ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের উন্নয়নের অংশীদার রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংক

প্রকাশিত: ২০:১১, ২৩ নভেম্বর ২০২০

সরকারের উন্নয়নের অংশীদার রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ওপর মানুষের আস্থা গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বেসরকারী খাতের কিছু ব্যাংকের সমস্যার কারণে ব্যাংক খাতে একটা উল্টো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আগে সরকারী ব্যাংক থেকে বেসরকারী ব্যাংকে গ্রাহক চলে যেতেন। এখন বেসরকারী ব্যাংক থেকে সরকারী ব্যাংকে আসছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয়; সরকারের উন্নয়নের অংশীদারও। দেশের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো। সম্প্রতি দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। অগ্রণী ব্যাংকের নানা অগ্রগতির বিষয়ে ড. জায়েদ বখত বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানত, আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে শীর্ষে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ২০১৯ সালে অগ্রণী ব্যাংকের আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছর এ ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৮৪১ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সোনালীর মাধ্যমে যেখানে আমদানি ছিল ২৫ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকার। অগ্রণীর মাধ্যমে ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকার রফতানি এবং ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছে। রেমিটেন্স বাড়াতেও নেয়া হয়েছে কৌশল। আমাদের অন্যতম রেমিটেন্স আহরণকারী দেশ সিঙ্গাপুর থেকে অগ্রণীর মোবাইল এ্যাপ ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয়। এ এ্যাপের মাধ্যমে সেখানকার শ্রমিকরা ঘরে বসে টাকা পাঠাতে পারেন। আবার এখান থেকে যেন দ্রুত সুবিধাভোগী টাকা পেয়ে যান, সে জন্য বেশি রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদের উৎসাহ দিতে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। আবার নিজস্ব শাখা নেই এমন এলাকায় ২০০ এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টার খোলা হয়েছে। পাশাপাশি বিকাশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে রেমিটেন্স পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে রেমিটেন্স আহরণে এখন ইসলামী ব্যাংকের পরেই অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থান। পদ্মা সেতুতে এককভাবে ১২০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। তিনি বলেন, উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকই প্রথম ৯৫৮ শাখার সবই অনলাইনে চালু করেছে। ফলে রফতানিমুখী বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহকারী কর্পোরেটগুলোও অগ্রণী ব্যাংকে চলে এসেছে। যেমন দেশজুড়ে প্রাণ গ্রুপের ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছেন। তারা টাকা দিয়ে পণ্য নেন। প্রাণ গ্রুপ যত দ্রুত টাকা পাবে, তত দ্রুত পরিবেশকদের পণ্য দিয়ে থাকে। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এখন মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে তারা তথ্য পেয়ে যায় কে কত টাকা দিয়ে কোন পণ্যের অর্ডার করলেন। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সময়োপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্প ও সেবা খাতে অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৮০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ৬৮০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে পরিচালনা পর্ষদ। সিএমএসইতে বরাদ্দের চেয়ে আবেদন কম। এর কারণ হয়তো অনেকে প্যাকেজের বিষয়টি জানেন না বা ব্যাংকের সঙ্গে অনেকের সম্পর্ক নেই। অনেক ক্ষেত্রে জামানত দেয়ার মতো অবস্থা নেই গ্রাহকের। এসব কারণে সব ব্যাংক এ খাতে ঋণ বিতরণে কমবেশি পিছিয়ে আছে। কৃষিসহ অন্য খাতে ঋণ দিতে অবশ্য ব্যাংকগুলো এগিয়ে রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রসঙ্গে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, সব শাখা অনলাইনের আওতায় আসায় এখন যে কোন শাখা থেকে গ্রাহক তাৎক্ষণিক অর্থ জমা ও উত্তোলন করতে পারেন। যে কোন লেনদেনের তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিকাশের সঙ্গে যৌথভাবে বিতরণ করছে অগ্রণী ব্যাংক। তিনি বলেন, আমরা আগামীতে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে যাব। তবে এটিএম ও ক্রেডিট কার্ডে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছি। আমি চাই, অগ্রণী ব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক হোক। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, গ্রাহকসেবাসহ সব হবে আন্তর্জাতিক মানের।
×