ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের গ্রেফতারের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২২ নভেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের গ্রেফতারের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক ও চরমোনাই পীর ফয়জুল করীম কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের হুমকির প্রতিবাদে তাদের কুশপুতুল দাহ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে তাদের কুশপুতুল দাহ করা হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে রাখে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরও বক্তব্য রাখেন ভাস্কর শিল্পী রাশা, গৌরব ’৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিলন ঢালীসহ নেতৃবৃন্দ। প্রতিবাদ সমাবেশে ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, সৌদি আরব, ইরানসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। জাতির পিতার ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীরা কখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এহেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয়েছে। এদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আল মামুন বলেন, গত ১৩ নবেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তারা যেভাবে গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষোদগার করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহতুল্য অপরাধ হলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারী ব্যবস্থা কিংবা সরকারদলীয় কোন প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি। আওয়ামী লীগের নীরবতা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। জাতির পিতার অবমাননাকারী ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে দ্রুত গ্রেফতার না করলে আমরা ধরে নেব আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সাত দফা দাবি উত্থাপন করে। সেগুলো হচ্ছে, জাতির পিতাকে অবমাননা করার অপরাধে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে গ্রেফতার করতে হবে, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নির্মাণ করতে হবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
×