ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে অরক্ষিত মহাসড়কে চার মাসে পাঁচ লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১৩:১০, ২২ নভেম্বর ২০২০

বরিশালে অরক্ষিত মহাসড়কে চার মাসে পাঁচ লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অরক্ষিত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের একটি অংশ অপরাধীদের কাছে নিরাপদ রুটে পরিনত হয়েছে। এ উপজেলায় দুইটি থানা (গৌরনদী মডেল থানা ও হাইওয়ে থানা) থাকা সত্বেও রাতের আধাঁরে অপরাধীরা হত্যা করে নিবিঘ্নে লাশ গুম করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসের ব্যবধানে উপজেলায় পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হলেও চাঞ্চল্যকর এসব হত্যাকান্ডের কোন ক্লু উদ্ধারসহ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে। সূত্রমতে, গত ১৯ আগস্ট রাতে মহাসড়কের গৌরনদীর বাটাজোর বন্দর থেকে নিজের ইজিবাইকসহ নিখোঁজ হয় পাশ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার মোড়াকাঠী গ্রামের আব্দুস ছালাম রাঢ়ীর পুত্র মামুন রাঢ়ী (২৯)। নিখোঁজের সাতদিন পর মহাসড়কের বার্থী বাজার সংলগ্ন খালেরমধ্যে ভেসে ওঠে মামুনের অর্ধগলিত গলাকাটা ক্ষতবিক্ষত লাশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এখনও চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের কোন ক্লু উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার বাটাজোড় দেওপাড়া গ্রামের একটি পুকুরে ভেসে উঠে পঞ্চাষোর্ধ অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়। লাশের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও লাশটি কিভাবে ওই পুকুরের মধ্যে এসেছে তার কুলকিনারা করতে পারেনি কেউ। গত ১৪ নবেম্বর দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রাম এলাকার একটি নির্জন বাগানে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় মধ্যবয়সী (৩৫) অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ। ধারনা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে। লাশের পরিচয় কিংবা শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় কি কারনে ওই ব্যক্তি নির্জন জঙ্গলে এসে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত ১৯ নবেম্বর বিকেলে উপজেলার বার্থী বাজার সংলগ্ন মাদ্রাসা মাঠের সামনে খালের মধ্যে থেকে বস্তা ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার হয় অজ্ঞাতনামা যুবতীর (২৮) অর্ধগলিত লাশ। এরপূর্বে বার্থী কলেজের সামনের একটি গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। অপরদিকে ২০ নবেম্বর রাতে উপজেলার ভুরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে একটি যাত্রিবাহী বাসের মধ্যে ড্রাম ভর্তি নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিকভাবে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারলেও ২১ নবেম্বর সন্ধ্যায় লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা। নিহত সাবিনা ইয়াসমিন (৩৫) গৌরনদী পৌর এলাকার দিয়াশুর মহল্লার কাতার প্রবাসী শহিদুল ইসলাম ওরফে সফিকুল হাওলাদারের স্ত্রী এবং তিন সন্তানের জননী। নিহতের স্বজনরা জানান, সন্তানদের নিয়ে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় বসবাস করতেন নিহত সাবিনা ইয়াসমিন। শুক্রবার সকালে সে সন্তানদের নিয়ে দিয়াশুরের গ্রামের বাড়িতে আসেন। সন্তানদের রেখে বরিশালে এক ব্যক্তির সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিলো। সচেতন নাগরিকদের মতে, অরক্ষিত মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী এলাকাকে নিরাপদ রুট মনে করে অপরাধীরা হত্যা করে লাশগুলো গুম করার জন্য ওই এলাকায় নিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
×