ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনা

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ২৩ নভেম্বর ২০২০

টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনা

একটি দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার স্থায়ী রূপ দিতে হলে সর্বপ্রথম সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও এর সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিকাশমান ধারা এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সুশাসন, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি কঠোরভাবে নির্মূল, টেকসই অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় জোরদার এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চৌকস পররাষ্ট্রনীতির কার্যকর অনুশীলন। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ দণ্ডায়মান। জাতীয় প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ অঙ্কের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারী সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির হার দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর দেশের তুলনায় সন্তোষজনক। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন। আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সালে ৫০ বিলিয়নে উন্নীত হবে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, বড় বড় তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, পাতাল রেল নির্মাণ, মহাসড়কসমূহ চারলেনে উন্নীতকরণ, প্রধান বিমানবন্দরের তৃতীয় ফেজ নির্মাণ, মহাকাশ জয় ইত্যাদি ইন্ডিকেটর জাতীয় অগ্রগতির ঈর্ষণীয় সূচক আমরা আগ্রহচিত্তে প্রত্যক্ষ করছি। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্থক হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের মধ্য দিয়ে- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রত্যুষে মুজিববর্ষে সেটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। তবে এত সব উন্নয়ন অগ্রগতি সত্ত্বেও আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি মাঝে-মধ্যে হোঁচট খাচ্ছে। এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা সমগ্র উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিকতা ব্যক্তিমানসে প্রকট হওয়ায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে অপ্রিয় হলেও বলতে হবে- নাগরিক সমষ্টির মাঝে এখনই জাতীয়তাবোধ আশানুরূপ সৃষ্টি হয়নি, যা সৃষ্টি হবার কথা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে। বরং ব্যক্তির প্রবল আকাক্সক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও সামাজিক বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে। আয় বৈষম্যের সমাজ কখনও টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে পারে না- সেটি অনুধাবনে নেয়া যতটা প্রয়োজন ছিল নীতিনির্ধারক মহল ততটা আমলে নেয়নি। ফলে সবাই অর্থপ্রাপ্তির পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরছে। হোক না সেটি অপরাধ কিংবা অন্যায়। তাতে সমষ্টির কর্ণপাত করার সময় কোথায়। আয়েশির এ ছলনায় শুধু যে সমাজ কলুষিত হয়েছে তা নয়। বরং ব্যক্তি জীবনে সামাজিক লজ্জাবোধটুকুও ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বাণিজ্যিক চেতনা প্রবেশ করেছে। মানুষ তৈরির অন্যতম উপকরণ শিক্ষা এখন আর জ্ঞান বিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রূপ নিয়েছে বাণিজ্যিক উপকরণে। শিক্ষার্থীর শিক্ষা আহরণের মধ্য দিয়ে যতটা মনুষত্ব, ব্যক্তির দায়বোধ, দেশপ্রেম-মানবিকতা বিকশিত হবার কথা ছিল, সেটি এখন প্রায় অনুপস্থিত। শিক্ষায় এখন বিনিয়োগ হয় লগ্নি হিসেবে। যতটা বিনিয়োগ হয় তার সুদাসলে তুলে নেয়াটা এখন শিক্ষার্থী অভিভাবকের লক্ষ্য। সমাজ, রাষ্ট্রজীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রকট দুর্নীতি উন্নয়ন-অগ্রগতি, সুশাসনকে যেভাবে বাধাগ্রস্ত করছে সেটির বীজ আমরা মূলত বপন করেছি বাণিজ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কাক্সিক্ষত মাত্রার দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ তৈরি না হওয়াটা সমাজ রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সৃষ্ট জঞ্জালের মূল কারণ। বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু শ্রেণীস্বার্থ সংরক্ষণের তাগাদা থেকে বিষয়টি অনুধাবনে নেয়া হয়নি। সদ্য প্রসূত স্বাধীন বাংলাদেশে বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। একজন শাসক ও জাতির স্থপতি হওয়া সত্ত্বে¡ও দেশ পুনর্গঠনে দুর্নীতি বিরাট অন্তরায়, তা তিনি অপকটে বারবার বলেছিলেন। এই দুর্নীতি যে শিক্ষিত সমাজের দ্বারা সংঘটিত হয় তা তিনি ২৬ মার্চ ১৯৭৫ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, ‘শিক্ষিতদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন। আমি এই যে দুর্নীতির কথা বললাম, তা কারা করে? আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাকমার্কেটিং করে কারা? বিদেশী এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয়, হোর্ড করে কারা? এই আমরা যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যেই রয়েছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ।’ ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫, জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ, যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন। আমাদের রাস্তা খুঁড়তে যান, করাপশন। খাদ্য কিনতে যান, করাপশন। জিনিস কিনতে যান, করাপশন। বিদেশে গেলে টাকার ওপর করাপশন। তারা কারা? আমরা যে ৫ পারসেন্ট শিক্ষিত সমাজ, আর আমরাই করি বক্তৃতা। আমরা লিখি খবরের কাগজে, আমরাই বড়াই করি। আজ আত্মসমালোচনার দিন এসেছে। এসব চলতে পারে না। মানুষকে একদিন মরতে হবে। কবরে যেতে হবে। কিছুই সে নিয়ে যাবে না। তবু মানুষ ভুলে যায় কী করে এ অন্যায় কাজ করতে পারে।... আর এই দুঃখী মানুষ যে রক্ত দিয়েছে স্বাধীনতা এনেছে, তাদের রক্তে বিদেশ থেকে খাবার আনিয়ে সেই খাবার চুরি করে খাবে, অর্থ আনব, চুরি করে খাবে; টাকা আনব, তা বিদেশে চালান দেবে। বাংলার মাটি থেকে এদের উৎখাত করতে হবে।... আজ দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, কালোবাজারি নতুন পয়সাওয়ালাদের কাছে আমার আত্মবিক্রি করতে হবে, এদের অধিকারের নামে আমাদের এদেরকে ফ্রি-স্টাইলে ছেড়ে দিতে হবে। কখনও না। কোনো দেশ কোনো যুগে তা দেয় নাই। দিতে পারে না। যারা আজকে আমার মাল বিদেশে চালান দেয়, চোরাকারবারি করে, যারা দুর্নীতি করে, এদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। যারা তোমার মাহিনা দেয়, তোমার সংসার চালানোর জন্য ট্যাক্স দেয়, তার কাছে তুমি আবার পয়সা খাও! মেন্টালিটি চেইঞ্জ করতে হবে। সরকারী কর্মচারী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট আমরা জনগণের সেবক, আমরা জনগণের মাস্টার নই। মেন্টালিটি আমাদের চেইঞ্জ করতে হবে। আর যাদের পয়সায় আমাদের সংসার চলে, যাদের পয়সায় আমরা গাড়ি চড়ি, যাদের পয়সায় আমরা পেট্রোল খরচ করি, আমরা কার্পেট ব্যবহার করি, তাদের জন্য কী করলাম?’ তাদের জন্য কী করলাম? বঙ্গবন্ধুর এ আক্ষেপটি এখনও আমরা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ধারণ করতে পারিনি। এখনও বক্তৃতা, বিবৃতি, শারীরিক বাচনভঙ্গির মাঝে আমাদের দেশপ্রেম, চেতনা, আদর্শ, দর্শন আবদ্ধ। লক্ষ্যটা যে নেহাত আত্মসমৃদ্ধি, সেটা বলার প্রয়োজন আছে বৈ কী? মানসিক আত্মকৌশলী দুর্নীতির কাছে আমাদের উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার পরাস্ত হচ্ছে। পেশাজীবীদের যতটা পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি হবার প্রয়োজন ছিল, সেটা তৈরি হয়নি। এ না হবার পেছনে জড়িয়ে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিকতা। ব্যক্তি সমৃদ্ধির জন্য তারাও সর্বকালে সর্বযুগে কৌশলী হয়েছে। তাদের মেধার ছাতাটা যতটা তুলে ধরা প্রয়োজন ছিল জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিতে, ততটা না করে প্রসারিত করেছে সুবিধাবাদী কৌশলে। এই কৌশলী গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে এখানে গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক মতলববাজ পেশাকেন্দ্রিক শ্রেণীসমাজ। সঙ্কীর্ণ শ্রেণী পেশার বাতাবরণে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নে জবাবদিহিতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি কিংবা হতে দেয়া হয়নি। উন্নয়ন পরিকল্পনাটা বরাবরই থেকে গেছে ত্রুটিপূর্ণ। লক্ষ্য করা যাচ্ছে-উন্নয়ন পরিকল্পনায় ব্যাপক অপচয়, গোঁজামিল, অনিয়ম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় প্রবৃদ্ধি। তবে এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, পরিকল্পনামাফিক কাজ সমাধা হলে ব্যক্তি সমৃদ্ধি কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। জাতীয় অপচয়ের বড় দৃষ্টান্ত একই কাজ বারবার করা। ভঙ্গুর অবকাঠামো নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়িতে বিবর্ণ রূপ ধারণ করে রাজধানী থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের সড়ক-মহাসড়ক-আনাচে কানাচের অন্ধগলি। অপরিকল্পিত নগরায়ণে জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনাকে সঙ্গী করে চলে নগরজীবন। জনপ্রশাসন যখন রাষ্ট্রীয় দায়বোধ ভুলে যায় তখন প্রশাসনে জবাবদিহিতা থাকে না। চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ে। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সমাজ রাষ্ট্রের প্রতিটি পরতে পরতে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও এসব জঞ্জালে পরিপূর্ণ সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থা। ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থায় চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসক, বিচারক বা কেরানিকুল যাই গড়ে উঠুক না কেন, এদের দ্বারা টেকসই সুশাসন ও সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বরং বঙ্গবন্ধুর ভাষাটি এক্ষেত্রে বারবার উচ্চারিত হবে। আমাদের ভাগ্যের ধূলি দূর হবে না। স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল শোষণমুক্ত সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। সেই শোষণমুক্ত সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছরে কতটা নিশ্চিত হয়েছে, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে উচ্চারিত হলেও পোশাক শিল্প, কৃষি, গৃহস্থালি, চা শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে কর্মরত নারী শ্রমিকগণ তুলনামূলক পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বরাবর গ্রাম বঞ্চিত। জাতীয় অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতি বা কৃষি অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও বড় বড় পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে শহরগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। ফলে নগর ও গ্রামীণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা আদর্শিক চেতনা থেকে ‘গ্রাম হবে শহর’ কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পনা নিয়েছেন, যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আশার আলো দেখাচ্ছে। সরকারী পর্যায়ে শ্রম মজুরির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও বেসরকারী পর্যায়ে শ্রম মজুরির বিষয়টি সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখানে শোষণ প্রক্রিয়ার বীভৎস রূপ পরিলক্ষিত হয়। সমুদ্র অর্থনীতি আহরণের ক্ষেত্রে নাবিক ও জেলে শ্রেণী দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করলেও তাদের উন্নয়নে কিংবা সামাজিক সুরক্ষায় রাষ্ট্রের তেমন একটা ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এখানেও জোদ্দার/মহাজনদের এক্ষেত্রে এক ধরনের শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গায়ের ঘাম ঝরিয়ে যে কৃষককুল দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন, অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, সেই কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও নিশ্চিত করা যায়নি। বরং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে কৃষক-ভোক্তা উভয়ে শোষিত হচ্ছে। আমাদের শোষণ প্রক্রিয়ার যে অমানবিক রূপ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান, সেটিই সমাজ রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ধারণ করে স্বপ্নের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবার জন্য তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার ওপর ভিত্তি করে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রত্যাশায় প্রতিনিয়ত প্রহর গুনছি। যেসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে, তার অবকাঠামোগত উন্নয়নে উন্নত বাংলাদেশের আবরণে আবৃত্ত হবে হয়ত প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, বিভক্ত নাগরিক সমাজ, নির্লজ্জ দলবাজিতে লিপ্ত পেশাজীবী সমাজ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধহীন নাগরিক সমাজ রেখে বিদ্যমান শোষণ, নিষ্পেষণ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অপচয়ের সংস্কৃতি ধারণ করে বক্তৃতা-বিবৃতি, পোশাকি আদর্শ, চেতনা, দর্শনে ভর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে কী? পেশাজীবীদের জবাবদিহিতা, নাগরিক সমাজের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধনির্ভর সুশাসনের বাংলাদেশ সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভর করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ কতটা আত্মমর্যাদা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, সেটাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে প্রশ্ন। এ প্রশ্নের জবাব অবশ্যই আমাদের খুঁজে নিতে হবে। অন্যথায় অনাগত প্রজন্মের নিকট বর্তমানকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈষম্য, শোষণ, জবাবদিহিতাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি উগ্র মতাদর্শকে উস্কে দেয়। বিস্তৃত হয় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা, যা টেকসই উন্নয়নের পথে অন্যতম অন্তরায়। এসব অন্তরায় দূর করতে হলে অবশ্যই শিক্ষার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ফিরে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনে। যেখানে মানবিক মূল্যবোধ, জাতীয়তাবোধ, নাগরিক দায়িত্ব বিকশিত করার উপকরণ থাকবে। থাকবে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ। শিক্ষায় বিনিয়োগ হতে হবে মানব উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাহলেই যে উন্নয়নধারা সূচিত হয়েছে, তা টেকসই হবে। লেখক : সাধারণ সম্পাদক, আইডিইবি ও চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ড, এনপিআই ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ
×