ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় কমেছে দুধ বিক্রি ॥ সঙ্কটে রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ২২ নভেম্বর ২০২০

করোনায় কমেছে দুধ বিক্রি ॥ সঙ্কটে রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ চাহিদা হ্রাস, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও পাইকারিভাবে দুধ বিক্রি না হওয়াসহ নানামুখী সঙ্কটে পড়েছেন রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা। করোনার প্রভাবে দুধের বিক্রি কমেছে। পূর্বের মত কোম্পানিগুলো মাঠে গিয়ে খামারিদের কাছ থেকে দুধ কিনছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। খামারিরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে প্রণোদনা না পেলে পথে বসবেন তারা। জেলায় দুধের চাহিদা ও সরবরাহ চলমান রাখতে খামারগুলোকে টিকিয়ে জরুরী। তাই খামারিদের সঙ্কট মোকাবেলায় প্রণোদনার বিকল্প নেই বলে দাবি করেন তারা। রাজশাহী জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদফতরে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলায় প্রতি বছর দুধের চাহিদা থাকে ২ দশমিক ৬০২ লাখ মেট্রিক টন। বছরে দুধ উৎপাদন হয় ৩ দশমিক ৭৮৭ লাখ মেট্রিক টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১ দশমিক ১৮৫ লাখ মেট্রিক টন দুধ বেশি উৎপাদন হয়। চলতি মাসে জেলায় দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩১৭ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৪৮। ফলে ইতোমধ্যে চলতি মাসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। ফলে দুধের উৎপাদন বেশি হওয়ায় তা বাইরে বিক্রি না করতে পারলে লোকসানে পড়তে হয় খামারিদের। আর করোনাকালে দুধের বিক্রি কমে যাওয়ায় সেই সঙ্কটের মুখোমুখি দুধ উৎপাদনকারীরা। জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কুটিবাড়ী এলাকার খামারী মেহেদী হাসান। ২০০৩ সালে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে খামার গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১২টি গরু রয়েছে তার খামারে। তার ৫টি গাভী থেকে দিনে দুধ পান ৪৫ থেকে ৫০ লিটার। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে খুব ভালোভাবে দিন পার করতেন মেহেদী হাসান। কিন্তু করোনার মধ্যে দুধের উৎপাদন ঠিক থাকলেও সব কিছু বন্ধ থাকায় দুধ নিয়ে বিপাকে পড়ে যান মেহেদী। তিনি জানান, দিনে খামারে খরচ হয় ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা। কিন্তু লকডাউন চলাকালীন বিক্রি তো দুরের কথা দুধ নেওয়ার মতো কোন লোক ছিলো না। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি। সব কিছুর দাম বাড়তি। বিশেষ করে ফিড, খড় বা আউড় কিনে খাওয়াতে হিমশিম খেয়েছি। তিনি বলেন, খামারের খরচ যোগাতে সেই সময় ২ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেছি। সেই ক্ষতির বোঝা এখনো টানতেই আছি। করোনায় সব ওলট-পালট করে দিয়েছে। সরকারি সহয়তা না পেলে হয়তো বা খামার টেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। একই এলাকার দুগ্ধ খামারি নাজনীন নাহার বলেন, করোনার আগে যে পরিমাণ দুধ খামার থেকে উৎপাদন হতো, এখনো সেই পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়। তবে করোনায় গরুর খাদ্যের দাম বাড়তি থাকায় খামারে ব্যাপক খরচ হয়। লকডাউনে ডেইরি ফার্ম ও হোটেলে দুধ বিক্রি বন্ধ থাকায় পানির দামে দুধ বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি দুধ কেনার মতো কোন লোক ছিলো না। এতে অনেক ক্ষতিতে পড়েছি। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অনেক কষ্টের। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা. ইসমাইল হক বলেন, করোনায় অনেক কিছুই স্থবির হয়ে পড়েছে। দুধ উৎপাদনে কোন ব্যাঘাত না ঘটলেও বিক্রি বা মুভমেন্ট করার মতো তেমন কোন অপশন ছিলো না। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রণোদনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার নয়টি উপজেলাতে প্রণোদনা নিয়ে প্রান্তিক খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তালিকা পেলে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে নাম আসলে খামারিদের মাঝে প্রণোদনা বিতরণ করা হবে।
×