ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি কার্যক্রম বন্ধে বিরোধীরা আমার পিছু নিয়েছে ॥ পাক প্রধানমন্ত্রী

পদত্যাগ চাপে ইমরান খান

প্রকাশিত: ২০:০২, ২৩ নভেম্বর ২০২০

পদত্যাগ চাপে ইমরান খান

পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধীদের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে। দেশটির প্রায় সব বিরোধী দল একাট্টা হয়ে ইমরান সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। বিরোধীরা পাকিস্তানের বর্তমান সরকারকে ‘পুতুল সরকার’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। করোনা মহামারীর কারণে জনসমাগম আয়োজন করার ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আগামী সপ্তাহে পেশাওয়ারসহ অন্যান্য জায়গায় বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য এ প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে এ কার্যক্রম থেকে আমাকে একবিন্দুও নড়ানো যাবে না। খবর বিবিসি ও ফিন্সটুডে অনলাইনের। রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে ইমরান খানও তার নির্বাচনে জয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ২০২৩ সালের আগে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবে না। ১৬ অক্টোবর থেকে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট বা পিডিএম দল একের পর এক বিক্ষোভের আয়োজন করছে। দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় দল থেকে শুরু করে দেশটির কিছুটা বামপন্থী চিন্তাধারার দল, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যরাও এই দলের সঙ্গে রয়েছে। দেশটির চার রাজ্যের তিনটিতেই- পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বালোচিস্তানে ইতোমধ্যে বড় ধরনের র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাইবার পাখতুনখাওয়া রাজ্যে আগামী রবিবার প্রথমবারের মতো সরকার বিরোধী র‌্যালি হতে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করা এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। সরকারের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব তৈরি করা এবং অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তুলেছে তারা। কর্তৃপক্ষের পথরোধ করা এবং কিছু গ্রেফতারের মতো ঘটনা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত গুজরানওয়ালা, করাচী আর কোয়েটায় বিক্ষোভ হয়েছে। ১৯ অক্টোবর করাচীতে র‌্যালির পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জামাতা সফদর আওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে সরকার এবং সেনাবাহিনী যথেষ্ট বিব্রত হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় গ্রেফতারের সময় সফদর আওয়ান তার স্ত্রীর সঙ্গে হোটেল কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন। তার কিছুক্ষণ পর জানা যায় যে, হোটেলে অভিযান চালানোর আগে সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক সফদর আওয়ানের গ্রেফতারি পরোয়ানায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় সিন্ধু প্রদেশের সব শীর্ষস্থানীয় পুলিশ অফিসাররা বিক্ষোভ চলাকালীন ছুটির দরখাস্ত করে। তবে পরে দেশটির সেনাপ্রধান সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটির দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নেয়। ওই ঘটনার পর সেনাপ্রধান গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনা এবং আইএসআই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিক্ষোভ র‌্যালির কিছু বক্তব্য সেন্সর করার জন্য মিডিয়ার ওপরও চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ। র‌্যালি চলাকালীন সময় জাতীয়তাবাদী নেতা মহসিন দাওয়ার বা রাজনীতিতে ফিরে আসা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ লন্ডন থেকে ভিডিওতে বক্তব্য দেয়া শুরু করতেই টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ কাভারেজ বন্ধ করে দেয়। এই নেতারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আসছেন গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পর্দার আড়াল থেকে ইমরান খানের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার। ইমরান খান দাবি করেছিলেন নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন পার্টি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির দলের ব্যাপক দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন ছিল। নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপে নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন’এর পরিষ্কার জনপ্রিয়তা থাকলেও ইমরান খানের পিটিআই সামান্য ব্যবধানে জয় পায়।
×