ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম জন্মদিন ॥ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২২ নভেম্বর ২০২০

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম জন্মদিন ॥ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

ইবি সংবাদদাতা ॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। শহর থেকে খানিকদূরে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের মাঝামাঝি শান্তিডাঙ্গা ও দুলালপুর গ্রামে অবস্থিত। সবুজের চাদরে মোড়ানো ১৭৫ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্ম ১৯৭৯ সালের ২২ নবেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৪১ বছর পূর্ণ করলো বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটিই দেশের সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ। বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্মের ও বর্ণের দেশী-বিদেশী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ধর্মতত্ব ও ইসলামী আইনের পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, মানবিক ও কলা অনুষদীয় উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করে আসছে। এছাড়াও ইনিস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইইআর) নামে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ২২ নবেম্বর ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু করলেও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন। এর মধ্যে ১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তরিত হয়। এসময় তীব্র আন্দোলনের মুখে ফের ১৯৯০ সালের গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্ততির হয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার পিটিআই এবং প্যারামেডিকেল ভবনে অস্থায়ী কার্যক্রম চলে। ১৯৯২ সালের পহেলা নবেম্বর গড়ে উঠে দুটি ভবন। এর মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়টি পায় এক স্থায়ী ঠিকানা। ইতোপূর্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হতোনা। পরে ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ছাত্রী ও অমুসলিম শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চালু হয়। ১৯৯২ সালের ১ নবেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ ঠিকানায় শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। সেই সাথে উচ্চতর ডিগ্রী প্রদানের জন্য ১৯৯৩ সালের দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.ফিল এবং পি.এই.ডি কার্যক্রম শুর হয়। ২টি ভবন ও ২টি অনুষদের অধীনে ৪টি বিভাগে ৮ জন শিক্ষক ও ৩শ’ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের অধীনে চালু রয়েছে ৩৪টি বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট সূত্রে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ৩৮৪জন শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের মধ্যে ১০ হাজার ২৯১ জন ছাত্র এবং ৫ হাজার ৯৩ জন ছাত্রী। বর্তমানে ৩৯৭ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৫৯ জন কর্মকর্তা, ১৭৭ সহায়ক কর্মচারী ও ১৭৭ জন সাধারণ কর্মচারী রয়েছেন। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করেছেন ৪৬৪ জন, এম.ফিল ৬৬৬ জন। এছাড়া স্নাতক ২৪ হাজার ৯৩৩জন ও ২২ হাজার ৫৮১ জন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া কিছু বিভাগ প্রস্তাবিত রয়েছে। যা বাস্তবায়ন হবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভাগ সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯টি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দেশি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্সটিটিউটের সঙ্গে অ্যাকাডেমিক বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় উন্মুক্ত হয়েছে নতুন দ্বার। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, ৪১ বছরেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। যার প্রধান কারণ নোংরা রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতির কাঁদা ছুঁড়োছুঁড়ি। শিক্ষকরা পাঠদানের বিপরীতে রাজনীতিতেই বেশি সময়যাপন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৮ টি আবাসিক হল। যার মধ্যে ছাত্রদের ৫টি এবং ৩টি ছাত্রী হল। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ইবি আবাসিক উল্লেখ থাকলেও ৪১ বছরে আবসন সংকট কমেনি। এছাড়া হলের ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ অনেক পুরোনো। যুগের সাথে তাল মিলাতে নতুন বিভাগ খোলা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে বিভাগ খোলা হলেও শ্রেণীকক্ষের বন্দোবস্ত হয়নি। টিএসসিসিতে, অন্য বিভাগের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করে যাযাবরের মতো চলছে অনেক বিভাগ। এছাড়াও পর্যাপ্ত ল্যাব না থাকায় গবেষণাবিমুখ হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞান অনুষদীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আবাসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাদের যাতাযাতের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাব। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত অধিকাংশ বাস ভাড়ায় চালিত ও ফিটনেসবিহীন। ফলে প্রায়শই সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্যতম দুর্ভোগ সেশনজট। আগের থেকে অনেক বিভাগে জট তুলনামূলক কমলেও কিছু বিভাগে সেশন জটে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের শারীরিক চর্চায় জিমনেশিয়াম করা হলেও তার অবস্থা বেহাল। পর্যাপ্ত ব্যয়ামের যন্ত্র নেই, প্রশিক্ষকও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রফেসর ড. এ এন এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া সম্প্রতি ১৩তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।
×