ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাদাতকে নড়াইলে সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ২১ নভেম্বর ২০২০

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাদাতকে নড়াইলে সংবর্ধনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল ॥ সাইবার অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে সাদাত রহমান সাকিব শিশুদের নোবেল খ্যাত আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার জয় করে নড়াইলে ফিরে এক প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, ‘ততদিন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতদিন পর্যন্ত বিশ্বে সাইবার বুলিং এর অভিযোগ পাব’। কিভাবে ইন্টারনেটকে আরও নিরাপদ করা যায় এবং কিশোরদের সম্পূর্ণ নিরাপদ করা যায় সেজন্য সারা দেশের ৬৪টি জেলায় দ্রুত সাইবার টিনস-এর এই অ্যাপ বিস্তারের চেষ্টা করবেন। তিনি আশা করছেন, এটি পুরো বিশ্বের জন্য একটি মডেল হবে। আন্তর্জাতিক শিশু শন্তি পুরস্কারের সঙ্গে সম্মানির ১লাখ ইউরোর পুরো টাকা অ্যাপটির উন্নয়নে ব্যয় করা হবে বলে জানান। তার এ কাজে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম যথেষ্ট পরামর্শ এবং সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাদের এই সাহা সহযোগিতা না পেলে এতো দূর আসতে পারতেন না। এছাড়া নড়াইলে মানুষ এবং গণমাধ্যম কর্মী তাকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছে। এজন্য তিনি নড়াইলবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে ফিরে প্রথমেই নড়াইল প্রেসক্লাবে আসেন এবং সেখানে এক তাৎক্ষনিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় সাথে তার বাবা মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, মা মলিনা খাতুন, নড়াইল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মনির মল্লিক, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ এনামুল কবির টুকু,সহ-সভাপতি সৈয়দ নাঈমুর রহমান পিরোজ, সাধারণ সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলু, সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সাংবাদিক মলয় নন্দী, সাদাতের হাতে গড়া নড়াইল ভলেন্টিয়ার্স এবং সাইবার টিনস-এর বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তাকে নড়াইল প্রেসক্লাব এবং নড়াইল সিটি কলেজের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৩ নবেম্বর শিশুদের রক্ষায় সচেতনতামূলক অ্যাপ উদ্ভাবনের জন্য নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ‘কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন’ তাকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করে। এদিন নেদারল্যান্ডস এর হেগে এক ভার্চয়াল অনুষ্ঠানে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফ জাই। নেদারল্যান্ডসে সাদাত রহমান সরাসরি উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার গ্রহন করেন । ৪২টি দেশের ১৪২জন শিশুর মধ্যে নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান শিশুদের অধিকার, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা রক্ষায় অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি এ পুরস্কার পান। নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ বর্ষের ছাত্র সাদাত রহমান সাকিব আরও জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেচ্ছাসেবী সংগঠন নড়াইল ভলেন্টিয়ার্স গড়ে তোলেন। প্রথম অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক এবং মানবিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতেন। ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রোকাইয়া রূপা সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বিষয়টি টেলিভিশন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় দেখে আমাকে খুব নাড়া দেয়, ভাবি এটা কেন ? তখন কিভাবে সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়া শিশু-কিশোরদের সাহায্য করা যায় সেই উপলব্ধি থেকে আমরা বন্ধুরা মিলে গত বছরের অক্টোবরে ছোট্ট অনলাইন প্লাটফরম ‘সাইবার টিনস’ নামে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করি। এ কাজে নড়াইলের এসপি মহোদয় অনেক সহযোগিতা করেছেন। প্রথমে কিশোর-কিশোরিদের মানসিকভাবেভাবে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাদের সাইবার এক্সপার্টদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক অপরাধিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ফলে অনেক কিশোর-কিশোরি এই সাইবার ক্রাইম থেকে মুক্তি পেয়েছে। সাদাত জানায়, ‘কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন’ তার ভবিষ্যতের পড়াশোনার ব্যয়ভার গ্রহণ করতে চেয়েছে। ওয়ালটন কোম্পানি বাংলাদেশের আসার পর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা প্রদান করেছে এবং এ কাজকে এগিয়ে নিতে যেকোনো সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। ইউনিভারসিটি অব প্রোফেশনালসের ভাইস চ্যান্সেলর মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সরোয়ার হাসান উচ্চ শিক্ষা গ্রহনসহ এ কাজে সযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। নড়াইল ভলেন্টিয়ার্স এবং সাইবার টিনস-এর হেড অব ক্যাম্পেইন শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের এই সাফল্য সারা দেশ এমনকি সারা বিশ্বে কাজ করার একটি সুযোগ তৈরি হলো। এই সাফল্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনেক অনুপ্রেরণা যোগাবে। সাদাতের মা মলিনা খাতুন বলেন, ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তার কম্পিউটার এবং সমাজ-সামাজিকার প্রতি ঝোঁক ছিল। এসব কাজে আমরা কখনই তাকে বাঁধা দেইনি। এখন সে দেশের সুনাম বয়ে এনেছে। আমাদের এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশকরতে পারব না। আমরা খুবই আনন্দিত। সাদাতের বাবা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ একটি বড়ো সাফল্য পেল। সাদাত বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছে। দেশবাসীর সাদাতের প্রতি আন্তরিকতা দেখে আমি অভিভূত। বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে সাদাত তার বাস্তব প্রমাণ। অন্য তরুণেরা তাকে এটি দেখে এগিয়ে আসবে। জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সংগঠনটির কর্মীরা শীতবস্ত্র বিতরণ,পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেমিনার, পরিবেশ সুরক্ষা, রক্তদান কর্মসূচী, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ রোধে বিভিন্ন প্রকার সচেতনতামূলক কর্মশালা এবং ভিডিও তৈরি, অসহায় পথ শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং সহযোগিতাসহ সেবামূলক কাজ করে আসছে। এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংগঠনটি প্রথম থেকেই নড়াইলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, শহরের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হ্যান্ড ওয়াশ স্থাপন করে সবার প্রশংসা কুড়ায়।
×