতে কোন সংশয় দেখি না। তার থাকার কথা ছিল মানসিক হাসপাতালে। কিংবা নিকটজনদের সেবাযত্নে। হয়ত নিকটজনেরা থেকেও নেই। আর দুস্থদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য কি প্রস্তুত ও আগ্রহী হয়ে আছে ঢাকার কোন মানসিক হাসপাতাল। সেদিন কাগজে মানসিক হাসপাতাল নিয়ে প্রতিবেদন পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমিই হয়ত মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করব এসব অসুস্থতার কথা জেনে। ঢাকায় অনুমোদিত বেসরকারী মানসিক হাসপাতাল ১৫টি। অধিকাংশেই শর্তানুযায়ী চিকিৎসক ও নার্স নেই। দেশে মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র ২৭০ জন। অথচ পরিসংখ্যান বলে দেশের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষের কোন না কোন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নেই। রয়েছে অবকাঠামো সঙ্কট। সরকারী বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে দুটি, ঢাকা ও পাবনায়। সেখানেও নানা সমস্যা। বেসরকারী খাতের অবস্থা আরও শোচনীয়। তারা সরকারের কোন শর্ত মানে না। মারধর তাদের অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানসিক চিকিৎসা ও মাদকাসক্তির চিকিৎসাকে তারা এক করে ফেলেছে। এক বছর আগে প্রকাশিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ অনুযায়ী, দেশের দুই কোটির বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। শতকরা হিসেবে তা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ইনস্টিটিউটের হিসাবে, দেশের সাড়ে ১৬ কোটির বেশি মানুষের জন্য এই মুহূর্তে মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন ২৭০ জন। আর কাউন্সিলিংয়ের জন্য সাইকোলজিস্ট রয়েছেন মাত্র ২৫০ জন। ভয়ঙ্কর অসুস্থ এক আকর্ষণ আমাদের শহরে গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানী তৎপরতায় পাকড়াও এক সহকারী ডোমের কীর্তিকলাপ নিয়ে মুখরোচক ও ভয়ঙ্কর গালগপ্পো চলবে কিছুদিন। কিন্তু মৃত নারীর সঙ্গে যৌনাচারের ঘটনা কি এই প্রথম ঘটল বঙ্গদেশে? এই নেক্রোফিলিয়া নামের মানসিক ব্যাধিগ্রস্তদের নিয়ে নাটক-নভেল কম হয়নি। কিছুকাল আগেও হরোরের রসায়নে নির্মিত এমন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য শট কার্টস’ বিপুল দর্শক পায়। বিস্ময়করভাবে বাংলা সাহিত্যে এমন একটি ঘটনার প্রথম বয়ান পেয়েছিলাম জীবনানন্দ দাশের মাল্যবান উপন্যাসে। যে গল্পের মূল থিম জটিল দাম্পত্য সম্পর্ক এবং স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব (দুজন থাকেন দুই ফ্লোরে), তাতে দুজনের শারীরিকভাবে জেগে ওঠার নেপথ্যে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সদ্যমৃতার প্রতি এক পুরুষের অদম্য আকর্ষণের কথিত কাহিনী! বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও জীবনানন্দের কোন আলোচকই এটির উল্লেখ পর্যন্ত করেননি। পৌনে এক শ’ বছর আগে লেখা উপন্যাসে নেক্রোফিলিয়ার উদাহরণ যদি থেকে থাকে তাহলে সন্দেহাতীতভাবেই বলা চলে যে এটি বঙ্গসমাজে অতীতকাল থেকেই বহাল ছিল। উপন্যাসের ওই অংশ থেকে অল্প উদ্ধৃতি দেয়া যাক। (স্বামী মাল্যবানকে স্ত্রী উৎপলা বলছেন:) ‘আমি শুনেছি, একজন খুব রূপসী কুড়ি-একুশ বছর বয়সেই সুস্থ শরীরে হঠাৎ কেন যেন মারা গেল। বিকেল বেলাতে তাকে মাটি দেয়া হলো। তারপর সবাই চলে গেল যে যার গাঁয়ে। সেখানে আট-দশ মাইলের মধ্যে জনমানব কেউ ছিল না। সন্ধ্যার পরেই একটা লোক এসে মাটি সরিয়ে সেই মৃতকে চুরি করে নিয়ে গেল। কেন নিল, বল তো?’ ‘কুড়ি-একুশ বছরের মেয়ে মানুষ?’ ‘হ্যাঁ বেশ সুন্দরী ছিল। বেশ সোমত্ত; শবটাকে মাটি খুঁড়ে বের করার পরও গা ফুটে রূপ বেরুচ্ছে; আর গতরের সে কী পুষ্টতা।’ ‘এইজন্যই চুরি করা হয়েছিল- ’ মাল্যবান বললে। মাল্যবানকে খুব বেশি জাগিয়ে দিয়েছে উৎপলা। কথায় কথায় নিজেও খুব বেশি জেগে পড়েছে আজ। নিচের ঘরে আর যেতে দেয়া হলো না মাল্যবানকে আজ রাতে। এ-রাতটা মাল্যবান আর উৎপলার বেশ নিবিড়ভাবেই কাটল। সমস্ত রাত- সমস্তটা শীতের রাত। প্রথমবার পড়ার সময় রীতিমতো গা গুলিয়ে উঠেছিল। মৃত নারীর সঙ্গে জীবিত পুরুষ সক্রিয় হবে, সেটির গল্প শুনিয়ে ও শুনে শীতল দাম্পত্য সম্পর্কের দুই নরনারী উত্তপ্ত হয়ে উঠল! এটি কি মানসিক সুস্থতার লক্ষণ? অবশ্য প্রাণী জগতে মানুষ তো আনপ্রেডিক্টেবল এক সৃষ্টি। তার আচরণ ও কার্যকলাপ কত বিচিত্র হতে পারে সর্বকালেই তার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত মিলছে। সকরুণ করোনাকালে বিপন্ন লোকের পাশে না দাঁড়াক, তাকে মহাঝুঁকির ভেতর ফেলে দিয়ে নিজের পকেট ফোলানো নারী-পুরুষের উদাহরণও আমরা নিত্য পেয়ে চলেছি। সে যাক, গত বছর টিভির বিশ্বসাহিত্য অনুষ্ঠানের একটি পর্বে মার্কিন লেখক উইলিয়াম ফকনারকে অন্তর্ভুক্ত করার সময় তাঁর ‘আ রোজ ফর এমিলি’ কাহিনী নিয়ে নির্মিত সিনেমার দৃশ্য দেখাই বাংলা টেলপে। গল্পের কেন্দ্রীয় নারীচরিত্র এমিলিকে আমার নেক্রোফিলিয়াগ্রস্ত মনে হয়নি, ওটি বিলক্ষণ ভিন্ন মনোস্তত্ত্ব। সে প্রেমিককে খুন করে তার রাত্রিবাসের শয্যাতেই রেখে দেয়। এমিলির মৃত্যুর পরেই আবিষ্কার হয় প্রেমিকের কঙ্কাল। নেক্রোফিলিয়া রোগীদের ভেতর এক শতাংশ মাত্র নারী। তাছাড়া জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কেসও খুব বেশি নয়। অনেকেরই মনে থাকতে পারে বছর ছয়েক আগে ঢাকার এই সহকারী ডোমের মতোই মার্কিন মুল্লুকের এক মর্গেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। কেনেথ ডগলাস নামের মর্গ রক্ষক শতাধিক মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন মর্মে সংবাদ বেরিয়েছিল। ২০১৫ সালে আমাদের হাইকোর্ট নারীর অপমৃত্যু সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়, কোন নারীর অপমৃত্যু হলে পরীক্ষা করে দেখতে হবে অপমৃত্যুর আগে কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা। তারপর থেকেই সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব আদালতের নির্দেশ মান্য করে আসছে। গত ১০ নবেম্বর সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের বিশ্লেষকরা নড়েচড়ে বসেন। কোডেক্স নামের যে সফটওয়্যারে ড্যাটা বিশ্লেষণ করা হয় সেটি সঙ্কেত দেয় যে ৫টি মৃতদেহে অভিন্ন ব্যক্তির ডিএনএ (শুক্রাণু থেকে) পাওয়া গেছে। পাঁচ ভিক্টিমই কিশোরী। ময়নাতদন্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। এরপর তাদের সন্দেহ দানা বাঁধে সংশ্লিষ্ট মর্গকে ঘিরে। অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি জানতে পারে হাসপাতালের মর্গের মূল ডোমকে সহায়তাকারীদের মধ্যে একজন মর্গের পাশেই একটি কক্ষে থাকে। তাকেই সন্দেহ করা হয়। কৌশলে তার খাওয়া সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার পর ডিএনএর সঙ্গে মিলে যায় কিশোরীদের দেহে পাওয়া ডিএনএর। ফলে সহজেই শনাক্ত করা হয় অঘটনপটিয়সীকে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের গ্রীক দার্শনিক, যাকে ইতিহাসের জনকও বলা হয়, সেই হিরোডোটাসের লেখায় মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সঙ্গমের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া গেছে বলে অন্তর্জালে দেখলাম। প্রাচীন মিসরেও মমি করার আগে বিশিষ্ট মহিলাদের মরদেহ পাহারায় রাখা হতো যাতে যৌনতার জন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে। এছাড়াও এককালে পেরুতে মনে করা হতো মৃতের সঙ্গে রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পরস্পরের আত্মার সংযোগ স্থাপিত