ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা পাচারে এগিয়ে

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২১ নভেম্বর ২০২০

টাকা পাচারে এগিয়ে

ভয়ঙ্কর তথ্য জানল দেশবাসী। বিদেশে টাকা পাচারে সবাইকে পেছনে ফেলে বীরদর্পে এগিয়ে চলেছে দেশের সরকারী কর্মচারীরা। এই তথ্য বিদেশ থেকে পাওয়া যায়নি। সুইস ব্যাংকের মতো ব্যাংক যেখানে টাকা রাখতে পছন্দ করেন দেশের ধনী ব্যক্তিরা, তারা তো মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কখনোই জানায় না তাদের ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা রাখার খতিয়ান। বিদেশে টাকা পাচারে সরকারী কর্মচারীই বেশি- এমন শিরোনামে জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়েই এই চমক লাগানো সংবাদটি বেরিয়েছে। অল্পবিস্তর খোঁজখবর সাপেক্ষেই এই খবর বেরিয়ে এসেছে। আরও জোরালোভাবে সক্রিয় হলে সামনের দিনগুলোয় টাকা পাচার সংক্রান্ত পিলে চমকানো আরও খবর যে দেশের মানুষ জানতে পারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। টাকা পাচার করে বিদেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তোলার সংস্কৃতি বেশ চালু। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার হিসাবেও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় ভারত, ভুটান ও মালদ্বীপের চেয়ে কম। এশীয় পরিসরে এ স্থান অনেক অনেক নিচে। বিশ্বপরিসরেও তাই। তবে দেশ থেকে অর্থ পাচার এবং অন্য দেশে সহায়-সম্পত্তি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা ধারে-কাছের সব দেশের চেয়ে এগিয়ে। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে কেউ কি টাকা নিয়ে যান? এজন্য যে টাকা লেগে থাকে তার পুরোটাই পাচার হয় বলে ধারণা করা যায়। সেকেন্ড হোমের জন্য কী পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ জানা কঠিন। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম কর্মসূচীর আওতায় সম্প্রতি আরও ৪ হাজার বাংলাদেশী আবেদন করেছেন। ৮ বছর আগে সেকেন্ড হোমের এই প্রকল্প করার পর ইতোমধ্যে ৬০ হাজার বিদেশী সেখানে বাড়িঘর কিনে ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়েছেন, স্থায়ীভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। মালয়েশীয় সরকার টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এমন কি ইউরোপ আমেরিকার অনেকেই সেকেন্ড হোম হিসাবে মালয়েশিয়াকে বেছে নিয়েছেন। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গোপনে কানাডার টরোন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশীদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যাই বেশি হবে। কিন্তু যে তথ্য পেয়েছি তাতে অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন।’ মন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিদেশে যদি কেউ বৈধভাবে টাকা নেয় তাহলে কোন আপত্তি নেই। তবে অবৈধভাবে পাচার করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দেশবাসী মনে করে সরকারী কর্মচারীদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় ও সঞ্চয়ের যদি বড় ধরনের ব্যবধান রয়ে যায় তবে অবশ্যই এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলো পাবলিক সার্ভেন্ট বা দেশবাসীর সেবক। এই সেবার অন্তরালে যদি পকেট ভারি হয় তবে সেটি যে অন্যায্য তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। তাই দুর্নীতি যে শ্রেণীপেশার মানুষই করুক না কেন তাকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো জরুরী। দেশের অর্থ ও সম্পদ যারা বিদেশে পাচার করে তারা কখনোই দেশের মিত্র হতে পারে না। তারা এ দেশে জন্মগ্রহণ করলেও তারা দেশের কুসন্তান। তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
×