ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোট চাহিদা ১২ বিলিয়ন ডোজ ’২১ সাল পর্যন্ত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ বিলিয়নের কাছাকাছি

বিশ্বের সবার কাছে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছানোই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২৩ নভেম্বর ২০২০

বিশ্বের সবার কাছে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছানোই চ্যালেঞ্জ

রশিদ মামুন ॥ বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৬০০ কোটি। প্রত্যেককে করোনা ভ্যাকসিন দিতে হলে অন্তত এক হাজার ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন। অর্থাৎ ১২ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীরা আগামী বছর শেষ নাগাদ যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাতে চাহিদার ধারে কাছেও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মহামারী রুখতে একমাত্র বিকল্প মনে করা হচ্ছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ। কিন্তু কবে নাগাদ বিশ্বের সব মানুষের কাছে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হবে সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাস্ট্রেজেনেকা। কোম্পানিটি ২০২১ সালের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মডার্না আগামী বছর শেষ নাগাদ ৫০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মানির এনবায়োটেক বলছে তারা আগামী বছরের শেষ নাগাদ উৎপাদন করতে পারবে সোয়া এক বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন। অন্যদিকে চীন ভ্যাকসিনের আরেক বড় উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আগামী বছর তাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্য এক বিলিয়ন ডোজ নির্ধারণ করেছে। এর বাইরে রাশিয়া ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে এখনও তেমন কোন ঘোষণা আসেনি। যদিও দেশটি বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন কারখানা ব্যবহারের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০২১ সালের মধ্যে ভ্যাকসিন উৎপাদনের ঘোষণা এসেছে চার দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডোজ। অক্সফাম, এপি, স্পুটনিক ভি এবং এ্যাস্ট্রেজেনেকার খবর বিশ্লেষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর বিপরীতে চাহিদার সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে সাত দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডোজ। অর্থাৎ চাহিদার এক তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হবে আগামী বছরের শেষ নাগাদ। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করে এনেছে বিশ্বের ছয়টি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাকসিনগুলোকে কার্যকর বলে দাবিও করেছে এসব প্রতিষ্ঠান। এমন ঘোষণায় মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা তীব্র হয়েছে। তবে চাহিদার আকাশচুম্বী অবস্থায় উৎপাদন কম হওয়াতে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনার জন্য কার্যকর মনে করলেও ক্রমান্বয়ে বেশিরভাগ ওষুধ প্রয়োগের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। শুরুতে রেমডিসিভিকে করোনার জন্য জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বলা হলেও ডব্লিউএইচও সম্প্রতি এটি ব্যবহার বন্ধের কথা জানিয়েছে। এতে করে মহামারী রুখতে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনকেই একমাত্র উপায় ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সারা বিশ্বের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীরা ক্রমান্বয়ে চাহিদা মেটানোর জন্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এজন্য প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি, উৎপাদন কারখানা স্থাপন এবং কাঁচামালের সংস্থান করা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। চাইলেই রাতারাতি এসব বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। বায়ো প্রসেস ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিফেন ব্যাঙ্কেলকে উদ্ধৃত করে বলেছে কোম্পানিটি ২০১৮ সালে নরউডে দুই লাখ বর্গফুটের যে কারকানা স্থাপন করেছিল তার আয়তন বৃদ্ধি করছে। একই সঙ্গে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য জনবল প্রশিক্ষণ ছাড়ও অন্যান্য কাজ শুরু করেছে। মডার্না দাবি করছে তাদের ভ্যাকসিন ৯০ ভাগ পর্যন্ত কার্যকর। অন্যদিকে মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মানির বায়ো এনটেক এর তৈরি ভ্যাকসিনকে ৯৫ ভাগ কার্যকরের দাবি করা হচ্ছে। তবে এই ভ্যাকসিনকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ভ্যাকসিন বলছে অক্সফাম। তারা একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে এই কোম্পানির দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিতে ৪০ ডলারের মতো ব্যয় হবে। এ্যাস্ট্রেজেনেকা বলছে আগামী বছর নাগাদ তারা দুই বিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। এরমধ্যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ এক বিলিয়ন ডোজ প্রস্তুতের ঘোষণা দিয়েছে তারা। যারমধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে। তবে ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনের প্রি অর্ডার করে রাখাতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সম্প্রতি অক্সফাম এক প্রতিবেদনে বলছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো মোট উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৫১ ভাগ কিনে রেখেছে। যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ ভাগ বসবাস করে। এতে করে সবার জন্য ভ্যাকসিনের যে ঘোষণা দিয়েছে ডব্লিউএইচও সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তবে এত বেশি ভ্যাকসিন ওইসব দেশের প্রয়োজন হবে না। কোন কোম্পানির ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর হবে এমন ধারণা না পাওয়াতে তারা প্রয়োজন অতিরিক্ত ভ্যাকসিন কিনেছে। এসব ভ্যাকসিন দ্রুত অন্য দেশে ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নিতে হবে বিশ্ব নেতাদের। ভারতের সব চেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানি সিরাম ইনস্টিটিউট এর প্রধান আদর পুনাওয়া বলেছেন সবার কাছে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছাতে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ ২০২৪ এর মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন মানুষের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
×