ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজও মানুষ খুনের হাসপাতাল?

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২২ নভেম্বর ২০২০

আজও মানুষ খুনের হাসপাতাল?

করোনা আমাদের দেশবাসীকে জানার প্রথম সুযোগ করে দিয়েছে- দেশে অসংখ্য প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক লাইসেন্সবিহীনভাবে কাজ করে চলেছে। করোনা পরিস্থিতি বা তার সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার মূলে সরকারীভাবে তখন জানানো হলো, আনরেজিস্টার্ড হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ‘নো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। তাই অভিযান চলবে সেগুলো খুঁজে বের করতে। অভিযান চলল কিছুকাল। অনেক অনিয়ম যেমন, ডাক্তারদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই সরবরাহ না করেই তাদের করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত করা হয়েছিল। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রেও তাই। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে মারাও গেলেন। অবশেষে সেগুলো দেয়া হলো। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আশ্বাস্ত হলেন। পরে জানা গেল ওগুলো জাল বা নকল। আরও জানা গেল স্বাস্থ্য বিভাগের এক নির্দিষ্ট ঠিকাদার ঐ জাল মাস্ক প্রভৃতি চড়াদামে সরবরাহ করেছেন এবং তিনি নাকি একজন কেউকেটা। তিনি অধরাও বটে- অধরাই থেকে গেলেন তিনি দিব্যি বহাল তবিয়াতে। আজও নিশ্চয়ই তার ঠিকাদারী বাতিল করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে কোন মামলাও দায়ের হয়নি। সংবাদপত্রে তেমন কোন খবর আজও প্রকাশিত হয়নি। আমরাও দিব্যি ভুলে গেলাম এগুলো এবং এই অবসরে হয়তো সম্ভবত সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে তার ঠিকাদারী পূর্ণ উদ্যমে অব্যাহত আছে। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো চিহ্নিত করা, তাদের অপকর্মগুলো চিহ্নিত করা, রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাধিক ফি ও ওষুধপত্রের দাম আদায় করার অভিযোগে কিছু মালিককে গ্রেফতার করা বেশ জোরেশোরেই শুরু হলো। কিছুদিন পর কি দিয়ে কি হলো বুঝে ওঠার আগেই পত্রিকাগুলোতে খবর বেরুল- স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বন্ধ করতে বলেছে। অপরদিকে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যার মধ্যে অবশ্যই লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোকে লাইসেন্স ফি জমা দিয়ে লাইসেন্স করিয়ে নিতে হবে। এক দফায় ঐ কাজের সময়সীমা বাড়ানোও হলো। অভিযান বন্ধ করে দেয়া হলো জনমতকে উপেক্ষা করে। বুঝতে অসুবিধে হয় না কেউকেটারা অনেক হাসপাতালের মালিক। তাই ঢাকার কয়েকটা হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা বন্ধ করতে হলো। ‘নো টলারেন্স’ নীতির মাজেজা স্পষ্ট হলো। ভুলে গেছি এটা কত দিন আগের ঘটনা। তবে পাঁচ ছয় মাস হবে বলে অনুমান করি। অতঃপর খবর এলো মারাত্মক খবর-অবিশ্বাস্য। মাইন্ড এইড হাসপাতাল-এএসপি হত্যা কী মারাত্মক ও ভয়াবহ খবরই না পরিবেশন করেছে বিগত ১১ নবেম্বরের পত্রিকাসমূহ। সুপরিচিত দৈনিক ‘সমকাল’ ঐ তারিখের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘সাউন্ড প্রুফ টর্চার সেলে চিকিৎসা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে লিখেছে- মানসিক রোগী ও মাদকাসক্তদের ‘চিকিৎসা’ দেয়ার নামে ‘মাইন্ড এইড হাসপাতালে অসুস্থদের ওপর চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন। রাজধানীর আদাবরে বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ২নং সড়কে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে গড়ে তোলা হয়েছিল সাউন্ড প্রুফ দুটি টর্চার সেল। এর একটিতেই গত সোমবার (৯ নবেম্বর ২০২০) নৃশংস নির্যাতনের ফলে মারা যান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম। তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটান পুলিশে কর্মরত ছিলেন।’ গত মঙ্গলবার সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, একটি তিনতলা আবাসিক ভবনের পুরোটা জুড়েই হাসপাতাল। অথচ হাসপাতালটির কোন বৈধতাই নেই। নির্যাতনে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতারের পর কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে সাংবাদিকরা দেখেন, পরিপাটি করে সাজানো কক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐ বিশেষ দুটি কক্ষ। নিচতলা ও দোতলার কক্ষ দুটিই সেই গোপন কুঠুরি। দেয়ালের চারপাশে ছাদ পর্যন্ত ভারি ফোমের আস্তরণ, মেঝেতেও একই অবস্থা। হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকরা জানতে পারলেন, ওই দুটি গোপন কক্ষে চিকিৎসার নামে মানসিকভাবে অসুস্থদের নিয়মিতই নির্যাতন করা হতো। ভর্তির পরেই রোগীদের বশে আনতে গোপন কুঠুরীতে নিয়ে যাওয়া হতো। ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না, তাদেরও ঠাঁই হতো সাউন্ড প্রুফ চর্টার সেলে। হাসপাতালের কর্মীরা আরও জানান, মানসিক চিকিৎসার জন্য সোমবার সকালে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকেও দোতলার সাউন্ড প্রুফ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্মীরা তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়। ওই কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজে সেই নির্যাতনের দৃশ্য স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। আনিসুলের মৃত্যুর পর সবাই নড়ে চড়ে বসলেও দেড় বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই অবাধে চলছিল হাসপাতালটির কার্যক্রম। অবৈধ এই হাসপাতালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একাধিক চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় ও হাসপাতাল, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল এবং কেন্দ্রীয় মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের একাধিক চিকিৎসকও চিকিৎসা দিতেন। জানা গেছে, হাসপাতালের মালিকানায় রয়েছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে ডা. নিয়াজ মোর্শেদ এর সার্বিক কার্যক্রম দেখভাল করতেন। কিন্তু তিনি অন্য এক হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালটির কর্মী রুমা আক্তার জানান, যে সব রোগী খারাপ আচরণ করত তাদের ঐ দুটি কক্ষে আটকে রাখা হতো। সেখানে কেউ কান্নাকাটি করলেও শব্দ বাইরে আসত না। তবে বড় স্যারেরা কক্ষের ভিতরের দৃশ্য সিসিটিভিতে মনিটর করতেন। আনিসুল করিমের ওপর নির্যাতন সোমবার আনিসুল করিমের সঙ্গে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান তাঁর চিকিৎসক বোন উম্মে সালমা সাথী। তিনি জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই হাসপাতালের নিচতলায় বসে হাল্কা খাবার খান তার ভাই। এই পর্যায়ে হাসপাতালের লোকজন এসে তাঁকে নিয়ে যান। তখন তিনি সঙ্গে যেতে চাইলেও দোতলার কোলাপসিকল গেট আটকে দেয়া হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজে নির্যাতনের পুরো ঘটনাটা দেখতে পান। ফুটেজে দেখা যায় বেলা ১১-৫৫ মি. এর দিকে আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হচ্ছে। পাঁচ ছয়জন মিলে তাঁকে মেঝেতে ফেলে চেপে ধরতে দেখা যায়। এর পর আরও দুজন এসে তাঁর পা চেপে ধরে। ওই সময় মাথার দিকে থাকা দুজন হাতের কনুই দিয়ে তাঁকে আঘাত করতে থাকে। একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে তাঁর হাত পেছনে বাঁধতেও দেখা যায়। পুরো ঘটনার সময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদকে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওর চার মিনিটের মাথায় আনিসুলকে উপুড় করলেও তার দেহ নিস্তেজ অবস্থায় ছিল। একজনকে তখন তার মুখে পানি ছিটাতে দেখা গেছে। সাত মিনিট পর সাদা এ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দিতে দেখা যায়। এর দুই মিনিট পর আনিসুলের বুকে পাম্প করেন এ্যাপ্রোন পরা ওই নারী। অনুমোদনহীন হাসপাতাল? সারাদেশে মাদকাসক্তদের বেসরকারী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন দেয়ার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ৩২৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাইন্ড এইড মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতাল নামে এই প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ২২ আগস্ট তালিকাভুক্ত হয়। সেখানে ৩০ শয্যা থাকার কথা থাকলেও অর্ধশতাধিক শয্যা দেখা গেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোন অনুমোদন ওই হাসপাতালের ছিল না। গত মঙ্গলবার হাসপাতালটি পরিদর্শন করে ঢাকার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মোঃ মঈনুল আহসান এ তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি চালানোর মতো সুবিধা ও জনবল কিছুই না থাকায় তাদের আবেদন স্থগিত করা হয়। ফলে, এ হাসপাতালটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি আরও বলেন, এটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে চালাচ্ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে জরুরী প্রয়োজনের জন্য কিছু ক্লিনিক্যাল ফ্যাসিলিটিজও হাসপাতালে ব্যবস্থা রাখতে হয়। কিন্তু তাদের সে ব্যবস্থাও ছিল না। আনিসুল করিমের আচরণ এএসপি আনিসুল করিম নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মাইন্ড এইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রচারণা চালাতে থাকে এএসআই আনিসুল করিম হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। তাকে নিবৃত্ত করতে গেলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। কিন্তু মঙ্গলবার ঐ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, সেখানে নেয়ার পর আনিসুল বেশ শান্ত ছিলেন। তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ছেলেকে ঐ হাসপাতালে নেয়ার সময় তিনি সঙ্গে ছিলেন। সেখানে তার ছেলে একেবারে শান্ত ছিল। সবার সঙ্গেই সে স্বাভাবিক আচরণ করে। গত কয়েকদিন ধরে সে চুপচাপ থাকত। সোমবার পর্যন্ত ঐ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭। তাদের ১৬জন ঐ রাতেই চলে যান। