ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার ভোটারদের মামলা

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৩ নভেম্বর ২০২০

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার ভোটারদের মামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার মামলা করেছেন বেশ কয়েকজন ভোটার। শুক্রবার মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরের একটি সংগঠন ও তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের দাবি, নির্বাচনে ফলের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মামলা এবং ভোট পুনর্গণনায় বাধা প্রদানের কারণে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসএ টুডে, ফক্স নিউজ ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। মিশিগান ওয়েলফেয়ার রাইটস অর্গানাইজেশন ও দ্য এনএএসিপি লিগ্যাল ডিফেন্স ফান্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিশিগানে নির্বাচনের ফল অনুমোদনে বাধা দেয়ায় এবং আইনপ্রণেতাদের চাপ দেয়া থেকে ট্রাম্পকে বিরত থাকতে আদালতকে আদেশ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। মিশিগানে বাইডেনের জয়ী হওয়ার খবর সামনে আসার পর থেকেই ভোট পুনর্গণনার জন্য চাপ দিতে থাকেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি বার বার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগও করেন। গত ৩ নবেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি হেরে যাওয়া অঙ্গরাজ্যগুলোতে মামলার ঝড় তুলেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। তবে উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে না পারায় বেশিরভাগ জায়গায় এসব মামলা খারিজ হয়ে গেছে। সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ব্যাটলগ্রাউন্ড পেনসিলভানিয়াতেও হেরে গেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা। শনিবার ট্রাম্পের প্রচারণা দলের দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন পেনসিলভানিয়ার এক ডিস্ট্রিক্ট জজ আদালত। যদিও রিপাবলিকানদের মামলাটিতে জেতার সম্ভাবনা বরাবরই কম ছিল। ট্রাম্পের সমর্থক ও তার লিগ্যাল টিম, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত এ্যাটর্নি রুডি গিলিয়ানি পেনসিলভানিয়ার ফেডারেল বিচারকদের ওপর ভরসা করে জেতার আশা ধরে রেখেছিলেন। মিশিগানের নিজের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে ট্রাম্পের। সেখানে রিপাবলিকান প্রতিনিধিরা পরোক্ষভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনকেই জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পুনরায় ভোটগণনার পথে হাঁটতে রাজি নন বলেও জানিয়েছেন তারা। নির্বাচনের ফল আসার পর থেকেই ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, কারচুপি করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন বাইডেন। তারপর থেকেই ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলে মামলা করা হয়। কিন্তু এর অধিকাংশই ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি এ্যারিজোনাতেও ট্রাম্প সমর্থকদের মামলা খারিজ হয়ে গেছে। সেখানকার স্থানীয় দুই রিপাবলিকান দাবি করেছিলেন যে, তাদের ভোটগুলো ভুলভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। ট্রাম্পের মামলা খারিজ ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় ডাকযোগে আসা লাখ লাখ ভোট বাতিলের দাবিতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে একটি ফেডারেল আদালত। শনিবার ওই রায়ে বিচারক ম্যাথু ব্র্যান বলেছেন, অনিয়মের যে অভিযোগ ওই মামলায় আনা হয়েছিল তার কোন ‘মেরিট’ তিনি পাননি। আদালতে ট্রাম্পকে বিচারকের তীব্র ভর্ৎসনা ॥ ভোট নিয়ে আদালতে গিয়ে বিচারকের তীব্র ভর্ৎসনার শিকার হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার মামলার দাবিকে ‘ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব’ বলেছে আদালত। পেনসিলভানিয়ার উইলিয়ামস্পোর্টের ডিস্ট্রিক্ট জজ ম্যাথিউ ব্র্যান শনিবার ভোট নিয়ে ট্রাম্পের মামলা খারিজ করে ওই মন্তব্য করেন। ট্রাম্প শিবির পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটের ফল ‘সার্টিফাই’ করার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ম্যাথিউ ব্র্যানের আদালতে গিয়েছিল। সোমবার পেনসিলভানিয়ার ফল ‘সার্টিফাই’ করার কথা অঙ্গরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। ম্যাথিউ ব্র্যান বিচারক হন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মনোনয়নে। ট্রাম্প শিবিরের মামলার রায়ে ম্যাথিউ ব্র্যান বলেন, একজন নাগরিকেরও ভোটাধিকার হরণ করার কোন অধিকার তার নেই। ৯ নবেম্বর ম্যাথিউ ব্র্যানের আদালতে মামলাটি করা হয়। মিশিগানে ভোট ‘সার্টিফিকেশন’ মুলতবির দাবি ॥ মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান পার্টির কর্মীরা ভোট ‘সার্টিফিকেশন’ মুলতবি চান। রিপাবলিকান কর্মীরা ইতোমধ্যে অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল বোর্ডের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। ভোট ‘সার্টিফিকেশন’ দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন মিশিগানের রিপাবলিকান কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে তারা সেখানকার বৃহৎ কাউন্টির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ‘নিরীক্ষা’ চেয়েছেন। নিজেকে ‘জয়ী’ ঘোষণা করে ব্রিফিং ত্যাগ ট্রাম্পের ॥ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেন ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি শোনালেন সেই পুরোনো কথা। বললেন, নির্বাচনে তিনিই ‘জয়ী’ হয়েছেন। জনগণ এই ফল বের করে আনবে। অবশ্য নিজের দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ হাজির না করেই ট্রাম্প নিজের জয় দাবি করলেন। আবার তার দাবি নিয়ে সাংবাদিকদেরও কোন প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন না। ব্রিফিংয়ে মূলত ওষুধের দাম কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল। ব্রিফিংয়ে তিনি সেই বিষয়টিকে ফোকাস না করে ৩ নবেম্বরের নির্বাচনে জয়ের ভুয়া দাবি করে বসেছেন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের কাছে বিপুল ব্যবধানে তার পরাজয় হয়। দ্য নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের খবরে বলা হয়, ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনের আগে বড় বড় ওষুধ কোম্পানি আমার বিরুদ্ধে প্রচারণায় লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেছে... যে নির্বাচনে আমি জয়ী হয়েছি। যাই হোক, আমরা সেটি খুঁজে বের করব। প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ ভোট...। টুইটার-ফেসবুক এ্যাকাউন্ট যাচ্ছে বাইডেনের হাতে ॥ প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল টুইটার ও ফেসবুক এ্যাকাউন্ট এখনও ব্যবহার করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই এ্যাকাউন্ট দুটি ট্রাম্প আর বেশি দিন ব্যবহার করতে পারবেন না। তিনি ছাড়তে না চাইলেও আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার দিন এই অফিসিয়াল এ্যাকাউন্ট বাইডেনের হাতে তুলে দেয়া হবে বলে টুইটার ও ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ২০ নবেম্বর টুইটারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল টুইটার এ্যাকাউন্টটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবহার করেন। এছাড়া হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের অফিসিয়াল টুইটার এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন। টুইটারের মুখপাত্র নিক প্যাসিলিও বিবৃতিতে বলেন, আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ নেয়ার দিন প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল টুইটার এ্যাকাউন্টটি জো বাইডেনের কাছে তুলে দেয়া হবে। শীঘ্রই মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করবেন বাইডেন ॥ নির্বাচনী জয়ের পর বাইডেন দ্রুত তার প্রশাসন গঠনের কাজ শুরু করেছেন। আগামী সপ্তাহের শুরুতে মন্ত্রিসভার শীর্ষ পদগুলোতে কে বসছেন তা জানাতে পারেন তিনি। সাংবাদিকদের বাইডেন বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনি কাকে দেবেন তা ইতোমধ্যে ঠিক করেছেন। এছাড়া মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে তার মনোনীত ব্যক্তির নামও ঘোষণা করবেন শীঘ্রই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন দেশটির সাবেক সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস কুনস; যিনি বাইডেনের আসনে জিতে সিনেটের পররাষ্ট্র কমিটির সদস্য। দুজনই বাইডেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এ চূড়ান্তভাবে বিবেচনায় থাকা এই দুজনের প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে কিংবা প্রকাশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যের নাম ঘোষণা করতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। বিশেষ করে অর্থনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন তা জানানো হতে পারে। অবশেষে বাইডেনের ব্যাপারে আশাবাদ সৌদির ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিনন্দন বার্তায় ভাসছিলেন বাইডেন তখন দৃশ্যত মুখে কুলুপ এঁটেছিল সৌদি আরব।
×