ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত নারীদের ধর্ষণে আকৃষ্ট করে যে সাতটি ব্যাধি

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২১ নভেম্বর ২০২০

মৃত নারীদের ধর্ষণে আকৃষ্ট করে যে সাতটি ব্যাধি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মৃত নারীকে ধর্ষণের ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মর্গে কাজ করা মুন্না নামের ২০ বছর বয়সি এক ডোম মৃত নারীদের নিয়মিত ধর্ষণ করতেন। ডোমের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মুন্না মৃত সাতজন কিশোরীকে ধর্ষণ করেছেন। এই ধরনের জঘন্যতম ধর্ষণের ঘটনা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারেন না বলে মনে করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। বিকৃত মানসিকতার কারণে সে মৃত কিশোরীদের ধর্ষণ করেন। এছাড়া নেক্রোফিলিয়া, পেডোফিলিয়া, এক্সিবিশনিজম, ফ্রটারিজম, সেক্সুয়াল স্যাডিজম, পাইরোমেনিয়া, ক্লেপটোম্যানিয়া এই সাত মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষ মৃত নারীদের ধর্ষণ করে। মৃত নারী, পশুপাখি, গাছপালা কিংবা মলমূত্র দেখলেই তাদের যৌন চাহিদা জাগ্রত হয়। সুযোগ পেলেই যে কোনো জিনিসকে ধর্ষণ করেন এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় ব্যক্তি। নারী ও পুরুষের সকলের মাঝে যৌন চাহিদা আছে। আর এই চাহিদা থেকেই মানুষের মাঝে বাকবিতণ্ডা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে এমন কিছু যৌন চাহিদা ও ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে যা সকলের দৃষ্টিকোণে জঘন্যতম ও বিব্রতকর। মনোরোগ বিজ্ঞানিরা একে বিকৃতি যৌন চাহিদা বলে থাকেন। বর্তমান অনেক দেশে সমকাম একটি আইনসিদ্ধ যৌনক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত আছে। তবে মৃত ব্যক্তিকে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা মানুষের মনকে পশুত্বের চেয়েও নিচে নিয়ে গেছে। যৌন বিকৃতি কত প্রকার এটা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। আবার অন্যদিকে ভারতের এক গবেষণায় ৫৪৯ রকমের যৌন বিকৃতির তালিকা পাওয়া গেছে। ডা. জোনাথন রসম্যান ও ডা. ফিলিপ রেসনিক তিন প্রকারের নেকরোফিলিয়া রোগীর উল্লেখ করেছেন : ক. নেকরোফিলিয়া হোমিসাইড : যারা ভিকটিমের মৃতদেহের সাথে সহবাসের উদ্দেশ্যে ভিকটিমকে হত্যা করে, খ. রেগুলার নেকরোফিলিয়া : যারা যৌন আনন্দের জন্য মৃতদেহকে ব্যবহার করে, গ. নেকরোফিলিক ফ্যান্টাসি : যারা মৃতদেহের সাথে কল্পনায় সহবাস করে যৌন আনন্দ লাভ করে কিন্তু বাস্তবে করে না। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের এক ডোমের সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গত শুক্রবার, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে নারীদের মরদেহের সাথে ‘যৌন লালসা চরিতার্থ’ করতো। এই আচরণকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করেছে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা যাকে 'নেক্রোফেলিয়া' বলা হয়। এরকম কয়েকটি মানসিক ব্যাধির বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়: ১. নেক্রোফিলিয়া ‘নেক্রোফিলিয়া’ ব্যাধিতে যারা আক্রান্ত হন তারা মৃত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বেশি ভালোবাসে। ১৯৮৯ সালে ১২২ জন নেক্রোফিলিয়া ব্যক্তির কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বিভাগ একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, যৌন সম্পর্ক করতে বাধা দেবে না এমন নারীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট থাকেন নেক্রোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা। ২. পেডোফিলিয়া যারা পেডোফিলিয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে নারীদের নির্যাতন করতে বেশি ভালোবাসেন। সেজন্য এই ধরনের রোগীরা শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ইউরোপোলের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, করোনাভাইরাসের সময়ে শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও হয়রানি বেশি হয়েছে। পেডোফিলিয়ার সংজ্ঞা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন ও ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনে ধারণা প্রকাশ করা হয় যে, শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চাওয়া সব ব্যক্তিকেই পেডোফাইল বলা যায় না, আবার সব পেডোফাইলরা শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় না। ৩. এক্সিবিশনিজম ছয় মাসের মধ্যে অনুমতি ছাড়াই অন্য কাউকে নিজের যৌনাঙ্গ প্রদর্শনের তীব্র বাসনা অনুভব করেন এমন ব্যক্তি ‘এক্সিবিশনিজম’ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইংল্যান্ডের একটি প্রধান মেট্রোপলিটান শহরের ৪৫৯ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। ঐ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বয়স্ক নারীদের এই ধরনের ব্যবহারের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। ৪. ফ্রটারিজম ফ্রটারিজম ব্যাধিতে যিনি আক্রান্ত তিনি অনুমতি ছাড়াই নিজের যৌনাঙ্গ অন্যজনের শরীরে ঘর্ষণ লাগাতে চায়। এ ধরনের অপরাধ সাধারণত জনসমাগমের জায়গা বা ভিড় থাকা গণপরিবহনে বেশি সংঘটিত হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে অক্সফোর্ড ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত হওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে যৌন হয়রানিমূলক অপরাধগুলোর মধ্যে এটির বিষয়েই সবচেয়ে কম পরিমাণ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়। ৫. সেক্সুয়াল স্যাডিজম আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, অপর ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণার কারণে যৌন উত্তেজনা বা তৃপ্তি লাভ করার কল্পনা, বাসনা করা বা ঐ ধরনের কার্যক্রম করাকে ‘সেক্সুয়াল স্যাডিজম’ বলা হয়ে থাকে। তবে সেক্সুয়াল স্যাডিজমের সংজ্ঞা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মতপার্থক্য থাকায় অ্যামেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন এমন ব্যক্তিদেরই সেক্সুয়াল স্যাডিস্ট হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছে, যাদের নির্যাতনের ভুক্তভোগীরা যৌন মিলনের সময় যন্ত্রণা গ্রহণে সম্মত থাকেন না। ৬. পাইরোমেনিয়া পাইরোমেনিয়া একটি ‘ইমপালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার’ বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার এক ধরনের ব্যাধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি সবকিছুতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার তীব্র ইচ্ছা অনুভব করেন। পাইরোমেনিয়াকদের আচরণ পর্যালোচনা করে ১৯৫১ সালে লেখা বই ‘প্যাথলজিকাল ফায়ারসেটিং’ এ ১,১৪৫ জন পাইরোমেনিয়াকের তথ্য বিশ্লেষণ করে লেখকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, বুদ্ধিমত্তার সাথে এই ধরনের ব্যবহারের সরাসরি সম্পর্ক থাকতে পারে। ঐ গবেষণায় পর্যালোচনা করা ১,১৪৫ জন ব্যক্তির প্রায় ৭০ ভাগের বুদ্ধিমত্তা ছিল গড় বুদ্ধিমত্তার নিচে। ৭. ক্লেপটোম্যানিয়া ক্লেপটোম্যানিয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো কিছুর কারণ ছাড়াই অন্যের জিনিস চুরিতে উদ্বুদ্ধ হন। তবে এই রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সুস্পষ্টভাবে মতামত দেয়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে যথাযথ চিকিৎসায় ক্লেপটোমেনিয়াকদের রোগ ভালো হয়।
×