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন কক্সবাজারের বাসিন্দা আনিসুল হক চৌধুরী। তবে মঙ্গলবার তিনিও হাসপাতাল ছাড়েন। তিনি বলেন, এএসপি আনিসুল করিম বেশ ভদ্রভাবে হেঁটে ওপরে আসেন। তিনি কোন ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেননি। হেঁটে আসার সময় কারও সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও করেননি। এরা চিকিৎসার নামে গোপন কক্ষে নিয়ে মারধর করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ১১ নবেম্বর দুপুরের টিভি নিউজে জানা গেল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্স নিয়ে মাইন্ড এইডের শুধু মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত ব্যাপারে চিকিৎসার অনুমতি ছিল। কিন্তু তারা মানসিক রোগীর চিকিৎসা করার ফলে কোন লাইসেন্স না নিয়েও অবৈধভাবে মানসিক রোগীর চিকিৎসা করায় লাইসেন্স বাতিল করেছে। এখানে প্রশ্ন জাগে, মাদকদ্রব্য অধিদফতর খোদ রাজধানীর বুকে স্থাপিত এই হাসপাতালে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার আইনী সুযোগ থাকলে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো বাস্তবে কি করছে তার খোঁজ খবর কেন রাখেনি? এই সব প্রশ্নে জবাবদিহির দিকটা উপেক্ষিত হলো কেন? আরও অসংখ্য হাসপাতাল বা ক্লিনিক হয়তো মাদকদ্রব্য অধিদফতরের লাইসেন্স নিয়ে বা না নিয়ে একই রকমের মানসিক রোগীদেরও চিকিৎসা গোপনে বা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে! সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব কি অবহেলাযোগ্য? স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তব চেহারা ২০২০ সালে দেশ-বিদেশের সামনে উন্মোচিত হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ উপলক্ষে। এদের বিরুদ্ধে এদের অনুমোদনে পরিচালিত হাসপাতালগুলোতেও তো কতই না বে-আইনী কারবারের ঘটনা ঘটছে-ঐ সময় জানা গিয়েছিল। জানা গিয়েছিল লাইসেন্সবিহীন বহু হাসপাতাল-ক্লিনিকের অবৈধ অস্তিত্বের কথা খোদ রাজধানী শহরেই। কিছু কিছু ব্যবস্থাও বে-আইনী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেয়া শুরুও হয়েছিল। সরকারীভাবে নির্দেশও দেয়া হয়েছিল যাদের রেজিস্ট্রেশন নেই- তারা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয় যেন। এক্ষেত্রে অধিদফতরের ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কি ছিল না দেশের সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিক রেজিস্ট্রেশন নিল কি না- তার নির্ভরযোগ্য তদন্ত করা? নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর কোন সুযোগ আছে কি স্বাস্থ্য অধিদফতর-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের- কোটি কোটি মানুষের জীবন সুস্থ রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হাতে থাকা সত্ত্বেও। এখন তো উদঘাটিত হলো, খোদ রাজধানীতেই মাইন্ড এইড নামক এক হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতের ও মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমতি ছাড়াই প্রাকাশ্যে দিব্যি মানসিক রোগীর চিকিৎসা পরিচালনা করে আসছিল। ঢাকা শহরে এবং দেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে অসংখ্য হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়োজিত রয়েছে কি না-সে খরবটি কি তাঁরা রাখেন? স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ করোনার বহু আগে থেকেই চলে আসছিল। পত্রপত্রিকায় এসব ব্যাপারে বহু প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়ে আসছিল কিন্তু সরকারীভাবে এগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ আজও নেয়া হয়নি। উল্টো বরং কতিপয় ক্ষমতাবানকে বাঁচাতে অবৈধ হাসপাতাল, সময় অতিক্রান্ত ওষুধ, মজুদ, বিক্রি এবং হাসপাতালগুলোতে নানা স্বাস্থ্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হতে না হতেই তা বন্ধ করে দিয়ে দুর্নীতিবাজ ও আইনভঙ্গকারীদের তাদের যাবতীয় অপকর্ম চালিয়ে যেতে পরোক্ষ অনুমোদন দেয়া হলো। মাইন্ড এইড নামক হাসপাতালে বেমালুম পুলিশ অফিসার হত্যার যে ভয়াবহ ঘটনা জানা গেল তা ঐ হাসপাতালে এবং আরও কোন কোন হাসপাতালগুলোতে চলছে কি না- মাইন্ড এইডে এর আগে কতজনকে হত্যা করা হয়েছে এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন। ভাগ্যিস মাইন্ড এইড হাসপাতাল পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার মাধ্যমে জনগণকে জানার সুযোগ দিল তারা কি ভয়াবহভাবে তাদের কর্মকাণ্ড নির্বিবাদে রাজধানীর বুকে চালিয়ে যাচ্ছিল। নইলে তো দেশবাসী অন্ধকারেই থাকতেন। লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত
×