ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর বাকি তিনটি

পদ্মা সেতুতে বসল ৩৮তম স্প্যান

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২২ নভেম্বর ২০২০

পদ্মা সেতুতে বসল ৩৮তম স্প্যান

সংবাদদাতা, মুন্সীগঞ্জ, ২১ নবেম্বর ॥ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের নদী ও তীরের মধ্যে ১ থেকে ২নং পিয়ারের ওপর বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর ৩৮তম স্প্যান। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর পাঁচ হাজার ৭০০ মিটার। শনিবার দুপুর আড়াইটায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের দক্ষ প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় সফলভাবে স্প্যানটি বসানো হয় বলে জানান পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের। সেতুর প্রকৌশলীরা জানান, স্প্যানটি বসাতে তাদের নিতে হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি ও সতর্কতা। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সেতুর এটিই প্রথম স্প্যান। এর ওপর দিয়েই যে কোন ভারি যানবাহনসহ পদ্মা সেতুতে ট্রেন উঠবে। অন্যান্য পিয়ারে ৬-৭টি পাইল ব্যবহার করা হলেও এটিকে শক্তিশালী করার জন্য ১৬টি পাইল ব্যবহার করা হয়েছে। ইতোপূর্বে কয়েকবার প্রস্তুতি নিলেও শনিবার সকাল ৯টায় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টক জেটিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় থাকা ধূসর রঙের ১৫০ মিটার লম্বা তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের ৩৮তম স্প্যানটি নিয়ে দুপুরের মধ্যেই মাওয়া প্রান্তকে পদ্মা সেতুর সঙ্গে বন্ধন সৃষ্টি করে দেয়া হয়। বুধবার পিয়ার দুটিতে বেয়ারিং বসিয়ে সেটিংসহ অন্যান্য কাজ করা হয়। বৃহস্পতিবার সম্ভাব্য সব পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়। তবে শনিবার সকালে ঘন কুয়াশা আর বৃষ্টির কারণে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের কাছের পিয়ারে স্প্যান বসাতে কিছু বিলম্ব হয় বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৩৮তম স্প্যান বসানোর জন্য ইতোপূর্বে দেয়া সম্ভাব্য তারিখ ১২ ও ১৯ নবেম্বর বিলম্ব হওয়ার কারণ ছিল পদ্মা নদীতে ২নং পিয়ার থাকলেও ১নং পিয়ারটি ডাঙ্গায় ছিল। আর দুটি স্প্যানের মধ্যবর্তী স্থানে ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান ই’ চলাচলের মতো পানির গভীরতা না থাকায় নোঙ্গর করতে পারছিল না বলে জানিয়েছিলেন পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা। পদ্মা সেতুর ৩৭তম স্প্যান (২-সি) পিয়ার ৯ ও ১০ নম্বরের ওপর ১২ নবেম্বর বৃহস্পতিবার বসানো হয়েছে। আর বিজয় দিবসের পূর্বেই বাকি তিনটি স্প্যান বসানো হবে বলে জানান পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা। তারা আরও জানান, চলতি মাসে আরেকটি স্প্যান ১০ ও ১১ নং পিয়ারে বসানো হবে। আর বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ২ তারিখ ১১ ও ১২নং পিয়ারে বসবে ৪০তম স্প্যান। সর্বশেষ স্প্যানটি বিজয় দিবসের পাঁচদিন পূর্বে ১০ ডিসেম্বর বসানোর জন্য পুরোদমে চলছে কর্মযজ্ঞ। ৩৭তম স্প্যান বসানোর ছয়দিন পর ২১ নবেম্বর বসানো হয় ৩৮তম স্প্যান। বর্তমান দৃশ্যমান পাঁচ হাজার ৭০০ মিটার, আর বাকি (১৫০ মিটারের তিনটি স্প্যান) ৪৫০ মিটার বসানো হলেই ৬১৫০ মিটারের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শতভাগ দৃশ্যমান হবে। পদ্মার মাওয়া প্রান্তে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের বাইরে একটি স্প্যান খুঁটিতে ওঠানোর জন্য শতভাগ প্রস্তুত করে রাখা আছে। আর দুটি স্প্যানও প্রস্তুত করে রাখা ওয়ার্কশপের ভেতরে। ইতোপূর্বে অক্টোবর মাসের ১১ তারিখ ৩২তম স্প্যান, ১৯ তারিখ ৩৩তম স্প্যান, ২৫ তারিখ ৩৪তম স্প্যান ও ৩১ তারিখ শনিবার ৩৫তম স্প্যান, ৬ নবেম্বর ৩৬তম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানো হয়। ৩৪নং স্প্যান বসাতে বৈরী আবহাওয়া, ৩৫নং বসাতে নাব্য সঙ্কট, ৩৬তম স্প্যান বসাতে কারিগরি জটিলতার কারণে প্রত্যেকটি বসাতে একদিন বিলম্ব হয়েছে। তবে ৩৭তম স্প্যান বসাতে তেমন কোন জটিলতা হয়নি। আর ৩৮তম স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে নাব্য সঙ্কট, কারিগরি জটিলতা, নদী শাসনের কারণে ছয়দিন বিলম্ব হয় বলে জানান পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা। মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। বাকি তিনটি স্প্যান বসবে মূল নদীতে। সেগুলো বসাতে তেমন বিলম্ব হবে না। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান শুরু হয় পদ্মা সেতু। এর পর একে একে বসানো হয় ৩৮টি স্প্যান। ৪২টি পিয়ারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সব পিয়ার দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি স্প্যানগুলো পিয়ারের ওপর ওঠানোর জন্য প্রস্তুত করা আছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। ছয় দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টীল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পুরো কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য ২০২২ সালের শুরুতে সেতুটি উন্মুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×