হয়। বিচিত্র ব্যাপার বটে! বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত মৃতদেহের প্রতি ভয়ঙ্কর অসুস্থ আকর্ষণের যেসব উদাহরণ মিলেছে তাতে দেখা যাচ্ছে সাধারণত লাশঘর বা মর্গে কাজ করে এমন কর্মী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি, গোরস্তানে কাজ করে এমন লোকেদের মধ্যেই রয়েছে নেক্রোফিলিক। আমাদের দেশেও প্রথমবারের মতো মর্গের কর্মীর মাধ্যমেই বিষয়টি সবার গোচরে এলো। তবে মুন্না ভগত প্রকৃতপক্ষেই একজন নেক্রোফিলিক কিনা সেটি নিশ্চিত করবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আমি নেক্রোফিলিকদের ‘অপরাধী’ না বলে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত বলার পক্ষে। আর এটি নিশ্চয়ই অনিরাময়যোগ্য কোন ব্যাধি নয়। প্রতিটি মর্গ ও গোরস্তান বিশেষ নজরদারিতে রাখার খবর হয়ত আমরা অচিরেই পাব। এমনটি হলে সমাজে সহজেই মৃতদেহের অবমাননা রোধ করা সম্ভব হবে। তবে সমাজকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে তাদের ব্যাপারে যারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে জীবিত নারীর ওপর শুধু ভয়ঙ্কর অসুস্থ আকর্ষণই বোধ করে না, বরং তার বীভৎস প্রকাশও ঘটায়। গণপরিবহনে গণমানুষ ও হকারের রঙ্গরস গণপরিবহনে উঠলে সমাজের সাধারণ চালচিত্রের স্পন্দন অনুভব করা যায়। তিনটি বিষয় রয়েছে। এক. যাত্রীরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নন, সেখানে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং বিত্তহীন লোকেরা থাকেন। তারা নানা বিষয়ে বিজ্ঞের মতো কথা বলেন। সেসব কথা থেকে দেশ-সমাজের প্রতি গণমানুষের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। দুই. নানা ধরনের ভিক্ষুক ও সাহায্যপ্রার্থী ওঠেন বাসে। তাদের অনেকেরই শারীরিক সমস্যা রয়েছে। অনেকে দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক ঘণ্টার যাত্রায় কমপক্ষে দশজন ভিক্ষুক/ সাহায্যপ্রার্থীর সাক্ষাৎ মেলে। তাদের আচরণ ও আলাপন থেকে যাত্রী তথা গণমানুষ অনেককিছুই জানতে পারেন। ইদানিং হিজড়াদেও উৎপাতও বেড়ে গেছে। তারা বাসে উঠে রীতিমতো মাস্তানি করে। আপনার গায়ে সে হাত দেবেই। ঠাট্টা মশকরাও করবে। আর তৃতীয় দিক হলো বাসে নানান বস্তু/ পণ্যের বিক্রেতা ওঠেন। এরা এক ধরনের বিনোদনও দেন যাত্রীদের। যেমন এক চকলেট বিক্রেতা ছন্দে ছন্দে কথা বলেন। একজন মানিব্যাগ বিক্রেতা দারুণ শুদ্ধ উচ্চারণ ও বাচনে কথা বলেন। ঘরগৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত অনেক পণ্য ফেরি করে বিক্রি করেন হকাররা। যেমন তরকারি কাটার সহজ পদ্ধতি তারা বাৎলে দেন। থ্রি ইনওয়ান চাইনিজ স্টিকেরই থাকে রকমারি সবজি কাটার ও খোসা ছাড়ানোর ব্যবস্থা। আরেকটি ব্যাগে বিক্রেতারা তরকারি রাখেন। শশা কেটে দেখান। আলু ছিলে দেখান। কিন্তু পেঁয়াজ বের করলেও সেটি তিনি ছিললেন না। এ নিয়ে মজার রঙ্গরস করলেন। পেঁয়াজের দাম যে আকাশ ছুঁয়েছে সেটি অপ্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীও বুঝে যাবে হকারের বক্তৃতা থেকে। এক বইবিক্রেতা উঠেছিলেন একবার বাসে, যিনি প্রথমেই জানান নিজের লেখা বই তিনি বিক্রি করেন। খুব গৌরবের সঙ্গে নিজের লেখক পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। করোনাকাল নিয়ে লেখা বই। এক বয়স্ক লোককে দেখলাম এক কপি কিনেও ফেললেন। বাসে-মিনিবাসে যারা কিছু বিক্রির উদ্দেশে ওঠেন তাদের আয়ে যে পুরো একটি পরিবার জীবনধারণ করে এটি আমরা অনেকেই মনে রাখি না। এদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে চাই না। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই যে একেকজন জীবন সংগ্রামী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২২ নবেম্বর ২০২০ [email protected]
×