ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ১৮ নভেম্বর ২০২০

দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ প্রথম ম্যাচে জিতেই আভাস মিলেছিল সিরিজ জয়ের। মঙ্গলবার নেপালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে সেটাই করে দেখাল ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা ফ্রেন্ডলি সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচটি বেশ গতিশীল ছিল। উভয় দল বেশ কটি আক্রমণ শাণালেও সিংহভাগ আক্রমণেরই কোন ধার ছিল না। নেপাল জিততে না পারলেও পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের চেয়ে তারাই বেশি ভাল খেলেছে। তাদেরই আধিপত্য ছিল তুলনামূলকভাবে প্রতিপক্ষ দলের চেয়ে বেশি। ৪-৪-২ ফর্মেশনে বাংলাদেশ খেলা শুরু করলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে তারা রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে। যার ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেও নেপাল পারেনি। নেপালের সঙ্গে ২২ বারের মোকাবেলায় ১৪টিতেই জয় বাংলাদেশের। হার ৫ ম্যাচে। বাকি ৩ ম্যাচ ড্র। মঙ্গলবার বাংলাদেশ দল খেলতে নামে তাদের কোচ জেমি ডেকে ছাড়াই। কোভিড টেস্টে পজিটিভ হন তিনি। তার জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন সহকারী কোচ স্টুয়ার্ট ওয়াটকিস। ম্যাচের ২৩ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে জীবন নেপালের ডি-বক্সের কাছকাছি এসে পাস দেন সতীর্থ ফরোয়ার্ড সুমন রেজাকে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঘুরে গিয়ে বাঁ পায়ে গোলমুখে সুমনের শটটি নেপালের গোলপোস্টের সামান্য ওপর দিয়ে গেলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আক্ষেপে পোড়েন দর্শকরা। ৩১ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে সাদউদ্দিন একক প্রচেষ্টায় নেপালের ডি-বক্সের কাছে এসে পাস দেন জীবনকে। জীবন ক্রস ফেলেন বক্সে। সুমন রেজার দুর্বল গড়ানো শটটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরে ফেলেন নেপালের গোলরক্ষক-অধিনায়ক কিরণ লিম্বু। ম্যাচের ৫১ মিনিট নিজেদের অর্ধ থেকে একক প্রচেষ্টায় দ্রুতগতিতে বল নিয়ে ওপরে ওঠেন ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। বক্সের কাছ থেকে তার নেয়া শট লক্ষভ্রষ্ট হয়। ৫৩ মিনিটে কর্নার পায় নেপাল। গুরুংয়ের উড়ন্ত কর্নার বক্সের মধ্যে পড়লেও নেপালের কোন খেলোয়াড় পায়ে লাগাতে পারেননি। ৫৬ মিনিটে ত্রিশিংয়ের ক্রসে নেপালের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লাগলেও তপু ফিরিয়ে দিলে এ যাত্রায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ৫৯ মিনিটে নাবীব নেওয়াজ জীবনের থ্রু পাস খুঁজে নেয় সুফিলকে। তিনি একজনকে কাটিয়ে মাইনাস করে বল দেন ইয়াসিন খানকে। কিন্তু এ ডিফেন্ডারের দুর্বল শট নেপাল গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়। ৬২ মিনিটে দুটি বদল হয় বাংলাদেশ দলের। ডিফেন্ডার মানিক মোল্লার জায়গায় মিডফিল্ডার বিপলু এবং মিডফিল্ডার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পরিবর্তে সোহেল রানাকে নামান কোচ। ৮০ মিনিটে কর্নার পায় নেপাল। আকি বিস্তার কর্নারে বিশ্বনাথ ঘোষ দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন। ৯০ মিনিট সেট পিস পায় নেপাল। রঞ্জিত ধিমালের মাপা ফ্রি কিক লাফিয়ে ওঠে হেডের মাধ্যমে ফেরান তপু বর্মণ। বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ইনজুরি সময়ে (৯০+১ মিনিটে) গোল মিস করে নেপাল। সতীর্থের ক্রস থেকে শ্রেষ্ঠার হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। দৌড়ে এসে ফেরান তপু বর্মণ। শেষ পর্যন্ত কোন দল গোল করতে না পারায় ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে উভয় দল। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দর্শকরা মাঠে ঢুকে জামালের সঙ্গে সেলফি ॥ এরকম দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায় মেসি, রোনাল্ডো, নেইমারের বেলায়। তারা ক্লাব বা জাতীয় দলে খেলছেন, হঠাৎই মাঠে ঢুকে পড়েছে দর্শক। পছন্দের তারকা ফুটবলারকে খুঁজে নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া, পায়ে ধরে সম্মান জানানো ... আরও কত কি। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-নেপাল ফিফা প্রীতি ম্যাচের ৭৩ মিনিটের সময় এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো। উত্তর গ্যালারি থেকে নেমে হাসিব নামের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর দর্শক পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেক ঘুরে এসে মাঠের কর্নারের একপ্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই দর্শক দৌড়ে চলে যান বাংলাদেশ দলের দলপতি জামাল ভুঁইয়ার কাছে। তাকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান জামাল। স্মার্ট দর্শক দেরি না করে ঝটপট পকেট থেকে মোবাইল বের করে জামালের সঙ্গে সেলফি তোলেন। জামালও কোন আপত্তি করেননি। হাসিমুখেই ছবি তোলেন। কিন্তু বাদ সাধে বেরসিক পুলিশ। হাসিবকে আটক করে স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেই দর্শকের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল পুরো বিষয়টি তিনি দারুণ উপভোগ করছেন। তবে কথা হচ্ছে এভাবে সেলফি তুলে জামাল নিজেই তো এখন করোনার ঝুঁকিতে পড়ে গেলেন। আতশবাজির বিচ্ছুরণেও ভরেনি মন ॥ খেলা শেষ হতেই প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে আতশবাজির আয়োজন করা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। বর্ণিল আতশবাজির বিচ্ছুরণে স্টেডিয়ামে আগত ১০ হাজার দর্শক আনন্দিত হয়েছেন ঠিকই। তাদের মন ভরেনি। কারণ বাংলাদেশ দল যে তেমন ভাল খেলেনি। জেতেওনি। নেগেটিভ ধিমালের পজিটিভ খেলা ॥ ঢাকায় আসার আগেই কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন নেপালের সাত ফুটবলার। ঢাকায় এসে করোনায় আক্রান্ত হন নেপালের ডিফেন্ডার রঞ্জিত ধিমাল। অভিজ্ঞ এই খেলোয়াড়ের সার্ভিস না পেয়ে নেপাল তাদের প্রথম ম্যাচে হেরে যায়। গতকালকের ম্যাচের আগে ধিমাল করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ হন। দ্বিতীয় ম্যাচে নেগেটিভ ধিমাল ‘পজিটিভ’ খেলা খেলে সবার দৃষ্টি কাড়েন। তার দল না জিতলেও হারেনি। রানা মূল স্কোয়াডে ॥ আশরাফুল ইসলাম রানা। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। গত দুই বছর ধরে তিনিই ছিলেন এক নম্বর গোলরক্ষক। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ফুটবল সিরিজের চূড়ান্ত স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ে যান রানা। তার জায়গায় খেলেন আনিসুর রহমান জিকো। সেটা ছিল জিকোর অভিষেক ম্যাচ। এদিকে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে চোটের কারণে ছিটকে যান অপর গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। ফলে বাদ পড়া রানাকে আবারও স্কোয়াডে ডাকা হয়। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার নেপালের বিরুদ্ধে রানাকে প্রথম একাদশেও খেলানো হয়। এবার কপাল পোড়ে জিকোর। মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি ॥ প্রথম ম্যাচে ৮ হাজারের পরিবর্তে গ্যালারিতে এসেছিল ১০ হজারেরও বেশি দর্শক। করোনাকালীন সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শকদের মাঠে ঢোকানোর কথা। শুক্রবার নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গ্যালারিতে প্রবেশ করেছিলেন দর্শক। এরজন্য আয়োজক বাফুফেরও দায় কম নয়। এরপরই করোনায় আক্রান্ত হন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। মঙ্গলবারও দেখা যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাস্থ্যবিধি কেউই মানছেন না। গ্যালারিতে আবারও ১০ হাজারেরও বেশি দর্শক। গোল চিহ্নিত জায়গায় না বসে গায়ে গায়ে ঘেঁষে বসেছেন দর্শকরা। অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। শুধু গ্যালারি কেন প্রেসবক্সেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।
×