ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাসে অগ্নিসন্ত্রাসে সরাসরি জড়িত তিনজন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২২ নভেম্বর ২০২০

বাসে অগ্নিসন্ত্রাসে সরাসরি জড়িত তিনজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ১২ নবেম্বর ঢাকায় অগ্নিসন্ত্রাস চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই নিয়ে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন ঢাকায় অগ্নিসন্ত্রাস চালানোর ঘটনায় প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। গত ১২ নবেম্বর ঢাকা-১৮ নম্বর সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের দিন আচমকা ঢাকায় অন্তত এগারোটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভোট কেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনাও ঘটায় বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় মোট ১৬টি মামলা হয়। আসামি করা হয় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত দুইটি করে মোট চারটি মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমাবাজির ঘটনায় দায়েরকৃত ১৬ মামলায় আসামি করা হয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। চলমান অভিযানে ইতোমধ্যেই অন্তত ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ইতোমধ্যেই এসব মামলায় ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গত ২১ নবেম্বর শনিবার গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া তথ্য মোতাবেক পল্টনে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। শনিবার ভোরে ঢাকার পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, লিয়ন হক (৩০), কাজী রেজাউল হক বাবু ওরফে জিম বাবু (২৮) ও আজাদ (২৮)। ডিএমপি’র মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ তিনজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নয়াপল্টন বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে থেকে মিছিল বের করে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে এসে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মিছিল থেকে গ্রেফতারকৃত তিনজনসহ আরও কয়েকজন বিএনপি পার্টি অফিসের বিপরীত পার্শ্বে কর অঞ্চল-১০ এর সামনে রাখা সরকারী স্টাফ বাসে আগুন দেয়। গ্রেফতারকৃতরা বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা কে কোন দলের এবং তাদের পদ পদবি কি তা জানার চেষ্টা চলছে। এদিকে গত ১৮ নবেম্বর গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ১২০ নেতাকর্মীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও রয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্নস্তরের নেতাদের নির্দেশে তাদের দলের নেতাকর্মীরাই যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। রাজনীতির মাঠ গরম করার জন্যই অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়। ইতোমধ্যেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন ও ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে ফোন করে যুবদল যে গাড়ি পুড়িয়েছে তা নিশ্চিত করেন। তাদের দু’জনের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই কথোপকথনে বিএনপি নেতাদের নির্দেশে বাসে অগ্নিসন্ত্রাস চালানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবেই প্রকাশ পেয়েছে। এবারের চালানো অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে ২০১৫ সালে দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা অবরোধের মধ্যে অগ্নিসন্ত্রাস চালানোর হুবহু মিল রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা আরও মারাত্মক ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। তারা সারাদেশেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতার কারণে সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
×