ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আপীল বিভাগের রায়

স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাবাস

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৯ নভেম্বর ২০২০

স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাবাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যৌতুকের দাবিতে শরীরে কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে সাতক্ষীরার ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে আপীল বিভাগ। অন্যদিকে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছে আদালত। বুধবার আপীল বিভাগ ও বিচারিক আদালত এ আদেশগুলো প্রদান করে। স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে সাতক্ষীরার ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে আপীল বিভাগ। বুধবার সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও এ্যাডভোকেট এ বি এম বায়জিদ। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, দণ্ডবিধির ৪৫ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত ১১ নবেম্বর ইমাদুলের জেল আপীল শুনানি করে মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিল সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। পরে একই মামলার নিয়মিত আপীলের শুনানির জন্য গত রবিবার ১৫ নবেম্বর এই রায় প্রত্যাহার (রিকল) করেছিল আপীল বিভাগ। একইসঙ্গে এ মামলায় পুনরায় আপীল শুনানির জন্য ১৭ নবেম্বর দিন ধার্য করা হয়। সে অনুযায়ী শুনানি শেষ করে বুধবার রায় ঘোষণা করে আপীল বিভাগ। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৯ জুলাই ইমাদুলের স্ত্রী রেশমা খাতুনকে নির্যাতন করে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর রেশমাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই বছর ২৯ জুলাই সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেশমার মৃত্যু হয়। এর আগেই ২১ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মৃত্যুর আগে জবানবন্দী দেন রেশমা। তবে নির্যাতন ও আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় ওই দিনই ১৯ জুলাই রেশমার স্বামী ইমাদুল, শ্বশুর শহিদুল সরদার, শাশুড়ি মোছাঃ ছবি বিবি ও দেবর রাজু আহমদকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন রেশমার বাবা আব্দুর রাজ্জাক। এরপর তদন্ত শেষে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সেখানকার পুলিশ। বিচার শেষে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ২০০৮ সালের ১১ আগস্ট এক রায়ে ইমাদুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অপর তিন আসামিকে খালাস দেয়া হয়। এরপর ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয় ডেথ রেফারেন্স। একইসঙ্গে আপীল করে কারাবন্দী ইমাদুল। হাইকোর্টে আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় প্রদান করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে ইমাদুল। এ আপীলের ওপর শুনানি শেষে আপীল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে। সেই রায় প্রত্যাহার (রিকল) করার পর পুনরায় শুনানি শেষে বুধবার নির্ধারিত দিনে রায় ঘোষণা করে আপীল বিভাগ। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ২২ ডিসেম্বর ॥ গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছে আদালত। বুধবার মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এ জন্য তার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া সময়ের আবেদন করেন। ঢাকা-৩ বিশেষ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক নজরুল ইসলাম মামলার শুনানি মুলতবি রেখে নতুন এ দিন ধার্য করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী চার দলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্তি করা হয় জরুরী ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ছয়জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
×