ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

জেগে উঠছে বিশ্ব ক্রিকেট!

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১৮ নভেম্বর ২০২০

জেগে উঠছে বিশ্ব ক্রিকেট!

গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে সৌরভ গাঙ্গুলীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আইপিএল কি যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে? উত্তরে ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘জীবনের চেয়ে খেলা বড় নয়। এই মহূর্তে ক্রিকেটের কথা ভাবতে পারছি না।’ মহামারী করোনায় গোটা বিশ্বই যখন বেসামাল, তখন আসলে বিনোদনের কথা চিন্তা করা কঠিন। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ সত্য, জীবন থেমে থাকে না। এত সংক্রমণ, এত মৃত্যুর মধ্য দিয়েও তাই এগিয়ে চলেছে বিশ্ব, এটাই সভ্যতা, এটাই বাস্তবতা। কোয়ারেন্টাইন, বায়ো সুরক্ষা, কঠোর সব নিয়ম-কানুন সঙ্গী করে মাঠে ফিরেছে ক্রিকেট। যেখানে বড় সাহসটা দেখিয়েছে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। করোনাকালে গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমন্ত্রণ জানায় ইংলিশরা, এরপর আতিথ্য দেয় পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াকে। ভারতে বিরূপ পরিস্থিতির কারণে মার্চের আইপিএল পিছিয়ে সদ্যই আরব আমিরাতে সফলভাবে আয়োজন করে সৌরভের প্রশাসন (বিসিসিআই)। ইংল্যান্ডের সাফল্য আসলে বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট সংগঠনগুলোকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। একে একে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্টি ক্রিকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, পাকিস্তানের ঘরোয়া লিস্ট-এ টুর্নামেন্ট, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড নারীদের আন্তর্জাতিক সিরিজ। আত্মবিশ্বাসের পালে এবার বাড়তি হওয়া দিয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। কারণ এটি ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট হলেও বিশ্বের অন্যতম বড় টি২০ টুর্নামেন্ট। বিশ্বজুড়ে সব দেশের সব বড় তারকা যেখানে অংশ নিয়েছে। মরুর দেশ আরব আমিরাতের তিন ভেন্যু দুবাই, শারজাহ ও আবুধাবীতে প্রায় আড়াই মাসব্যাপী উৎসব সফলভাবেই সমাপ্ত হয়। অত্যন্ত বায়ো-সুরক্ষিত পরিবেশে এত এত ক্রিকেটার, তবু এতটুকো দুঃসংবাদ আসেনি। গ্যালারিতে দর্শক ছিল না। তবে মাঠের ক্রিকেট ছিল বেশ জমজমাট। প্রথমার্ধে রুদ্ধশ্বাস সব ম্যাচ উপহার দেয় ফ্র্যঞ্চাইজিগুলো। ফাইনালে দিল্লী ক্যাপিটালসকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখে রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ঘরের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে সফলভাবে দুটি সিরিজ (ওয়ানডে ও টি২০) সিরিজ আয়োজন করেছে পাকিস্তান। এরপর অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) বাকি আংশ (প্লে-অফ ও ফাইনাল)। অনেক টালবাহানার পর টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হলে নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া ওয়ানডে সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে এ মাসের শেষ সপ্তাহে আরও বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপ। বিশ্বজুড়ে তিন-তিনটি আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয় সিরিজ শুরুর অপেক্ষায়। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে গেছে ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আছে নিউজিল্যান্ডে। ক’দিনের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকায় উড়ে যাওয়ার কথা ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের। ছয় দলের তিনটি দ্বৈরথই শুরু হবে আগামী ২৭ নবেম্বর। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন টি২০ ও সমান ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ড সফরে তিনটি টি২০ ও দুই টেস্টের সিরিজে অংশ নেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে করোনাকালে আইপিএলের পর সবচেয়ে আলোচিত সিরিজটা খেলতে যাচ্ছে ভারত। সফরে স্বাগতিক অসিদের সঙ্গে তিন ওয়ানডে, তিন টি২০ ও চার টেস্টের ‘বোর্ডার-গাভাস্কার’ ট্রফির সিরিজে অংশ নেবে বিরাট কোহলির দল। এ বছর টি২০ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল অস্ট্রেলিয়া। করোনার কারণে সেটি স্থগিত হলেও ভারতের সঙ্গে ঠিকই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলছে অসিরা। করোনাকালে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে দর্শকশূন্য গ্যালারি এবং কঠোর সব নিয়মকানুন। যেমন কোভিড-১৯ রিপ্লেসমেন্ট। বছর দেড়েক আগে ক্রিকেটে কনকাসন সাবস্টিটিউট শুরু হয়। অর্থাৎ কোন ক্রিকেটারের যদি মাথায় আঘাত লাগে, তাহলে চলতি ম্যাচের মধ্যেই তার বদলি নেয়া যাবে। তার সঙ্গে এখন শুরু হয়েছে কোভিড রিপ্লেসমেন্ট। অর্থাৎ যদি টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন কোন ক্রিকেটারের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়, তাহলে তার বদলে অন্য ক্রিকেটারকে খেলতে দেয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আলোচনা আছে বলে নিষিদ্ধের বিষয়টিও। আগে বোলারদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল এই লালা ও ঘাম। বলের একদিকের শাইন বজায় রাখা, যাতে সুইং ও রিভার্স সুইং হয়, তার জন্য লালা ও ঘামকেই ব্যবহার করতেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু নতুন নিয়মে বলা, বলে লালা কিংবা ঘাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে নজর রাখবেন আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি। যদি কাউকে লালা মাখাতে দেখা যায়, তাহলে ওয়ার্নিং দেয়া হবে। দুটি ওয়ার্নিং হলে বিপক্ষ দল ৫ রান পেনাল্টি হিসেবে পাবে। লালা লাগাতে দেখা গেলে সেই বলে ফের খেলা শুরু হওয়ার আগে তা ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। তবে টাওয়েল, রুমাল, বা ট্রাউজার- কাপড়ের ব্যবহার করে আগের মতোই বলের শাইন বজায় রাখা যেতে পারে। এছাড়া আগে কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হলে সাধারণত যে দুই দল খেলছে, তার বাইরের কোন দেশের আম্পায়ারকে নিযুক্ত করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। বাইরের আম্পায়ারকে আনা মানে তাঁর ঝুঁকি বাড়ানো। তাই এখন যে দেশে সিরিজ হচ্ছে, সেই দেশের আম্পায়াররাই ম্যাচ পরিচালনা করছেন। এটা চলবে পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত। করোনার কারণে যুক্ত হয়েছে একটি অতিরিক্ত ডিআরএস। যেহেতু বাইরের আম্পায়ার নয়, ঘরোয়া আম্পায়ার দিয়েই ম্যাচ পরিচালনা করা হচ্ছে, তাই তাদের অভিজ্ঞতা কম থাকায় অতিরিক্ত ডিআরএস-এর অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আগে প্রতিটি দল প্রতিটি ইনিংসে দুটি ডিআরএস নিতে পারতেন। এখন সেটি তিনটি করা হয়েছে।
×