ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের বার্তা

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ২৩ নভেম্বর ২০২০

হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের বার্তা

মধ্য হেমন্তের হঠাৎ বৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে সঘন কুয়াশা একই সঙ্গে শিহরিত ও পুলকিত করেছে রাজধানীবাসীকে। আবহাওয়াবিদদের মতে, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পুবালী বাতাসের সংমিশ্রণের কারণে এহেন হঠাৎ ঘন মেঘ-বৃষ্টি ও কুয়াশার আবির্ভাব। সেই সঙ্গে বেড়েছে শীতের আগামনী বার্তা। ডিসেম্বরের শেষার্ধে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আভাসও আছে। শনিবার দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকা ছিল ঘন মেঘে ঢাকা, সেই সঙ্গে হাল্কা বৃষ্টিপাতসহ কুয়াশার দাপট। সূর্যালোকের দেখা প্রায় পাওয়া যায়নি বললেই চলে। ঘন কুয়াশা ও বারিপাতের খবর আছে গ্রামগঞ্জেও। ফলে ব্যাহত হয়েছে হেমন্তের ধানকাটা। কিছুটা ভাটা পড়েছে নবান্নের আনন্দ উৎসবে। গরিব মানুষ শীত-বৃষ্টি-কুয়াশা ও কর্মহীনতায় প্রায় জবুথবু। দুর্ভোগে পড়েছেন দৈনন্দিন শ্রমজীবীরাও। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। যার আশঙ্কা করা হয়েছিল আগে থেকেই। ইতোমধ্যে বেড়েছে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি। এর মোকাবেলায় প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। সবার মুখে মাস্কসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত, যেখানে জেল-জরিমানার ব্যবস্থাও আছে। মনে রাখতে হবে, করোনার সঙ্গে সারাদেশে সর্দি-কাশি-ফ্লু-ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া-নিপা ভাইরাসের প্রকোপও বাড়ছে। হেমন্তের বৃষ্টি ও কুয়াশাসহ মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ তাতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে এহেন বিপন্নপ্রায় পরিস্থিতি সামলানো দুঃসাধ্য। সুতরাং সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে সবাইকে। সর্বত্র যথাসম্ভব জনস্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সরকারীভাবে করোনার টিকা সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে। অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। তবে অন্যান্য অসুখ-বিসুখ এবং প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ মোকাবেলা করে নিজেদের জীবন ও স্বাস্থ্যকে নিরাপদ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে প্রত্যেককেই। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ও দুঃসময় শেষ হতে না হতেই প্রায় সবার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে ডেঙ্গু-ফ্লু-হাঁচি-কাশি-ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, ঋতু পরিবর্তনের এই ক্রান্তিকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ডেঙ্গু বাংলাদেশ বিশেষ করে নগরবাসীর জন্য এক নিয়মিত রোগ-ব্যাধির মতো। এ সময়ে কমবেশি বৃষ্টিতে ভিজলে অনেকেরই সর্দি-কাশি-ইনফ্লুয়েঞ্জা হওয়া স্বাভাবিক। হচ্ছেও প্রায় নিয়মিত বিরতিতে। সমস্যা হলো এসব রোগের উপসর্গ প্রায় মিলে যায় করোনাক্রান্তের সঙ্গে। ফলে কোন রোগী এসব উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকদের চেম্বারে কিংবা হাসপাতালে পরামর্শের জন্য গেলে প্রায়ই প্রত্যাখ্যাত হন। করোনা রোগী সন্দেহে তাকে কোন পরামর্শ বা ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয় না। বরং বলা হয় আগে করোনা পরীক্ষা করাতে, যা তেমন সহজলভ্য নয় দেশব্যাপী। ফলে ভরসা কেবল নিজে নিজেই ডাক্তারি- প্যারাসিটামল, এ্যান্টি হিস্টামিন ও কাশির ওষুধ সেবন। এতে বিপদের ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া যায় না কিছুতেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর অগ্রসর হলেও প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কার্যকর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। যেমন- ডেঙ্গু, ফ্লু প্রচলিত অর্থে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিষেধক নেই। অনুরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায় মার্স, সার্স, জিকা ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাস ইত্যাদির ক্ষেত্রেও। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়ছেই। বাড়ছে ডেঙ্গুতেও। এ অবস্থায় ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে রোগ-ব্যাধি সংক্রমণের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি।
×