ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হন্তারক বর্জনীয়

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২১ নভেম্বর ২০২০

হন্তারক বর্জনীয়

ধূমপান মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ: এটি জনস্বাস্থ্যের জন্যেও এক মহাবিপদ সঙ্কেত। শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে ক্ষতিকর এই তামাকের অনুপ্রবেশ শুধু স্বাস্থ্য বিপন্নতা নয় তার চেয়েও বেশি- প্রাণ সংহারের কারণ হতে সময় নেয় না। তারপরও ক্ষতিকারক এই বস্তুটির প্রতি মানুষের কেন এত আগ্রহ! তাও ভাবনার অতীত। এই ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটি এক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যায়। এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া কতখানি মারাত্মক হতে পারে অনেকে তা জেনেও নিয়মিত সেবন করে যাচ্ছেন। যত্রতত্র যেমন ধূমপায়ীর দেখা মেলে তেমনি এর সাবধানতা নিয়েও হরেক রকম প্রচারে ঘাটতি দেখা যায়। ২০০৫ সালেই ধূমপানের ব্যাপারে আইনী কার্যক্রম বিধি হিসেবে তৈরি হলেও তার বাস্তব প্রয়োগ অনুপস্থিত। নিষিদ্ধ এই ধোঁয়াটির প্রতি সাধারণ মানুষের কোন অনীহা দেখতে পাওয়াও যায় না। সাধারণত উদীয়মান প্রজন্মের অনেক ধরনের নিয়মবহির্ভূত, অনাকাক্সিক্ষত জিনিসের প্রতি এক প্রকার আসক্তি দৃশ্যমান হয়, যা বয়ঃসন্ধিকালের শরীর ও মনের নতুন আলোড়ন তাকে দিশেহারা করে দেয়। ভাল-মন্দের ফাঁরাক অপসৃত হয়। ন্যায়-অন্যায় বোধকে তোয়াক্কা না করার এক ধরনের হীনমনোবৃত্তিও মাথায় চেপে বসে। তবে ধূমপানের বদভ্যাস শুধু যে উঠতি প্রজন্মকে গ্রাস করে তা কিন্তু নয়-অনেক পরিণত, অভিজ্ঞ এবং বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের মধ্যেও তার প্রবণতা লক্ষণীয়। এমন অভ্যাস একবার আয়ত্ত করতে পারলে তার থেকে সরে আসা সত্যিই অসম্ভব। আইনীভাবে নিষিদ্ধই শুধু নয়, স্বাস্থ্য ও প্রাণঝুঁকির আশঙ্কাকে আমলে নিয়েই অনেকে এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে সেভাবে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও এর দীর্ঘমেয়াদি বিপরীত প্রভাব মানুষের মূল্যবান জীবনটাকে নষ্ট করে দেয়ার চরম ক্ষমতা রাখে। যদিও স্বাধীনভাবে নিজের মতো জীবনযাপন করার অধিকার মানুষের রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিকর বদভ্যাস যদি নাগরিকের যাপিতজীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে সেটাও কারোর কাম্য হতে পারে না। ধূমপান শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো পরিবেশকেও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় নিয়ে যেতে সময় নেয় না। পাশের অধূমপায়ী ব্যক্তিও পরোক্ষ সেবনের শিকার হন। পারিবারিক নির্মল পরিবেশে দূষণ প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্নেহের আধারটি বিপন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়। নিষিদ্ধ ধূমপানের ওপর শুধু আইন করা থাকলেও বিক্রির ব্যাপারে কোন বিধি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা জরুরী। এখানে সেখানে শুধু ধূমপায়ীদের আস্তানা গড়ে ওঠে তা কিন্তু নয় বিভিন্ন জায়গায় সিগারেট বিক্রি করারও যে বন্দোবস্ত তাও আমলে নেয়া একান্ত আবশ্যক। বিপন্ন ব্যবস্থায়ও কঠোর নজরদারি অত্যন্ত প্রয়োজন। মানুষ যদি কিনতেই না পারে তা হলে পান করার ইচ্ছেটুকু এক সময় চলে যেতে বাধ্য হবে। এমনিতে শিল্পোন্নত দেশের ভারি কল-কারখানার নির্গত ধোঁয়া ছাড়াও বর্জ্য পদার্থের চরম অব্যবস্থাপনায় পরিবেশ নষ্ট করার এক প্রকার কার্যক্রম চালু থাকে। আর যন্ত্রযানের বিকট আওয়াজ ছাড়াও যে মাত্রায় কালো ধোঁয়ার নির্গমন ঘটে; তাও প্রকৃতিকে নানা মাত্রিকে হুমকির আবর্তে ফেলে দেয়। আর প্রকৃতি প্রদত্ত নির্মল বায়ুও কোনভাবেই নিরাময় থাকে না। স্বচ্ছ ও নির্মল প্রতিবেশ দূষণের মাত্রাকে প্রতিনিয়তই আলিঙ্গন করে যাচ্ছে। তার ওপর মানুষের ব্যক্তিক বদভ্যাসের কারণে বায়ুদূষণ কোন্ অবস্থায় পৌঁছে যায় সেটাও পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য এক অশনি সঙ্কেত। করোনাকালও মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে গিয়ে তার শ্বাসযন্ত্রের যথার্থ নিরাময়ের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ফলে যে কোন রোগ-বালাইকে প্রতিরোধ আর প্রতিকার করতে শ্বাসনালীর অবারিত ও সুস্থ কার্যক্রম নিতান্তই জরুরী। সঙ্গত কারণে ধূমপানকে শুধু নিরুৎসাহী করাই নয়, এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনী কার্যক্রমও চালিত হওয়া সময়ের দাবি।
×