ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ হন ১১ বীর মুক্তিযোদ্ধা

গোয়ালমারী ও জামালকান্দি যুদ্ধ দিবস আজ

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২০ নভেম্বর ২০২০

গোয়ালমারী ও জামালকান্দি যুদ্ধ দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি, ১৯ নবেম্বর ॥ ২০ নবেম্বর দাউদকান্দির গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ দিবস। এই দিনে যুদ্ধে শহীদ হন ১১ মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২০ নবেম্বর ছিল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ভোর হয় হয় অবস্থা। মসজিদ থেকে মোয়াজ্জিনের ফজরের আযানের ধ্বনি আসছে। কেউ ঘুমের ঘোরে অচেতন আবার কেউবা তৈরি হচ্ছে ফজর নামাজ আদায় করতে। ঠিক এমনি সময়ে দাউদকান্দি উপজেলার গোয়ালমারী-জামালকান্দি এলাকা হানাদার পাক বাহিনীর মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। গোয়ালমারীতে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। পাক সেনাদের মর্টার এবং রাইফেলের গুলির আওয়াজ শুনেই মুক্তিযোদ্ধারাও শুরু করে পাল্টা আক্রমণ। শুরু হয় উভয় পক্ষের সম্মুখ লড়াই। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোয়ালমারী বাজার এবং জামালকান্দি এলাকা। ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত একটানা ১৫ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। দাউদকান্দি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য পশ্চিম দিকের কালীর বাজার এবং মোলাকান্দি এলাকা দিয়ে এগিয়ে আসেন মতলবের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল অদুদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরাট বাহিনী। দাউদকান্দি এবং মতলবের মুক্তিযোদ্ধাগণ পাক হানাদার বাহিনী উত্তরদিকে পিছু হটে তাদের দাউদকান্দি সদরস্থ ডাক বাংলো ক্যাম্পে ফিরে যেতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষদিকে উত্তর দিক থেকেও ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধারা। কেউ বলেন এ যুদ্ধে ৭০ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। পরদিন সকালে জামালকান্দি, লামছড়ি, দৌলদ্দি, কালাইরকান্দি, ডুনি নছরুদ্দি ও গোয়ালমারী এলাকায় ধানের মাঠ, খাল বিল এবং ডোবা নালায় পাক সেনাদের মৃতদেহ ভেসে উঠে। এদিকে এ যুদ্ধে শহীদ হন সুন্দলপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন এবং রফারদিয়া গ্রামের মোস্তাক আহমেদ। এছাড়া শহীদ হন জামালকান্দি গ্রামের আব্দুর রহমান সরকার, সামছুন্নাহার ও তার কন্যা রেজিয়া খাতুন, সাইদুর রহমান ও আছিয়া খাতুন। কামাইরকান্দি গ্রামের গিয়াসউদ্দিন, সোনাকান্দা গ্রামের শহীদ উলাহ, রফারদিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম এবং গোয়ালমারী বাজারের ইয়াসমীন পাগলী। এই দিনটির কথা স্মরণ হলে এখনও এলাকাবাসীর গা শিউরে উঠে। সাবেক মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে এই যুদ্ধে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন তারা হলেন শহীদ রুহুল আমীন, শহীদ মোস্তাক আহমেদ, ওহাব সরকার, ফজলু সরকার, আব্দুল কুদ্দুস সরকার, খোরশেদ আলম আবুল হোসেন, কে.এম.আই খলিল, হুমায়ুন কবির, আবুল বাশার, শাহজাহান মিয়া, মতলবের আব্দুল অদুদসহ আরও অনেকেই। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে এবার দাউদকান্দি মুক্তিযোদ্ধাগণ গোয়ালমারী বাজারে মিলাদ মাহফিল ও স্মরণ সভার আয়োজন করছেন।
×