স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিনব কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসংখ্য তরুণীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে ভিকটিমের মোবাইলেই গোপনে ভিডিও করত মোহাম্মদ ইয়াসিন রাতুল। কৌশলে ভিকটিমের মোবাইল নিয়ে সটকে পড়ত। এরপর ভিকটিমের মোবাইলের ভিডিও ও ফেসবুক আইডি দখলে নিয়ে চালাতেন ব্ল্যাকমেলিং। এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকা থেকে রাতুলকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণা-ব্ল্যাকমেলে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ও ১০টি সিম কার্ড জব্দ হয়। যার মধ্যে ব্ল্যাকমেলিংয়ে ব্যবহৃত চারটি ফেক ফেসবুক আইডি ও নয়টি জি-মেইল এ্যাকাউন্ট পাওযা যায়। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রাতুলের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, প্রথমে কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করত রাতুল। এরপর সেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য ভুক্তভোগীদের মোবাইলে ধারণ করে তা নিয়ে সটকে পড়ত। মোবাইল বিক্রির আগে ভুক্তভোগীর ভিডিও কন্টেন্ট এবং ফেসবুক আইডি নিজের দখলে রাখত রাতুল। সেটা দেখিয়ে দিনের পর দিন ওইসব মেয়েকে ব্লাকমেল করত। বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, গ্রেফতার পর রাতুল জিজ্ঞাসাবাদে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার হরিশপুরের আবু তাহেরের ছেলে রাতুল নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঢাকায় চলে আসেন। প্রথমে স্থানীয় এক নেতার বাসায় ‘টি বয়’ হিসেবে কাজ নেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর রিংরোডে একটি শো-রুমে সেলসম্যানের চাকরি নেয়। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম শুরু করেন রাতুল। রাতুলের প্রতারণার শিকার এমন একজন ভুক্তভোগী সিআইডির সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করেন। ওই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ৬ মাস ধরে রাতুলের সঙ্গে তার পরিচয়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় দু’জন দেখা করেছেন। একদিন ওই ভুক্তভোগীকে চাঁদপুর যাওয়ার প্রস্তাব দেন রাতুল। ভুক্তভোগী তার দুই বন্ধুসহ রাতুলের সঙ্গে লঞ্চে চাঁদপুর যান। লঞ্চে থাকাকালীন কোন এক সময়ে কৌশলে মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন রাতুল। লঞ্চ থেকে ঢাকায় নামার পর মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় তার মোবাইল নিয়ে ফোন করার কথা বলে সদরঘাট থেকে সটকে পড়েন রাতুল। ভুক্তভোগী জানান, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও সেদিন রাতুল আর আসেননি। ওই ভুক্তভোগীর মোবাইলে থাকা বিকাশের ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। এছাড়া পর দিন ২৫ হাজার টাকা না দিলে নগ্ন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। ওই ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডিও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন রাতুল। এমনকি ওই ভুক্তভোগীর মা-বাবাকেও ফোন করে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি সাইবার ক্রাইম রাতুলকে গ্রেফতার করে। পরে তার ব্যবহৃত সব মোবাইল জব্দ করে সেখানে অন্তত দশজন ভুক্তভোগীর তথ্য পায়। তাদের সবার নগ্ন ভিডিও রাতুলের মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়। এছাড়া ফেক কল এবং ভুয়া হিস্ট্রির এ্যাপসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা ধরনের টেকনোলজি বিষয়ে রাতুলের মোবাইলে প্রচুর তথ্য পাওয়া গেছে। আরেক ভুক্তভোগী সাইবার ক্রাইম ইউনিটে গ্রেফতারকৃত রাতুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ, ছয় মাস আগে ফেসবুকে একজন ইউটিউবার মেয়ের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে ‘তানজুমা আফরোজ’ নামে এক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে, যা রাতুলেরই তৈরি ভুয়া আইডি। ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন। প্রথমে ফেসবুক চ্যাটিং এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ফোনালাপ হয়। ফোনালাপের সময় বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর সঙ্গে নারী কণ্ঠে কথা বলতেন। পরবর্তীতে তানজুমা আফরোজ নামক ভুয়া আইডির ব্যক্তি রাতুলের সঙ্গে হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিচয় করিয়ে দেয়। এভাবে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ওই আইডিধারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে এই সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়। রাতুল এমন বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস আস্থা অর্জন করেন। রাতুল ভুক্তভোগীদের ভিডিও কলে আসার প্ররোচনা দেয়। পরবর্তী ভিডিও কলে কথা বলার সময় স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখেন। এরপর সে ভুক্তভোগীদের দেখা করার জন্য ডেকে আনেন। প্রথম দেখাতেই ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান। চুরি করা মোবাইল ফোন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে রিসেট দিয়ে মোবাইল বিক্রি করে দেয় রাতুল। বিক্রির আগে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন থেকে ফেসবুক ও জি-মেইল এ্যাকাউন্টে দখল করে নেয় সেই ফেসবুক আইডির সহায়তা নিয়ে পরবর্তী অন্য এক ভুক্তভোগীকে টার্গেট করতেন।
